কমলছড়িতে সেটলার হামলার দুই বছর : বিচার হয়নি হামলাকারীদের
সিএইচটি নিউজ ডটকম

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি ।। আজ ২৫ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়িতে পাহাড়িদের উপর সেটলার হামলার দুই বছর পূর্ণ হলো। ২০১৪ সালের এই দিনে পরিকল্পিতভাবে সেটলার বাঙালিরা পাহাড়িদের উপর হামলা চালালে পান্ডক চাকমা ও আনন্দ লাল চাকমা নামে দুজন গ্রামবাসী গুরুতর আহত হন। এছাড়া সেটলার পাহাড়িদের ঘরবাড়ি ও জিনিসপত্রও ভাংচুর করে দেয়। এ ঘটনার পরদিনও (২৬ ফেব্রুয়ারি) সেটলাররা হামলা চালায় বেতছড়ি পাহাড়ি গ্রামে। এতে আহত হয় একই পরিবারের তিন জন আহত হয়।
সবিতা চাকমা নামে এক পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে স্থানীয়রা ওই এলাকার সড়কে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ পালন করছিলো। ঘটনার দিন ২৫ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত বাঙালি ছাত্র পরিষদ নামধারী উগ্রসাম্প্রদায়িক সংগঠনের নেতৃত্বে সেটলাররা খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরে মানববন্ধন শেষে অবরোধ ভেঙে গাড়িযোগে মিছিল সহকারে ভুয়োছড়ি গুচ্ছগ্রামের দিকে যাবার পথে কমলছড়ি এলাকায় পৌঁছলে তারা পাহাড়িদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এরপর সেটলার বাঙালিরা কমলছড়ি গ্রামে ঢুকে পাহাড়িদের উপর হামলা চালায়। এসময় তারা পান্ডক চাকমাকে মাথায় কুপিয়ে ও আনন্দ লাল চাকমাকে লাঠিসোটা দিয়ে আঘাত করে। এতে দু’জনই গুরুতর আহত হয়। সেটলাররা যখন হামলা চালাচ্ছিল তখন ভূয়োছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনা সদস্যরা ছুটে আসলেও তারা সেটলারদের বাধা না দিয়ে তাদের পক্ষ নেয়। এতে সেটলাররা হামলা চালাতে আরো উৎসাহিত হয়। পরে খাগড়াছড়ি সাংসদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে গেলে সেদিনের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। প্রশাসন কমলছড়ি এলাকায় জারি করে ১৪৪ ধারা।

কিন্তু এর পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারি এক রাখাল বালক হারিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করে সেটলার বাঙালিরা আবারো বেতছড়ি ও বড়নাল এলাকায় পাহাড়িদের উপর হামলা চালায়। তারা বৌদ্ধ বিহার এবং ঘরবাড়ি ভাংচুর করে। এদিনও সেনাবাহিনী সেটলারদের সহযোগিতা দেয়। সেদিন এ হামলায় একই পরিবারের তিন জন- রমা দেবী চাকমা, বিপ্লব জ্যোতি চাকমা ও মামনি চাকমা আহত হয়। এর মধ্যে রমা দেবী চাকমা ছিলেন ৭০ বয়সী বৃদ্ধা।
এ হামলার আজ দুই বছর পূর্ণ হলেও হামলাকারী সেটলারদের বিরুদ্ধে কোন আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়নি সবিতা চাকমার হত্যাকারীদেরও।
কমলছড়িতে সেটলারদের এই হামলা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে ধারাবাহিক হামলারই অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত এসব সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় হামলার তালিকা দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সরকার তথা রাষ্ট্র এর দায় কিছুতেই এড়াতে পারে না।
——————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।