কাউখালীতে আবারও বাড়ি বাড়ি সেনা তল্লাশি ও তল্লাশির চেষ্টা, নগদ টাকা লুটের অভিযোগ!

সেনাদের তল্লাশির শিকার হওয়া সুমন কৃষ্ণ চাকমার বাড়ি।
কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ের ৪ নং ওয়ার্ডের রাঙ্গীপাড়া গ্রামে অন্তত ২টি বাড়িতে সেনাবাহিনীর তল্লাশি এবং অপর ২টি বাড়িতে তল্লাশির চেষ্টা করা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া একটি বাড়িতে তল্লাশির সময় নগদ টাকাও লুটে নেয়ার অভিযোগও উঠেছে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে।
আজ রবিবার (২৯ জুন ২০২৫) বেলা ১.৩০ টার দিকে এসব ঘটনা ঘটে।
যাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে তারা হলেন- সুমন কৃষ্ণ চাকমা, পিতা: মৃত- ভূবন বিকাশ চাকমা, গ্রাম- রাঙ্গীপাড়া ও অমর বিকাশ চাকমা (চিগোনা), পিতা: মৃত কুলেন্দ্র চাকমা, গ্রাম-ঘিলাছড়ি।
বাড়ি তল্লাশির শিকার সুমন কৃষ্ণ চাকমা পেশায় একজন ক্ষুদ্র দোকানদার। তিনি বলেন, “আমার ঘরে কেন তল্লাশি করা হলো জানি না। ওয়াকিটকি সেটে তথ্যদাতারা আমার বাড়ির অবস্থানটি জানাচ্ছিলেন। সেনারা বাড়ির সব জিনিসপত্র ওলট পালট করেও অবৈধ কোন কিছু পায়নি। বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত বীজভান্ডারের কলসিটি ভেঙ্গে দিয়েছে। তখন দোকানে ছিলাম। শুধুমাত্র আমাদের প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া ৭ বছরের বাচ্চাটি বাড়িতে ছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় সে ভয় পেয়েছে। আমি নিজেও হতবিহ্বল হয়েছি। আমার সাথে কেন এমন করা হলো। মনে হচ্ছিলো তারা আমাকে আটক করে নিয়ে যাবে। ভয়ে ভয়ে আছি।”

সেনারা সুমন কৃষ্ণ চাকমার বাড়ি তল্লাশির সময় বিভিন্ন বীজ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত কলসিটিও ভেঙে দেয়।
অমর বিকাশ চাকমা একজন কাঠ ব্যবসায়ী। সেনারা তার বাড়িতে তল্লাশিকালে সকল জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়। এসময় বাড়িতে কোন লোকজন ছিলেন না। সেনা সদস্যরা তার বাড়িতে রাখা ৬৫ হাজার টাকাও লুটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
আর যাদের বাড়িতে তল্লাশির চেষ্টা করা হয়েছে তারা হলেন- ১. উজ্জ্বল চাকমা, পিতা: মৃত- বিমল চন্দ্র চাকমা ও ২. সুকুমার চাকমা, পিতা: মৃত- ভুগগালা চাকমা।
এদের মধ্যে উজ্জ্বল চাকমা একজন ব্যবসায়ী। কাউখালী সদরে তার দোকান রয়েছে। গ্রামে তাদের দোকানের কর্মচারী কিলন চাকমাকে উজ্জ্বল চাকমার বাড়ি (বিমল মহাজনের বাড়ি) ইঙ্গিত করে সেনারা বলেন, “ওই বাড়িতে অস্ত্র রয়েছে। তা বের করে দাও। তা না হলে আমরা যদি বাড়ি হতে অস্ত্র উদ্ধার করে নিয়ে আসি তবে তোমার কঠিন শাস্তি পেতে হবে।”
তৎক্ষনাৎ কিলন চাকমাও তাদেরকে জোর দিয়ে বলেন, “আপনারা যদি বাড়ি হতে কোন অস্ত্র পেয়ে থাকেন তবে আমিও যেকোন শাস্তি মাথা পেতে নিবো। তবে অন্যায়ভাবে যাতে বাড়িতে অস্ত্র রেখে সাজানো না হয়। আমিও আপনাদের সাথে বাড়ি তল্লা<রি সময় উপস্থিত থাকবো।”
কিলনের কথার দৃঢ়তায় সেনা সদস্যরা আর উজ্জ্বল চাকমার বাড়ি তল্লাশি করেনি।

অভিযানে নিয়োজিত সেনা সদস্যদের গ্রামের ভিতর ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে।
অপর এক ঘটনায় সেনারা তল্লাশির জন্য সুকুমার চাকমার বাড়ি বেশ কিছুক্ষণ ঘেরাও করে রাখে। সে সময় তিনি ও তার পরিবারের কোন সদস্য বাড়িতে ছিলেন না। তখন তারা তাদের পুরনো খামার বাড়ি দূরছড়িতে কৃষি কাজের জন্য প্রস্তুতি নিতে গিয়েছিলেন।
সুকুমার চাকমা এলাকার বিশিষ্ট মুরুব্বী এবং রাঙ্গীপাড়া গ্রামের গ্রাম প্রধান।
এদিকে, গত ২৪ জুন হতে কোজইছড়ি মোনপাড়ায় অবস্থান নেয়া সেনাবাহিনীর সদস্যরাও এখন উক্ত এলাকায় অবস্থান করছে। সেনা হয়রানির ভয়ে উক্ত গ্রামবাসীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, গত ২৪ জুন কাউখালীর কোজইছড়ি মোনপাড়া থেকে আটক মনসুখ চাকমা ও তার ছেলে সিন্ধু কুমার চাকমাকে গতকাল (২৮ জুন) ছেড়ে দেয়া হলেও তাদের সাথে আটক অন্তর চাকমাকে এখনও ছেড়ে দেয়া হয়নি। এছাড়া গত ২৬ জুন ঘিলাছড়ি গ্রাম থেকে আটক আতুইশি মারমাকেও এখনো ছেড়ে দেয়া হয়নি। তাদেরকে থানা হেফাজতে দেয়ার খবরও পাওয়া যায়নি। তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।
এ রিপোর্ট লেখার আগ পর্যন্ত (সন্ধ্যা ৬:৩০টা) রাঙ্গীপাড়া গ্রামে আসা ঐ সেনা দলটি (৩৬ জন) ঘিলাছড়ি গ্রামে ৩ গ্রুপে বিভক্ত হয়ে অবস্থান করছিল বলে জানা গেছে।
সেনারা আরো অনেকের বাড়ি তল্লাশি করতে পারে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
এদিকে, নিরীহ মানুষের ঘর-বাড়ি তল্লাশি, আটক এবং হয়রানির ঘটনায় পুরো কাউখালী এলাকায় সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জনমনে বেড়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠাও।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।