আন্তর্জাতিক নারী দিবসে খাগড়াছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নারী সমাবেশ

0

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ।। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ ৮ মার্চ ২০২১, সোমবার সকালে খাগড়াছড়িতে নারী সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন।

সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলটি জেলা পরিষদ এলাকা ঘুরে পূনরায় স্বনির্ভর বাজারে এসে শেষ হয়।

সকল নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোল, পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের সিদ্ধান্ত মানি না, বাতিল কর’ এই শ্লোগেনে আজ সোমবার সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর বাজারে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে তিন শতাধিক নারী অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্টের ওপর গোপন নিষেধাজ্ঞা তুলে নাও’ ‘বলপিয়ে আদামের ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্ট ধামাচাপা দেওয়ার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের শাস্তি দাও’ নারীর জন্য কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র নিরাপদ কর’ পাড়া-মহল্লায় নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি গড়ে তোল’ ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত প্লেকার্ড প্রদর্শন করা হয়।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন হিল ইউমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী দয়া সোনা চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও চট্টগ্রাম মহানগর শাখার আহ্বায়ক রিতা চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস দেশে দেশে বিভিন্নভাবে পালন করা হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদেরকে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করতে হচ্ছে। কারণ এখানে শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নিপীড়ন জারি রয়েছে। নারী নির্যাতনকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে দিন দিন যে মাত্রায় নারী ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সম্প্রতি খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক কর্তৃক ১০ম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা, রামগড়ে বিজিবি সদস্য দ্বারা গৃহবধুকে ধর্ষণ চেষ্টা, মাটিরাঙ্গার তবলছড়িতে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ও বাঘাইছড়িতে প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণের ঘটনা এবং এ বছরের জানুয়ারিতে বান্দরবানে সেনা সদস্য দ্বারা এক নারীকে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা দেখলে এখানে নারী নির্যাতনের পরিস্থিতি সহজেই অনুমান করা যায়।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত পাহাড়ি নারীদের ওপর যত ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে তার কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি। কল্পনা চাকমার অপহরণকারীরা এখনো রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্টের ওপর জারি রাখা হয়েছে গোপন নিষেধাজ্ঞা। এই বিচারহীনতা ও সরকার-প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় অপরাধীরা পার পেয়ে পূনরায় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে গত বছর খাগড়াছড়ি সদরের বলপিয়ে আদামে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের ঘটনা। এ ঘটনায় যারা জড়িত তারা আগেও ধর্ষণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে প্রশাসনই জানিয়েছে।

বক্তারা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সকল প্রকার নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। নারীর নিরাপত্তা ও ইজ্জ্বত রক্ষার জন্য প্রতিরোধ লড়াই ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। পাড়া, মহল্লায় নারী নির্যাতন বিরোধী প্রতিরোধ কমিটি করতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বক্তারা সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাহাড়ে পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পের জায়গায় ‘আধুনিক পুলিশ’ মোতায়েনের ঘোষণার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, এটা সরকারের পাহাড়িদের অস্তিত্ব ধ্বংসের ষড়যন্ত্র ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা এই সিদ্ধান্ত কখনো মেনে নেব না। অবিলম্বে সরকারকে এই সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনীর সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার ও সেনা শাসনের অবসান ঘটাতে হবে।

মিছিলে বাধা দিচ্ছে পুলিশ

সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ-নির্যাতন বন্ধ করা, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত সংঘটিত নারী ধর্ষণ-নির্যাতন-খুনের বিচার করা, কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌসহ তার গংদের গ্রেফতার ও বিচার, ধর্ষণের মেডিক্যোল রিপোর্টের ওপর গোপন নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রদান এবং অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধ করে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করার দাবি জানান।

সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের চেঙ্গী স্কোয়ারের দিকে যেতে চাইলে স্বনির্ভর পুলিশ পোস্টের সামনে রাস্তায় পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। পরে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিলকারী নারীরা সামনে এগুতে থাকলে জেলা পরিষদ এলাকায় আবার পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। এরপর মিছিলটি সেখান থেকে পূনরায় স্বনির্ভর বাজারে এসে শেষ হয়।

 


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More