কাউখালীতে সেনাবাহিনীর চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেনি এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা

0



কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

সেনা অপারেশনের নামে অব্যাহত হয়রানি, নিপীড়ন ও স্কুল ভবন-মাঠ দখল করে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত করার প্রতিবাদে সেনাবাহিনীর চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেনি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের লেভাপাড়া, হারাঙ্গি রিফিউজি পাড়া, নোয়া আদাম, মোন পাড়া, কজইছড়ি বাদলছড়ি, চেলাছড়া, বাকছড়ি, হারাঙ্গি এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর ২০২৫ রাঙামাটি সেনা জোন থেকে মেজর মিনহাজুল আবেদীন-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর একটি চিকিৎসক দল হারাঙ্গি পাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করতে যায়। সেনারা বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য মাইকিং করে। কিন্তু এলাকার সাধারণ জনগণ ও শিক্ষার্থীরা তাদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে যাননি।

তবে সেনারা হারাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, একজন সহকারী শিক্ষক ও আরেকজন নারীকে অনেকটা জোর করে চিকিৎসা সেবা নিতে বাধ্য করে। এর মধ্যে উক্ত নারী ক্ষেতের কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে সেনাদের একটি দল জোর করে তাকে ঔষধ নিতে বাধ্য করে। পরে সেনারা এই তিন জনের ছবি মিডিয়ায় প্রকাশ করে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা প্রচার করেছে। আদতে এলাকার সাধারণ জনগণ তাদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেননি, প্রত্যাখ্যান করেছেন।

উক্ত নারী বলেন, আমি ক্ষেতের কাজ শেষে বাড়ি ফিরছি। এ সময় সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাকে কিছু ঔষধ দিয়ে ছবি তুলে নিয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দশম শ্রেণির এক ছাত্রী বলেন, গত ৫ নভেম্বর আমি সকালে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় সেনা সদস্যরা হঠাৎ নোয়া আদাম-কজইছড়ি খালের মুখে কয়েক রাউন্ড ফায়ার করে। এতে আমি খুব ভয় পাই। ভয়ে আর প্রাইভেট পড়তে যাইনি, বাড়িতে ফিরে যাই। পরে সকাল ৯.৩০টর স্কুলে গিয়ে দেখি সেনারা আমাদের স্কুল মাঠ ও ভবন দখল করে রয়েছে। এরই প্রতিবাদস্বরূপ আমরা আমাদের বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা কেউই সেনাবাহিনীর চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করিনি।

এলাকার এক মুরুব্বী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সেনাবাহিনীর কাজ হচ্ছে ‌‌গরু মেরে জুতা দানের মতো। গত কয়েকদিন আগে তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ বৌদ্ধ বিহার বিনা কারণে তল্লাশি করে ধর্মীয় পরিহানি করেছে। এর জন্য তারা কোন দুঃখ প্রকাশ করেনি। তারপর তারা স্কুল মাঠ, স্কুল ভবন দখল করে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এলাকার সাধারণ জনগণকে অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদের নামে হয়রানি করেছে। শুধু তাই নয়, সেনাবাহিনী প্রায় সময় আমাদের এলাকায় অভিযানের নমে ঘরবাড়িতে তল্লাশিসহ নানা হয়রানি করে থাাকে। মূলত এসব অন্যায়, অপকর্ম ঢাকতেই তারা লোকদেখানো চিকিৎসা সেবা দিতে হাজির হয়েছে। যার কারণে এলাকার জনগণ তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা সেবা নেয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

উল্লেখ্য, গত ৫ নভেম্বর থেকে একদল সেনা সদস্য হারাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন ও মাঠ দখল করে সামরিক প্রশিক্ষণের কাজ চালায়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশেনার ব্যাঘাত ঘটে। সেনাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হন। এরপর গত ৬ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা ‘সেনা অপারেশনের নামে স্কুলভবন দখল, স্কুল মাঠে সামরিক মহড়া ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More