অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি- অমল ত্রিপুরা

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি, এখনো শ্রমিক-জনতাকে হত্যা ও পাহাড়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর ২০২৪) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ’অব্যাহত শ্রমিক হত্যা ও সাবেক পিসিপি নেতা মিটন চাকমা খুনের বিচারে দাবিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মশাল মিছিল পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

সমাবেশে ছাত্রনেতা অমল ত্রিপুরা বক্তব্যের শুরুতে জেএসএস সন্তুগ্রুপ কর্তৃক হত্যার শিকার হওয়া সাবেক ছাত্র নেতা ইউপিডিএফ সংগঠক মিটন চাকমাকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, মিটন চাকমা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি ছিলেন এবং ইউপিডিএফ’র একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাকে গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সন্তু লারমা নেতৃত্বাধীন জেএসএস’র সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করেছে।
তিনি জুলাই গণঅভ্যূত্থান বিষয়ে বলেন, জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ছিল ফ্যাসিবাদের কবল থেকে এদেশে শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষ ও জাতিসত্তাসমূহের মুক্তি মিলবে, রাষ্ট্র তাদের প্রতি বৈষম্য করবে না। খুন-গুম বন্ধ হবে। শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষ, নারী ও দেশের অন্যান্য জাতিসত্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, তারা নিরাপদ জীবন-যাপন করতে পারবে। কিন্তু ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর গঠিত এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কোন কিছুই হয়নি। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। এখনো শ্রমিক-জনতাকে হত্যা ও পাহাড়ে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

পাহাড়ের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিয়োজিত ও বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত সেনা-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারে দাবি জানান অমল ত্রিপুরা। তিনি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমরা আহ্বান করেছিলাম পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সারাদেশে ন্যায় পার্বত্য চট্টগ্রামেও ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিয়োজিত সেনা-প্রশাসনের কর্মাকর্তাদের প্রত্যাহার করার জন্য। আমরা পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার এখনো পর্যন্ত তা করেনি। ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর (নব্য মুখোশ) সন্ত্রাসীদের সেনাবাহিনী এখনো মদদ দিয়ে যাচ্ছে এবং হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা গত ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি শহরে ২ জন ও দীঘিনালায় ১ জনকে গুলি করে ও নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে। এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনা কর্মকর্তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।

ছাত্র নেতা অমল ত্রিপুরা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করতে সন্তু লারমা ও তার দল জেএসএস’র প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আপনারা পার্বত্য চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকৃত আন্দোলনে নামুন, কর্মসূচি দিন। আমরাও আপনাদের সহযোগিতা করবো। অন্যথায় চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনের নামে জনগণকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে বিভ্রান্ত করবেন না”।
সমাবেশ থেকে তিনি, অব্যাহত শ্রমিক হত্যা বন্ধ করা, পিসিপি’র সাবেক নেতা মিটন চাকমার খুনীদের বিচার, পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা, পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে সৃষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী (নব্য মুখোশ) ভেঙ্গে দিয়ে ইউপিডিএফ ও সহযোগী নেতা-কর্মী হত্যার সাথে জড়িত খুনীদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার এবং হাসিনার আমলে নিয়োজিত ও মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারপূর্বক বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সাধারণ সম্পাদক জবেদ আহম্মেদ জুবেল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনে নেতা নাঈম উদ্দিন ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক তানজিম হায়দার চঞ্চল।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।