ইউপিডিএফের আটক নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে দীঘিনালায় বিক্ষোভ

দীঘিনালা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২৮ আগস্ট ২০২৪
রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আটক ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ বুধবার (২৮ আগস্ট ২০২৪) সকাল সাড়ে ১১ টায় ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের যৌথ উদ্যোগে ‘এক দেশে দুই শাসন মানি না’ শ্লোগানে দীঘিনালার বাঘইছড়ি দুঅর থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাবুছড়া কলেজ পাড়া হয়ে নোয়াপাড়ায় এসে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

সমাবেশে ইউপিডিএফ সংগঠক চন্দন চাকমার সভাপতিত্বে ও সজীব চাকমা সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সদস্য মেনাকি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সদস্য রিকন চাকমা ও ইউপিডিএফ এর সংগঠক জ্ঞান প্রসাদ চাকমা প্রমুখ।
ইউপিডিএফ নেতা চন্দন চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের ওপর চরম অবিচার করা হচ্ছে। সংবিধানে পাহাড়িদের জাতিগত স্বীকৃতি ও অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীসহ সাধারণ লোকদেরও জেলে বন্দী করে রেখেছে। দেশে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বিকালীন সরকার গঠন হলেও পাহাড়ের পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। আগের মতোই সেনা শাসন, সেনা কর্তৃত্ব বহাল রাখা হয়েছে। গতকাল রাঙামাটির জুরাছড়ি থানায় সেনাবাহিনী হামলা চালিয়ে ওসি সহ বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সম্প্রতি সেটলার বাঙালি কর্তৃক আবারো পাহাড়ি নারীর ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। সেটলাররা পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক উস্কানি সৃষ্টির নানা পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। তার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রদানের দাবি জানিয়ে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা একটি রাজনৈতিক সমস্যা। সামরিক শাসন জারি রেখে এ সমস্যার সমাধান হবে না। পার্বত্য চট্গ্রামের জনগণের প্রাণের দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে।

চন্দন চাকমা অবিলম্বে ইউপিডিএফ নেতা আনন্দ প্রকাশ চাকমা ও ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাসহ কারাগারে আটক ইউপিডিএফ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্ত দেয়ার দাবি জানান।
সজীব চাকমা বলেন, গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থাানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর সমতলের মানুষ স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এখনো সেই সেনা শাসনের কবলে রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সমতলে জেল বন্দীদের মুক্তি দেয়া হলেও পাহাড়ে এখনো ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীদের মুক্তি দেওয়া হয়নি। এখানে সেনা শাসন জারি থাকায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেমন খর্ব হচ্ছে, একইভাবে গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করতে গিয়েও নানা বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পর্যন্ত গ্রাফিতি অঙ্কনে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। তাই দেশে প্রকৃত গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পাহাড় থেকে সেনাশাসন তুলে নেয়ার উদ্যোগ নিতে হবে।

অন্যান্য বক্তারা বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা মনে করেছিলাম সমতলের ন্যায় পাহাড়েও একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম হবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং সেনাশাসনের মাধ্যমে নিপীড়ন-নির্যাতন, নারী ধর্ষণসহ নানা ঘটনা ঘটছে। সারাদেশে গ্রাফিতি ও দেয়াল লিখনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারলেও পাহাড়ের শিক্ষার্থীরা তা পারছে না। সেনাবাহিনীর অনুমতি নিয়েই গ্রাফিতি অঙ্কন করতে হচ্ছে। এমনকি গ্রাফিতি অঙ্কন করতে গিয়ে হামলা ও মারধরেরও শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এতেই প্রমাণ হয়, পাহাড়ে এখনো সেনা কর্তৃত্ববাধ জারি রয়েছে। এর অবসান না হলে পাহাড়ে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে না।
তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।