মাইলস্টোন ট্রাজেডি

‘আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনে বলা কথাই শেষ কথা হবে ভাবতে পারিনি’ : উক্য সাইনের দাদা

0

সমকালের প্রতিবেদন থেকে

নিহত উক্য সাইন। ছবি: সমকাল

উক্য সাইন মারমা ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। তার বাবা উসাই মং মারমার ইচ্ছা ছিল একমাত্র ছেলেকে ক্যাডেটে পড়াবেন। কিন্তু ক্যাডেটে চান্স না পাওয়ায় তাকে এ বছর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন উসাই মং মারমা। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ছেলেকে ঘিরে দেখা সব স্বপ্নই গুঁড়িয়ে গেছে পরিবারটির। দুর্ঘনার দিন (সোমবার) দিবাগত রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় উক্য সাইনের। শোকাহত মা-বাবা একমাত্র ছেলের মরদেহ নিয়ে রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।

সোমবার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান। এতে গুরুতর দগ্ধ অনেক শিক্ষার্থীর মতো উক্য সাইন মারমাকেও রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটায় মারা যায় সে। এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।

উক্য সাইনের বাড়ি রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের কলেজ পাড়ায়। তার বাবা উসাই মং মারমা বাঙ্গালহালিয়া আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর মা তেজিপ্রু মারমা বান্দরবানের রুমা উপজেলার ক্যয়কতেং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা আজ রাতেই উক্য সাইনের মরদেহ নিয়ে বাঙ্গালহালিয়ায় পৌঁছাবেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

আজ সকাল ৯টার দিকে বাঙ্গালহালিয়ার কলেজ পাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে উক্য সাইনের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। বাড়িতে রয়েছেন উক্য সাইনের বয়োবৃদ্ধ দাদা কংহ্লাপ্রু মারমা, দাদি ক্রাতুমা মারমা ও পিসি হ্লামাচিং মারমা। উক্য সাইনকে হারিয়ে কান্না থামছে না তাদের। প্রতিবেশিরাও জড়ো হয়েছেন বাড়িটিতে। উক্য সাইনের হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তারাও।

ঘরে বসে বিলাপ করছিলেন উক্য সাইনের দাদা কংহ্লাপ্রু মারমা। তিনি বলেন, তার নাতি তাকে খুব ভালোবাসত। সে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। উক্য সাইনের পিসি হ্লামাচিং মারমা জানান, মরদেহ নিয়ে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে তার ভাই ও ভাবি ঢাকা থেকে বাঙ্গালহালিয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছেন। বাঙ্গালহালিয়ায় পৌছাতে রাত ৭/৮ টা বাজতে পারে। ভাইয়ের ইচ্ছে ছেলের মরদেহ বাড়িতে একরাত রেখে পরদিন দাহ করার।

তিনি আরো জানান, উক্য সাইন সর্বশেষ সাকরাইন উৎসবে (পহেলা বৈশাখ) বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল। গত আষাঢ়ী পূর্ণিমার দিনে মোবাইল ফোনে উক্য সাইনের সঙ্গে তার কথা হয়েছিল। তার সঙ্গে এটাই শেষ কথা হবে ভাবতে পারিনি। তবে এমনিতে প্রতিদিন উক্য সাইন মা–বাবাকে কল দিত।

তিনি আরো জানান, উক্য সাইন খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল একমাত্র ছেলেকে ক্যাডেট কলেজে পড়াবেন, এজন্য ঢাকার মিরপুরে একটি কোচিং সেন্টারে এক বছর কোচিং করানো হয় উক্য সাইনকে। তবে ক্যাডেটে সপ্তম শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষায় সে উত্তীর্ণ হতে পারেনি। তাই এ বছর তাকে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। সে স্কুলের হোস্টেলে থেকে পড়াশুনা করত।

উক্য সাইন মার্মার বাবা উসাই মং জানান, আগামীকাল বুধবার বাঙালহালিয়ায় নিজ গ্রামে ছেলের দাহক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আত্মীয়-স্বজন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের তিনি উক্য সাইনের দাহক্রিয়ায় অংশ নিয়ে পূণ্যরাশি দান করার আহবান জানিয়েছেন।

বাঙালহালিয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার আদোমং মারমা জানান, মেধাবী ছেলেটির এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত।

সূত্র: সমকাল



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More