ইউপিডিএফের আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ২৭ বছর

0
ইউপিডিএফ-এর পতাকা।

বিশেষ রিপোর্ট, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫

আজ ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯৮ সালের আজকের এই দিনে ঢাকায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন গণতান্ত্রিক সংগঠন (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণপরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন) এর যৌথ উদ্যোগে এক পার্টি প্রস্তুতি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয় ইউপিডিএফ। গঠনলগ্ন থেকে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দলটি আপোষহীন লড়াই-সংগ্রামের ২৭ বছর পূর্ণ করলো।

শুরু থেকেই শাসকগোষ্ঠীর রোষানলে পড়তে হয় ইউপিডিএফকে। ১৯৯৯ সালের ২২ এপ্রিল খাগড়াছড়িতে হামলা চালিয়ে ইউপিডিএফভূক্ত সংগঠনগুলোর সম্মেলন ভণ্ডুল, একই বছর ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে ইউপিডিএফের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠান বানচাল করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন মোকাবেলা করে অভিষ্ট লক্ষ্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ে অবিচলভাবে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে ইউপিডিএফ।

পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, অন্যায় দমন-পীড়নসহ সকল ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ সব সময় সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। অব্যাহত দমন-পীড়ন, জেল-জুলুম, এ পর্যন্ত প্রায় চার শ’ নেতা-কর্মী-সমর্থক খুন-গুমের শিকার হওয়ার পরও ইউপিডিএফ দমে যায়নি, বরং আন্দোলন আরো জোরদার করতে সক্ষম হয়েছে।

ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত জাতিসত্তাসমূহের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের পাশাপাশি দেশের কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি জনগণসহ সমতলের সকল জাতিসত্তাসমূহের ভাগ্য পরিবর্তনের লড়াইয়েও সমানভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশ্বের সকল নিপীড়িত জনগণের সাথেও ইউপিডিএফ একাত্মতা প্রদর্শন করে থাকে।

দলটি ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি হাসিনা সরকারের আয়োজিত বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন (ডামি নির্বাচন হিসেবে খ্যাত) বয়কট করে পার্বত্য চট্টগ্রামে ২৭টি ভোটকেন্দ্র (খাগড়াছড়ি ১৯ ও রাঙামাটি ৮) শূন্যভোট করার নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। যা ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ইতিহাসে কোথাও এমন দৃষ্টান্ত নেই।

ইউপিডিএফ কেবল সভা-সমাবেশ, মিছিল, অবরোধ ইত্যাদি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, দলটি জনসেবা, জনকল্যাণ ও জনসচেতনতামূলক আর্থ-সামাজিক কার্যক্রমও পরিচালনা করে থাকে। ইউপিডিএফ জনগণের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, খেলাধূলা ও জীবিকার মান উন্নয়নেও সচেষ্ট রয়েছে। পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষার ক্ষেত্রেও দলটি জনসচেতনতামূলক নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে ইউপিডিএফ দেশের অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এতে দলটি বিপুল জনসমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়।

বিগত ২০০৬ সালে জাতীয় কংগ্রেস আয়োজনের মাধ্যমে ইউপিডিএফ ৬ দফা মৌলিক দাবিনামা, ১৬ দফা সম্পুরক দাবিনামা ও ২০ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। তারই ভিত্তিতে ইউপিডিএফ তার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

ইউপিডিএফ’র মৌলিক দাবিনামাগুলো হচ্ছে– ১. পররাষ্ট্র, মূদ্রা, প্রতিরক্ষা ও ভারী শিল্প ব্যতীত রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের সকল বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত একটি আঞ্চলিক সংস্থার নিকট হস্তান্তরিত করার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েম করা; ২. পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরুং, খুমি, চাক, খিয়াং, লুসাই, পাংখো, বম, তনচংগ্যা, সাঁওতাল, গুর্খা, অহোমী ও রাখাইন জাতিসত্তাগুলোকে সংবিধানে স্বীকৃতি প্রদান করা এবং বাংলাদেশে বসবাসরত সকল জাতি ও জাতিসত্তা সমানাধিকার ও সমমর্যাদা ভোগ করবে এই নিশ্চয়তা সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা; ৩. বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু জাতিসত্তাগুলোর জন্য সংরক্ষিত আসনের (মহিলা আসনসহ) বিধান করা ও উক্ত আসনসমূহে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা;  ৪. অপারেশন উত্তরণের নামে বলবৎ সেনাশাসন বন্ধ করে সেনাবাহিনীকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা; ৫. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলারদেরকে জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করা এবং তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সরিয়ে নিয়ে তাদের স্ব স্ব জেলায় অথবা অন্য কোন সমতল জেলায় জীবিকার নিশ্চয়তাসহ সম্মানজনক পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নতুন সেটলার অনুপ্রবেশ ও পুনর্বাসন বন্ধ করা ও ৬. প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থাপনার পূর্ণ অধিকার প্রদান করা।

পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের লড়াই চালিয়ে যেতে ইউপিডিএফ বদ্ধ পরিকর। যতই নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে আসুক না কেন ইউপিডিএফের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কিছুতেই স্তব্ধ করা যাবে না– এমনই প্রত্যয় দলটির নেতা-কর্মীদের।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ইউপিডিএফের দলীয় পতাকা উত্তোলন, অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন, শপথ গ্রহণ, বিপ্লবী সঙ্গীত বাজানো, শিশু র‌্যালি, ক্যাম্প ফায়ার, আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীকে উপলক্ষে দলটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে অনলাইন ভিত্তিক একটি পোস্টার প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‍‍“ইউপিডিএফ-এর নির্দেশিত পথে চলুন, বিজয় অবশ্যম্ভাবী।”

এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ফেস্টুন টাঙানো, রাস্তায় চিকামারা ও তোরণ নির্মাণসহ নানা প্রচার কার্যক্রম চালানো হয়েছে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More