কল্পনা চাকমা অপহরণ দিবসে দীঘিনালায় আলোচনা সভা

0

দীঘিনালা প্রতিনিধি ।। পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৫ বছর উপলক্ষে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ ১২ জুন ২০২১, শনিবার সকাল ১০টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের দীঘিনালা উপজেলা শাখার উদ্যোগে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

‘চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচার কর’ এই দাবিতে এবং ‘পাহাড়ে নারীর নিরাপত্তা রক্ষার্থে ও ভূমি বেদখল প্রতিরোধের লড়াইয়ে HWF- এর সাথে যুক্ত হোন’ এই আহ্বানে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় রানজুনি চাকমার সঞ্চালনায় ও ভালেদি চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র দীঘিনালা উপজেলা সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক সমর চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলার সভাপতি রিটেন চাকমা ও এসপিনা চাকমা প্রমুখ।

সভা শুরুতে কল্পনা চাকমা অপহরণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহীদ সমর বিজয়, সুকেশ, মনতোষ, রূপন চাকমাসহ এ যাবত অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন সেসকল শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সভায় ইউপিডিএফ সমন্বয়ক মিল্টন চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন দেশের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা পুর্বে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনা ছিল সরকারের পরিকল্পিত একটি ঘটনা। যার কারণে এই অপহরণ ঘটনার আজ ২৫ বছর পূর্ণ হলেও সরকার কল্পনা চাকমার সন্ধান না দিয়ে তদন্তের নামে প্রহসনের মাধ্যমে চিহ্নিত অপহরণকারীদের রক্ষা করেই চলেছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মামলার তদন্ত ও শুনানির নামে কালক্ষেপন করে কল্পনা চাকমার পরিবারকে হয়রানি করা হচ্ছে। অথচ অপহরণকারীদের গ্রেফতার করে তদন্ত করা হলে এতদিন কল্পনার সন্ধান পাওয়া যেতো।  

তিনি আরো বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণকারীরা পার পেয়ে যাওয়ায় ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল ইউপিডিএফ’র অন্যতম নেতা মাইকেল চাকমাকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তুলে নিয়ে গুম করা হয়। তার হুদিসও আমরা এখনো পাইনি। এই ঘটনায়ও সরকার জড়িত রয়েছে।

পিসিপি নেতা সমর চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা একটা প্রতিবাদের নাম, সংগ্রামী নাম। কল্পনা চাকমা শাসকগোষ্ঠীর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী সমাজকে উজ্জীবিত করতে ভূমিকা পালন করেছেন। সেজন্যই রাষ্ট্রীয় মদদে রাতের আঁধারে নিজ বাড়ি থেকে কল্পনাকে চাকমাকে অপহরণ করা হয়।

তিনি মামলার তদন্ত ও শুনানীর নামে কালক্ষেপন না করে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান।

এইচডব্লিউএফ নেত্রী এন্টি চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের বিচার ও অপরাধীদের শাস্তি না হওয়ায় বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। যার ফলে নারী নির্যাতন, ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি কল্পনা চাকমার উত্তরসূরী হয়ে শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্র বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এবং কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি করেন।

যুব ফোরাম নেতা রিটেন চাকমা কল্পনার চিহ্নিত অপহরণকারী সেনা কর্মকর্তা লে. ফেরদৌস গংদের বিচার না হওয়ার পর্যন্ত রাজপথে অবিচল থাকার আহ্বান জানান এবং সারাদেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এসপিনা চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের নারী সমাজকে রাজনৈতিকভাবে আরো সচেতন ও সজাগ হতে হবে। নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More