আওয়ামী লীগকে তাড়াতে হবে: বদরুদ্দীন উমর
ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৬ জুন ২০২৩

জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, ‘দেশে বর্তমানে আমলা-পুলিশের ওপর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, ফলে এ আওয়ামী লীগের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠূ নির্বাচন হবে না। তাই তাদেরকে তাড়াতে হবে।’
আজ শুক্রবার (১৬ জুন ২০২৩) সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে গণসংস্কৃতি ফ্রন্ট আয়োজিত ‘গণতন্ত্রের সংগ্রাম ও সংবাদপত্র’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এসব কথা বলেন।
আলোচনা সভায় গণসংস্কৃতি ফ্রন্টের সমন্বয়ক ইফতেখার আহমেদের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ লেখক শিবিরের সভাপতি হাসিবুর রহমান। এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর ও প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেন, যেভাবে আমলা-পুলিশের ওপর আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে তাতে কোনোভাবেই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাদের অধীনে কোন নির্বাচন করা যাবে না। তাদেরকে তাড়াতে হবে।’
তিনি বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বিএনপিও বলছে আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। কিন্তু নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, সে কথা কিন্তু বিএনপি বলছে না।’
আসলে নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না, এই আওয়াজ তুলতে হবে। বলতে হবে যে নির্বাচন করতে দেব না। নির্বাচনের আগে থেকে আওয়াজ তুলব, জনগণকে সংগঠিত করব এবং জনগণ নিয়ে সব নির্বাচনী কেন্দ্র ঘেরাও করব, নির্বাচন হতে দেব না— এভাবে বলতে হবে। না হলে নির্বাচন করব না বলে বসে থাকলে আওয়ামী লীগ আগের মতোই নির্বাচন করে বসে যাবে।
আওয়ামী লীগ নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে শেষ করে দিয়েছে মন্তব্য করে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচনের আগেই ১৫৩ জন নির্বাচিত হয়ে গেলো। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে মিটিং ডাকা হলো। সব ডিসি এসপি ছিলেন সেই মিটিংয়ে। সেই মিটিংয়ে এইচ টি ইমামও ছিলেন। তিনি ডিসি এসপিদের কাছে জানতে চাইলেন, নির্বাচন হলে কী হবে? তখন ডিসি-এসপিরা বললো, আওয়ামী লীগ ৩০টা সিটও পাবে না। তখন ইমাম সাহেব বললেন, আপনাদের ধারণা ঠিক, বলুন ২৫০টা সিট পেতে হলে কী করতে হবে? পরে যা করার তাই হয়েছে। সেটা এ দেশের জনগণ জানেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলছে বিরোধীরা নির্বাচন বানচাল করতে চায়, অবশ্যই নির্বাচন বানচাল করতে হবে। তোমরা নির্বাচন বানচাল করোনি ১৯৯৬ সালে? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তোমরা তো আন্দোলন করেছিলে। এমন আন্দোলন হলো যে সেখানে শুধু নির্বাচন বাতিল হলো তা-ই না, বিএনপির মন্ত্রিসভার সবাইকে পদত্যাগ করতে হলো। তারপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলো। এখনো তা-ই করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারা নিজেরা কিছু করে না। আমলাদের মাধ্যমে সবকিছু করছে। আমলাদের মাধ্যমে চুরি-দুর্নীতি করছে। ফলে তাদের ধরার কোনও উপায় নেই। তিনি বাংলাদেশটা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জমিদারী হয়ে গেছে বলেও মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন ‘দেশের গণতন্ত্র এখন পুলিশের হেফাজতে। এখন মিছিল মিটিং করতে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। অনুমতি ছাড়া পুলিশ সভা সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তাহলে এটা কেমন স্বাধীন দেশ পেলাম? কি ধরনের গণতান্ত্রিক দেশ এটা?
যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকা এখন বলছে নির্বাচনে বাধাগ্রস্ত করলে তারা ভিসা দেবে না। এ কথা বলার তাদের জোর হলো এই দেশের চোর-দুর্নীতিবাজ সবাই আমেরিকায় আছে। এই চোর-দুর্নীীতবাজদের সেখানে যেতে হবে।’ তাই আমেরিকা এই ভিসানীতি দিতে পারছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সংবাদপত্র দমন করা হচ্ছে মন্তব্য করে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেন, শুধু সংবাদপত্র নয়, সবকিছুই দমন করা হচ্ছে। পরস্পরের সঙ্গে সব কটিই যুক্ত। আজকে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার যে আন্দোলন, তা জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত, তার থেকে আলাদা করা যাবে না।
সাংবাদিক সাগর-রুনি দম্পতির হত্যাকাণ্ডের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আইনের কাঠামোর মধ্যে খুন-অপকর্ম সব হচ্ছে। সাগর-রুনি হত্যার দশ বছরের বেশি হয়ে গেলো। র্যাব এতদিনেও আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে পারলো না। আদালত আবারও সময় দিচ্ছে। কারা খুন করেছে সবাই জানে। এটা নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে সামান্য চাঞ্চল্য দেখা গেলেও কোনও প্রতিবাদ দেখা গেলো না।’
তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে জনগণের ওপর যে আক্রমণ হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে যদি লড়াই না করা যায়, এই পুরো পরিস্থিতি যদি বোঝা না যায়, তাহলে এই সংগ্রাম করে লাভ হবে না। সেজন্য কিভাবে এ সংগ্রামকে এগিয়ে নেয়া যায় চিন্তা-ভাবনা করতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন