কাউখালীতে ভূমি দস্যু মো. পারভেজ’র শাস্তি ও বিমলা চাকমার প্রতি ন্যায়বিচারের দাবি

0

কাউখালী প্রতিনিধি ।। রাঙামাটির কাউখালীতে সেটলার ভূমি দস্যু মো. পারেভেজ’র শাস্তি ও ভূক্তভোগী বিমলা চাকমার প্রতি ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন কাউখালী এলাকাবাসী।

গতকাল ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ কাউখালী জুম্ম কল্যাণ পরিষদ’র নামে প্রকাশিত একটি লিফলেটে এ দাবি জানানো হয় (লিফলেটটি নীচে সংযুক্ত)।

উক্ত লিফলেটে বলা হয়, ইদানিং কিছু সেটলার বাঙালি নিরীহ জুম্মদের জমি কেড়ে নেয়ার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। গত ২৫ জানুয়ারি কাউখালির ঘিলাছড়ি গ্রামের মো. পারভেজ নামে জনৈক সেটলার বাঙালি ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত রাঙিপাড়া থেকে সেটলার শ্রমিক নিয়ে এসে বিমলা চাকমার নামীয় জমি থেকে জোর করে সেগুন গাছ কেটে নিয়ে যায়। তাকে বাধা দেওয়া হলে সে জমির মালিককে বিভিন্ন হুমকি ধামকি দেয়। জমির মালিক পরে প্রশাসন ও ঘাগড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. নাজিম উদ্দীনের কাছে এ ব্যাপারে নালিশ করলেও কোন ফল হয়নি। ফলে ভূমি দস্যু পারভেজ আরো বেশী সাহসী হয়ে ১৯ ও ২১ ফেব্রয়ারি পুনরায় বিমলা চাকমার সেগুন বাগানে অবৈধভাবে প্রবেশ করে আরও গাছ কেটে নিয়ে যায়। ২১ ফেব্রয়ারী এভাবে গাছ চুরি করার সময় জমির মালিক পুলিশের সহযোগিতায় বাগানে গিয়ে পারভেজকে বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ ভূমি দস্যু পারভেজ ও তার সহযোগীদের হাতেনাতে ধরার পরও কাউকে গ্রেফতার করেনি। উল্টো পারভেজ পুলিশের সামনে জমির মালিককে বিভিন্ন ভাষায় গালিগালাজ করে ও হুমকি দেয়। ভূমি দস্যু পারভেজ তিন বার অবৈধ প্রবেশ করে বিমলা চাকমার আনুমানিক ১৫ লক্ষ টাকার সম্পদ নষ্ট করে দিয়েছে।

এতে বলা হয়, গাছ চুরির সময় নাতে নাতে ধরা পড়ার পরও পুলিশ কর্তৃক পারভেজকে গ্রেফতার না করায় আমরা অবাক হয়েছি। আসলে এখানে ভূমি দস্যু সেটলার পারভেজের প্রতি প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব অত্যন্ত স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। গত ২২ শে ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে জমির মালিকের শ্বশুর অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক বাবু নলিন্দ বিকাশ চাকমাকে (পিতা মৃত হরমনি চাকমা সাং হারাঙ্গী রিফিউজি পাড়া, কচুখালি মৌজা) কাউখালি সেনা ক্যাম্পে ডাকা হয়। সেখানে তার মতো একজন বয়োজ্যেষ্ঠ ও সম্মানীত মুরুব্বীকে অপদস্থ করা হয় ও হুমকি দেয়া হয়। ডিজিএফআই-এর সদস্য মো: তোফাজ্জল তাকে চড়া গলায় জিজ্ঞেস করে ‘কেন গতকাল জমি বিষয়ে বিক্ষোভ মিছিল করিয়েছ?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি সে বিষয়ে কিছু জানি না, কারণ আমি সারাদিন রাঙামাটিতে ছিলাম।’ এরপর তোফাজ্জল বলে, ‘তোমার ছেলে এসব করিয়েছে। তাকে যেখানে নাগাল পাই সেখানে মেরে ফেলবো।’

প্রশাসনের ও ডিজিএফআইয়ের পক্ষপাতমূলক আচরণ তুলে ধরে লিফলেটে বলা হয়, যেখানে অপরাধী, চোর, ভূমি দস্যু মো. পারভেজ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা, সেখানে নিরীহ জমির মালিককে ডেকে শাসানো ও হুমকি দেয়া হয়েছে। এর চেয়ে জঘন্য অন্যায় ও অবিচার আর কি হতে পারে? এখানে চোর পারভেজের শাস্তি হলো না, শাস্তি হলো ভূমি মালিকের। এই হলো কাউখালির প্রশাসনের অবস্থা! এই হলো আমাদের জুম্মদের প্রতি প্রশাসনের আচরণ! এ অন্যায় ও অবিচার কোন বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমরাও কখনই তা মেনে নেব না। জমির মালিক যদি ভয়ে হজমও করে, তারপরও আমরা মেনে নেব না।

লিফলেটে অভিযোগ করে বলা হয়, শুধু বিমলা চাকমার জমি নয়। আরও অনেকের জমিও সেটলাররা বেদখল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। ঘিলাছড়ির (পারভেজের গ্রাম) বাঙালি পাড়ার মো. সাগর ও মো. শহীদুলও চাইউমা মারমা ও চুইহ্লাউ মারমার জমি বেদখল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ভূমি বেদখেলর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয় ‘আমাদের কাউখালিবাসীর প্রতি জুলুম, অন্যায়, অত্যাচার ও সেটলার কর্তৃক ভূমি বেদখল নতুন ঘটনা নয়। ১৯৮০ সালে ২৫ মার্চ কলমপতিতে গণহত্যার সময় শত শত জুম্মকে হত্যা করা হয় ও জুম্মদেরকে নিজ গ্রাম থেকে উৎখাত করা হয়। এভাবে গণহত্যার মাধ্যমে নাইল্যাছড়ি, মাঝেরপাড়া, মাগ্যামাছড়া, গোদারপাড়, সুগারমিলসহ কাউখালি সেনা ক্যাম্পের পাশের রাঙ্গীপাড়া ও কাচখালির জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে। শুধু সেখানে নয়, ঘাগড়ার বেতছড়ি, ঘিলাছড়িসহ আরও অনেক এলাকায় সেটলাররা জুম্মদের জমি জোরপূর্বক দখল করেছে।

কাজেই বহু আগে আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। পেছনে যাওয়ার আর কোন জায়গা নেই। মনে রাখবেন, আমরা জুম্মরা এক সময় চট্টগ্রাম ছিলাম। সেখান থেকে সরে আসতে আসতে আজ পর্বতের গুহায় ঢুকে পড়েছি। আমাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই, হারানোরও আর কিছুই নেই। তাই এখন যে জমি অবশিষ্ট আছে সে জমি যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে এবং বেদখল হওয়া জমি উদ্ধার করতে সংগ্রাম চালাতে হবে। কোন হুমকি ধামকিতে আর আমাদের দমানো যাবে না। রক্ত দিয়ে হলেও জমি রক্ষা করতে হবে। তা না হলে আমাদের ভবিষ্যত বংশধরদের বাঁচার কোন ঠাঁই থাকবে না’।

লিফলেটে এলাকার জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলা হয়,

ক) অন্যায়কারীদের হুমকিতে ভীত হবেন না। নিজের জমি ও অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করুন। একমাত্র সংগ্রাম করেই জমি ও অধিকার রক্ষা করা যায়। আর আপনি যতই ভীত হবেন, ততবেশী তারা ভীতি প্রদর্শন করবে ও ততবেশী তারা আপনার জমি কেড়ে নেয়ার জন্য দুঃসাহসী হয়ে উঠবে। কিন্তু প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করলে তারা পিছু হটবে, যেভাবে বাধা দেওয়ার পর ভূমি দস্যু পারভেজ পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে।

খ) কারোর জমি বেদখলের চেষ্টা করা হলে এলাকার সবাই একজোট হয়ে প্রতিরোধ করুন। ভূমি দস্যু সেটলাররা আজ আপনার প্রতিবেশীর জমি কেড়ে নিলে কাল তারা আপনার জমি কেড়ে নেবে। কাজেই মনে করবেন না যে, আপনার জমি চিরকাল নিরাপদ থাকবে।

গ) সেটলারদের কাছে জমি বিক্রি, বন্ধক বা অন্যকোনভাবে হস্তান্তর করবেন না। ভূমি হলো একটি পরিবার ও একটি জাতির প্রাণস্বরূপ। প্রত্যেক ব্যক্তি বা প্রাণী যেভাবে নিজের প্রাণ রক্ষা করে, ঠিক সেভাবে ভূমিকে রক্ষা করুন।

প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এতে বলা হয়,

১) কাউখালিতে ভূমি বেদখল বন্ধ করুন।

২) ভুমি দস্যু পারভেজকে গ্রেফতার করে আইন মোতাবেক শাস্তি দিয়ে পুনর্বার বিমলা চাকমার জমিতে অবৈধ প্রবেশ থেকে তাকে নিবৃত্ত করুন।

৩) বিমলা চাকমাকে ক্ষতিপূরণ প্রদানে ভূমি দস্যু পারভেজকে বাধ্য করুন। মিটমাটের নামে প্রহসন করবেন না।

৪) ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিককে হুমকি প্রদান ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবেন না। নলিন্দ বিকাশ চাকমাকে  অন্যায়ভাবে হুমকি দেয়ার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

নিচে লিফলেটটি সংযুক্ত করা হলো:


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More