কাউখালীতে কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের প্রতীকী ফাঁসি প্রদান

0
ঢোল বাজিয়ে কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের প্রতীকী ফাঁসি দেওয়া হয়।

কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৭ জুন ২০২৪

রাঙামাটির কাউখালীতে নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস, ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার সালেহ আহম্মেদ ও নূরুল হককে প্রতীকী ফাঁসি প্রদান করা হয়েছে।

আজ শুক্রবার (৭ জুন ২০২৪) বেলা ২টার সময় কাউখালীর বেতবুনিয়া এলাকায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন, (এইচডব্লিউএফ), পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে উক্ত প্রতীকী ফাঁসি দেওয়া হয়।

অপহরণের ২৮ বছর: কল্পনা চাকমার সন্ধান চাই, অপহরণকারীদে সাজা দাও;  দায়মুক্তির রায় মানি না, মানব না” শ্লোগানে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ


সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন’র কাউখালী উপজেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মাউচিং মার্মা।

হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য দয়া সোনা চাকমার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের সংগঠক থুইক্যচিং মারমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙামাটি জেলা সভাপতি রিনিসা চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কাউখালি উপজেলা শাখার সভাপতি থুইনুমং মার্মা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা।

ইউপিডিএফ সংগঠক থুইক্যচিং মার্মা বলেন, কল্পনা চাকমার বড় ভাই অপহরণকারী লে. ফেরদৌস, সালেহ আহম্মেদ ও নূরুল হকদের চিহ্নিত করার পরেও রাষ্ট্র এখনো কল্পনা অপহরণকারীদের বিচার ও শাস্তি দিতে পারেনি। তাই আজ পার্বত্য চট্টগ্রামের জণগণ জনতার আদালতের মাধ্যমে অপহরণকারী গংদের লাঠিপেটা করে প্রতীকী ফাঁসি দিচ্ছে।

প্রতিবাদ সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ।


তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সেখানে কথিত ব্যাংক  ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বম জনগোষ্ঠী উপর নির্মম নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। গত ২৩ মে যৌথ অভিযানের নামে সেনাবাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে ভানথাংপুই বম (১৩) নামে ৫ম শ্রেণীর এক শিশু হত্যার শিকার হয়েছে। সেখানে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও ফ্যাসিবাদী সরকার বম জনগোষ্ঠির নিরাপত্তায় কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

রিনিসা চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সালে ১২ জুন কল্পনা চাকমাকে সেনাবাহিনীর কমান্ডার লে. ফেরদৌস গংদের কর্তৃক অপহরণ করা হয়েছে। তৎসময়ে কল্পনা চাকমা হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। এ অপহরণের সাক্ষী ছিলেন তার দুই বড় ভাই। কিন্তু দীর্ঘ ২৮ বছরেও এই রাষ্ট্র কল্পনা চাকমার সন্ধান দিতে পারেনি, অপহরণকারীদের সাজা দিতে পারেনি।

ছাত্র নেতা সোহেল চাকমা বলেন, একটা রাষ্ট্রের সেনাবাহিনী যখন কোন কাজে নামে তখন তাদেরকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে নামতে হয়। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে তা দেখা যায় না। এখানকার সেনাবাহিনী কাজ করে চট্টগ্রামের জিওসি নির্দেশে। তার নির্দেশ অনুসারের পাহাড়ে নিয়োজিত সেনাবাহিনী পাহাড়ি জনগণের উপর অন্যায় ধরপাকড়, নিপীড়ন-নির্যাতন চালায়। 

তিনি সেনাবাহিনীর নিপীড়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, তারা শুধু কল্পনা চাকমাকে অপহরণের ঘটনা ঘটায়নি। পার্বত্য চট্টগ্রমে অহরহ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে সেনাবাহিনী। ২০১৮ সালে রাঙামাটির বিলাইছড়িতে রাতের আঁধারে সেনাবাহিনী বাড়ি তল্লাশির নামে দুই মার্মা কিশোরী বোনকে একজনকে ধর্ষণ এবং আরেকজনকে শ্লীলতাহানি করে। এর আগে ২০১৭ সালে নান্যচর কলেজ শিক্ষার্থী রমেল চাকমাকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন করে হত্যার পর মরদেহ পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে ফেলে। গত বছর ১১ ডিসেম্বর ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে বিপুল চাকমা সহ চার তরুণ নেতাদের হত্যা করা হয়।

সমাবেশে জনতার আদালতের দেয়া কল্পনা অপহরণকারীদের মৃত্যুদণ্ডাদেশের রায় পড়ে শোনান হিল উইমেন্স ফেডাারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা।

এরপর ঢোল বাজিয়ে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস, ভিডিপি প্লাটুন কমান্ডার সালেহ আহম্মেদ ও নুরুল হকের কুশপুত্তলিকায় জনতা লাথি মেরে ও জুতাপেটা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে তাদেরকে রশিতে ঝুলিয়ে প্রতীকী ফাঁসি কার্যকর করা হয়। 

অপহরণকারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করে তাদের কুশপুত্তলিকায় জুতাপেটা করা হচ্ছে।


ফাঁসি কার্যকরের পর অপরাধীদের কুশপুত্তলিকা গাছে ঝুলিয়ে রেখে দেওয়া হয়।  

শেষে সমাবেশের সভাপতি মাউচিং মার্মা জনতার আদালতের এই রায় ও অপরাধীদের প্রতীকী ফাঁসির ঘটনাকে গর্বের এবং এটি রাষ্ট্রীয় আদালতকে এই রায় অনুসরণ করে কল্পনা চাকমা’র অপহরণকারীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি প্রদানের দাবি জানিয়ে সমাাবেশ সমাপ্ত করেন।

প্রতীকী ফাঁসির পর অপহরণকারীদের কুশপুত্তলিকা রশি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখে দেয়া হয়েছে। 


This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More