কাউখালীতে ‘জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় ছাত্র-যুব সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা

কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট ২০২৪
রাঙামাটির কাউখালীতে পার্বত্য চট্টগ্রামে “পাক আগ্রাসনের” ৭৭ বছর উপলক্ষে ‘জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় ছাত্র-যুব সমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২০ আগস্ট ২০২৪) দুপুর ২টায় “ব্রিটিশদের রুখে দিয়েছে রুণু খাঁ রা, ’৪৭-এ পাকিস্তান মেনে নেয়নি স্নেহবাবুরা, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে হটাতে লড়েছি আমরাও” এই শ্লোগানে ‘জাতীয় গৌরব অনুসন্ধানে নতুন প্রজন্ম ২০২৪’ এর ব্যানারে আলোচনা সভাটি আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী এবং এলাকার যুবকরা অংশগ্রহণ করেন।
সভা শুরুতে রুণু খাঁ, স্নেহ কুমার চাকমাসহ ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত সকল বীর শহীদের সম্মানে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আলোড়ন চাকমার সঞ্চালনায় ও আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক দীপায়ন চাকমার সভাপতিত্বে সংহতি জানিয়ে আলোচনা করেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর সংগঠক রিপন চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসাধারণ সম্পাদক নিকন চাকমা ও কাউখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী রুপনা চাকমা।
আলোচকরা বলেন, আজকের দিনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য এক অভিশপ্ত দিন। আজ থেকে ৭৭ বছর আগে ১৯৪৭ সালে আজকের এই দিনে (২০ আগস্ট) ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে সবেমাত্র মুক্তি পাওয়া পাকিস্তান সরকার বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যবাহিনী দিয়ে সশস্ত্র আগ্রাসন চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দখল করে নিয়েছিল। এর পরবর্তী সময় থেকেই পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের ওপর শোষণ, নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এক সময় স্বাধীন ও স্বশাসিত রাজ্য ছিল। ১৮৬০ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা ‘জেলায়’ রূপান্তরের মাধ্যমে স্বাধীন রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের নামে পার্বত্য চট্টগ্রামকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেয়। এর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের জণগণের সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা ধুলিস্যাৎ করে দেয়া হয়।

আলোচকরা স্নেহ কুমার চাকমার কথা স্মরণ করে বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে দেশভাগের কয়েকদিন পূর্বে ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট সকালে জনসমিতির নেতা স্নেহ কুমার চাকমার নেতৃত্বে রাঙামাটি ডিসি অফিস ও কোতোয়ালি থানায় ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। অন্যদিকে বান্দরবানেও বোমাং রাজ পরিবারের নেতৃত্বে বার্মার পতাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু বেলুচ রেজিমেন্ট সশস্ত্র শক্তির জোরে ভারতীয় পতাকা এবং বার্মার পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামকে দখল করে নেয়। সে সময় সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব না থাকার কারণে পূর্বপুরুষদের মতো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেননি পাহাড়ি নেতারা।
তারা বলেন, ’৭১ সালে পাকিস্তানের কবল থেকে মুক্ত হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠিত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে মুক্ত হতে পারেনি। চাপিয়ে দেয়া হয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ। সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে দমন-পীড়ন বৃদ্ধি করা হয়। একের পর এক ষড়যন্ত্র কায়েম করে সেটলার অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাহাড়িদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের মাধ্যমে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা চালানো হয়। যা আজো অব্যাহত রয়েছে। গত ১৬ বছরের শাসনে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে এক কারাগারে পরিণত করেছে।
আলোচকরা বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে সংগঠিত গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এর ফলে হাসিনাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পতনের এই আন্দোলনে পাহাড়ের ছাত্র সমাজও অংশ নিয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলনে ফলে দেশের সমতলের মানুষ স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো আগের মতো সেনা শাসন ও দমনমূলক ১১ নির্দেশনা বহাল রেখে অন্যায় দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। তাই এর বিরুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ, যুব সমাজকে সোচ্চার হতে হবে, রুখে দাঁড়াতে হবে।
আলোচকবৃন্দ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন ও বৈষম্য দূরীকরণে সেনাশাসন প্রত্যাহারের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক শাসন কায়েম করা এবং পাহাড়ি জনগণের ন্যায় অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।