ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি নির্মাণে বাধার নেপথ্যে কে?

0

ঋতুপর্ণা চাকমা। সংগৃহিত ছবি

কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

সাফজয়ী নারী ফুটবলার দলের অন্যতম সদস্য ও দক্ষিণ এশিয়ার সর্বশেষ্ঠ নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা আজ (২২ মার্চ) নিজের ফেসবুক পোস্টে সরকার প্রদত্ত বাড়ি নির্মাণে “কোনো এক মহল” থেকে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

তিনি ফেসবুক পোস্টে অভিযোগ করে লেখেন, … “এতোদিন পর প্রশাসন আমাকে বাড়ি করে দেওয়ার সদয় সম্মতি দিয়েছেন, কিন্তু এর মধ্যে আমি শুনতে পাচ্ছি কোনো এক মহল থেকে বাধা আসতে শুরু করেছে। তাহলে কি আমার ঘাগড়ায় কোন ঠাঁই নেই?

এখন আমার অনুশোচনা হচ্ছে, ২০১৭ সাল থেকে আমি দেশের জন্য খেলতেছি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতেছি, নিজ জেলার মানুষের কাছে মূল্যায়নটা পাইলাম কই?”

তিনি লেখায় যদি ভুল ত্রুটি থাকে ক্ষমা দুষ্টিতে দেখার জন্যও অনুরোধ করেছেন।

ঋতুপর্ণা চাকমার ফেসবুক পোস্ট

জানা গেছে, ঋতুপর্ণা চাকমার জন্য বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যে ঘাগড়া বাজার এলাকার বড়ইছড়ি রাস্তার পাশে রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসন ১৫ শতক খাস জায়গা নির্বাচন করে৷ জায়গাটি ঋতুর নিজেরও পছন্দ হয়েছে বলে ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেছেন।

কিন্তু সেখানে বাড়ি নির্মাণে একটি মহল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঋতুপর্ণার ফেসবুক পোস্টের পর সামাজিক মাধ্যমসহ এলাকার জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কে সেই ‘মহল’? কী তার ক্ষমতার উৎস? তার খুঁটির জোর কোথায়?

এ বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সেই মহলটি আর কেউ নয়, ঘাগড়া এলাকার রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহলের মদদপুষ্ট এবং জেএসএস (সন্তু)-এর স্থানীয় নেতা সুভাষ চাকমাই ঋতুপর্ণা চাকমার বাড়ি নির্মাণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।

উক্ত খাস জায়গাটি একসময় “ঘাগড়া উপজাতীয় কাঠব্যবসায়ী সমিতির” দখলে ছিল। সুভাষ চাকমা সে সময় ওই বিশেষ মহল ও জেএসএস’র ক্ষমতা অপব্যবহার করে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতির পদও বাগিয়ে নিয়েছিলেন।

সেই একই ক্ষমতা ব্যবহার করে জায়গাটিতে বাড়ি নির্মাণ না করার জন্য সুভাষ চাকমা ঋতুপর্ণা চাকমাকে গতকাল ফোনে বলেছিলেন বলে তাঁর (ঋতুর) এক শুভাকাঙ্ক্ষী জানিয়েছেন।

তবে কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির অন্যান্য সদস্যরা ঋতুপর্ণা চাকমার জন্য জায়গাটি সানন্দে ছেড়ে দিতে রাজী হয়েছেন বলে জানা গেছে।

একমাত্র অর্থলোভী সুভাষ চাকমা ঋতুপর্ণা চাকমার কাছ থেকে কিছু অর্থ পেতে এ বাধা প্রদান করছেন বলে অনেকে মনে করছেন।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঘাগড়া এলাকার এক বিশিষ্ট ব্যক্তি বলেন, “সুভাষ যা করছেন তার জন্য আমরা ঘাগড়াবাসী হিসেবে লজ্জিত ও দুঃখিত।”

উল্লেখ্য, সুভাষ চাকমা জেএসএস-এর সভাপতি সন্তু লারমা ও সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদারের আস্থাভাজন কর্মী হিসেবে পরিচিত। ঊষাতন তালুকদার সংসদ সদস্য থাকাকালীন এমপি প্রতিনিধি হিসেবে সুভাষ চাকমা বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতেন। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহলের সাথেও রয়েছে তার ঘনিষ্টতা। মূলত এসব খুঁটির জোরে সুভাষ চাকমা ঘাগড়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। এই ক্ষমতার প্রভাবে তিনি ঘাগড়া বাজার ও রাজস্থলী বাজারের ইজারা/টোল আদায়ের কাজটিও নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন বলে জানা গেছে। 

শুধু তাই নয়, সুভাষ চাকমা বর্তমানে নব্যমুখোশ বাহিনীর সর্দারেও পরিণত হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার ও রাষ্ট্রীয় বিশেষ মহলটির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নব্যমুখোশ বাহিনীর সদস্য মিল্টন তঞ্চঙ্গ্যা, কনক চাকমা, কাল্যা চাকমা, বালি চাকমা, ভাগ্য চন্দ্র চাকমা, এবঙ চাকমা, সুমন বৈদ্যসহ বেশ কয়েকজন ঘাগড়া বাজারে অবস্থান করে বাজারে আসা লোকজনকে প্রতিনিয়ত হেনস্তা ও হয়রানি করে থাকে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন। এছাড়া এই নব্যমুখোশ সদস্যরা রাতের আঁধারে বিভিন্ন গ্রামে অভিযান পরিচালনায় রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে সহযোগিতা দিয়ে থাকে বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More