ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নির্দেশে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপ দেয়ার চেষ্টা: রন ত্রিপুরা

0

রন ত্রিপুরা ও তার ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশর্ট।

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ১৯ জুলাই ২০২৫

ওয়াদুদ ভুঁইয়ার নির্দেশেই খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির পড়ুয়া পাহাড়ি স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে গোমর ফাঁস করেছেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পরিচয় দেয়া রন/রানা ত্রিপুরা (Rana Tripura)।

আজ শনিবার (১৯ জুলাই ২০২৫) তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই গোমর ফাঁস করেন। এর আগে (১৭ জুলাই) তিনি “ত্রিপুরা মেয়ের বিষ খাওয়া ও বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগের বিষয়ে আমাদের কিছু কথা” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশ করে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে আজ ক্ষমা চেয়ে এই পোস্টটি করেছেন।

বিভিন্ন জনের ফেসবুক আইডি থেকে প্রকাশ করা ওই লেখার মাধ্যমে তারা ভাইবোনছড়ায় বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী দ্বারা ত্রিপুরা স্কুলছাত্রীকে (৮ম শ্রেণির ছাত্রী) দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি ভুক্তভোগী মেয়েটির চরিত্র হননসহ মেয়েটির নামও তারা প্রকাশ করেন, যা দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য।

ওই লেখায় তারা উক্ত ধর্ষণ ঘটনাকে আড়াল করতে ‘সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা ও আগামি জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রকৃত সত্য ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে বিএনপিকে দায়ী করার ষড়যন্ত্র’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন।

তারা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের নিজেদের দলীয় কর্মী হিসেবে স্বীকার না করলেও প্রথম আলোসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিচয় তুলে ধরা হয়। আর এতেই তাদের আসল চেহারা প্রকাশ হয়ে পড়লে রন ত্রিপুরা আজকে নিজের ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।

আজকের (১৯ জুলাই) ফেসবুক পোস্টে তিনি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির সকল সদস্যের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছেন, …“প্রথমেই বলি, আমার ফেসবুক আইডি থেকে যে পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছে, সেটির ভাষা ও বক্তব্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছেন, এবং আমি তার দায়ভার কাঁধে নিয়েছি—এই উপলব্ধি থেকেই আমি ক্ষমা চাচ্ছি। তবে এটাও আপনাদের জানা উচিত যে, আমি একেবারেই নিজ থেকে, স্বাধীনভাবে কিংবা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে সে পোস্টটি করিনি। বরং আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে, একপ্রকার দাবার গুটির মতো। দলের অভ্যন্তরীণ কিছু রাজনৈতিক কৌশল এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ভেতরের চলমান সংকট নিরসনের লক্ষ্যেই আমাকে দিয়ে ঐ পোস্টটি করানো হয়েছে। আমি একজন ক্ষুদ্র রাজনৈতিক কর্মী মাত্র, যার হাতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নেই—তাই উপরের নির্দেশ মেনে আমাকে সে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

“আমার এই পদক্ষেপটি ছিল নিছক একটি দলীয় কৌশলের অংশ, যেখানে আমাদের জেলার বিএনপি সভাপতি জনাব ওয়াদুদ ভুইয়ার সরাসরি নির্দেশ এবং আমার অভিভাবকতুল্য কাকা Khaniranjan Tripura কথার ভিত্তিতেই আমাকে এগিয়ে যেতে হয়েছে।”…

ধর্ষণের ঘটনাটি যে দলীয় নেতা-কর্মীদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছে তা ইঙ্গিত দিয়ে তিনি তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, “এই প্রেক্ষাপটে, প্রথমেই ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের বর্তমান সভাপতি কমল বিকাশ ত্রিপুরার সঙ্গে আলোচনা করা হয়। এরপর সামাজিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে বসে বিষয়টির একটি সমাধান সূত্র খোঁজা হয়। সেই আলোচনার ফলেই আমরা ভুক্তভোগী পরিবারের সঙ্গে বসে ক্ষতিপূরণ বাবদ এক লক্ষ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।…

 “এদিকে মিডিয়ার সামনে পরিস্থিতি সামাল দিতে এবং জনসাধারণকে আশ্বস্ত করার জন্য, সংশ্লিষ্ট বিএনপির যেসব নেতা-কর্মীর নাম উঠে আসে, তাদেরকে প্রতীকীভাবে গ্রেফতার দেখানো হয়। এটা ছিল জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনার একটি রাজনৈতিক কৌশল, যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়। তবে এটাও সত্য যে, পুরো ঘটনাটির বিচার কিংবা ন্যায়বিচার পাওয়ার পথ কখনও রুদ্ধ করা হয়নি। বরং আইনের কাঠামোর মধ্যেই বিষয়টি যেন সমাধান হয়, সেটাই আমরা চেয়েছি। তবে এই ‘আইনি লড়াইয়ের সুযোগ’ তৈরি করার জন্যই আমাকে দিয়ে এমন একটি পোস্ট করানো হয়, যাতে আসামিদের নির্দিষ্টভাবে শাস্তি না দিয়ে দলীয় পদ্ধতিতে বা কৌশলে পরিস্থিতিকে সামলানো যায়।

“আমার ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, আমি তা পালন করেছি দলের স্বার্থে, নেতৃত্বের নির্দেশে, এবং ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ শান্তি রক্ষার একমাত্র আশায়।”

তিনি স্বীকার করে বলেন যে, “আমি আবারও জোর দিয়ে বলছি—যা কিছু বলা হয়েছে, লেখা হয়েছে বা করা হয়েছে—সবই একটি পূর্ব-পরিকল্পিত দলীয় সিদ্ধান্তের অংশ…। আমি স্বীকার করছি, এ ক্ষেত্রে হয়তো আরও সংবেদনশীল ও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে এবং নির্দেশের ভারে আমি যেটুকু করেছি, তা কেবল দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে, কোনো স্বার্থ বা ষড়যন্ত্রমূলক উদ্দেশ্যে নয়।”

রন ত্রিপুরার ফেসবুক পোস্ট সম্পর্কে মতামত জানতে চাইলে ভাইবোনছড়ার এক স্কুল শিক্ষক সিএইচটি নিউজকে বলেন, যারা তথাকথিত দলীয় শৃঙ্খলার কথা বলে মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে ধর্ষকদের সুরক্ষা দিতে চায়, তারা জাতীয় বেঈমান ছাড়া কিছুই নয়। তাদের মতো দালালদের কারণে সেটেলাররা আমাদের পাহাড়ি নারীদেরকে আমাদের বাড়িতে এসে ধর্ষণ করার সাহস পাচ্ছে।

তিনি মনে করেন যার সামান্যতম আত্ম সম্মানবোধ আছে সে এসব পাহাড়ি স্বার্থ বিরোধী তথাকথিত জাতীয় রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে পারে না।

তার মতে, ভবিষ্যতে যাতে আর ধর্ষণের ঘটনা না ঘটে তার জন্য বড় ধরনের আন্দোলন সংগঠিত করা উচিত। সবার এগিয়ে আসা উচিত। তা না হলে পাহাড়ি নারীদের ওপর ধর্ষণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More