আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে খাগড়াছড়িতে পিসিপির আলোচনা সভা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ।। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখা।
আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২২, সোমবার খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এলাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনার সভার ব্যানার স্লোগান ছিল “ ‘শপথবাক্য’ পাঠের নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উগ্রজাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা চলবে,ছাত্রসমাজ রুখে দাঁড়াও, কেবল ৫ ভাষা নয় সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভের অধিকারসহ পিসিপি’র ৫ দফা বাস্তবায়ন কর”।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নরেশ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শান্ত চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি বিপুল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সদস্য ক্যামরন চাকমা প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মহান ভাষা দিবসের আজকের দিনটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ৫২’র ভাষা আন্দোলন পরবর্তী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তি সংগ্রামের রুপ নিয়েছিল। ভাষা শহীদদের সংগ্রামী চেতনাকে ধারন করে নিজ মাতৃভাষাকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরেছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই, যে জাতি নিজের মাতৃভাষা রক্ষার জন্য শাসকের হুংকারকে উপেক্ষা করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষায় রুপ দিয়েছিল তারা সেই স্বাধীন ভূখন্ডে বাংলা ভিন্ন অন্যান্য জাতিসত্তার মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করছে। তাই সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষালাভের জন্য পিসিপি ২০০০ সাল থেকে আন্দোলন করে যাচ্ছে। সংগ্রামের এই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুনিপুরী ও গারো ভাষায় প্রাক-প্রাথমিক স্তরে স্বীকৃতি দিলেও পর্যাপ্ত ও দক্ষ শিক্ষক না থাকায় বইগুলো স্কুলের আলমারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী ভাষা শহীদের চেতনাকে ক্ষুন্ন করে ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যের বিপরীতে বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ‘শপথবাক্য’ পাঠের নামে উগ্রজাতীয়তাবাদী ভাবধারা প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য শাসকগোষ্ঠীর সবক্ষেত্রেই ইসলামিকীকরণ লক্ষ্যণীয়।পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষভাবে নজর দিয়ে অত্যন্ত সুকৌশলে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করে সংখ্যালঘু জাতিগুলোকে আরো সংখ্যালঘু পর্যায়ে ধাবিত করার চক্রান্ত চালানো হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আদব-কায়দা শেখানোর নামে ইসলামের সংস্কৃতিগুলো চিন্তায় মননে ধারণ করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

পিসিপির সাবেক সভাপতি বিপুল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত জনগোষ্ঠীর নিজস্ব সংগ্রামী ঐতিহ্য রয়েছে, রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও বর্ণমালা। কিন্তু সেগুলো পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত না করে উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে। আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকাটা ভাষা শহীদদের চেতনা হলেও উগ্রজাতীয়তার ভাবাদর্শে পুরো দেশে চলছে ‘শেখ মুজিবের স্বপ্ন’ নামে এক কালো স্বপ্ন। একটি জাতিকে তার খাদ্যভ্যাস নিয়ে পরিচিত করা এক নিকৃষ্ট দেশে সংখ্যালঘু জাতিসত্তারা নিজেদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশ শংকিত।
বক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সারাদেশে যখন করোনা মহামারী প্রভাব বিস্তার করেছে সেই সময়ে শিক্ষার কার্যক্রম স্হগিত রেখে মিল-ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশে প্রকৃত শিক্ষার মান নিম্ন দিকে ধাবিত হতে বাধ্য। এর মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যত তরুন প্রজন্মকে মেধাহীন করে মস্তিস্ক বিকৃতি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উগ্রজাতীয়তাবাদী ভাবধারার বিরুদ্ধে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
বক্তারা অবিলম্বে পাহাড় ও সমতলে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষার প্রাথমিক শিক্ষালাভের অধিকারসহ পিসিপির শিক্ষা সংক্রান্ত ৫ দফা বাস্তবায়নে জোর দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন