কাউখালীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক তিন নারীকে মারধর ও হেনস্তার প্রতিবাদে দুই নারী সংগঠনের বিক্ষোভ

0

কাউখালী প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

রাঙামাটির কাউখালীতে সেনাবাহিনী কর্তৃক তিন নারীকে মারধর ও হেনস্তার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, কাউখালী উপজেলা শাখা।

‍আজ শনিবার (৮ মার্চ ২০২৫) বেলা ২টায় “সারাদেশে নারী নির্যাতন বন্ধ কর” স্লোগানে কাউখালীর ডাবুয়া বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বৃন্দাবন রাস্তায় গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কাউখালি উপজেলা শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক প্রান্তিকা চাকমার সঞ্চালনায় ও একই কমিটির সদস্য উমেশিং মার্মার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিশী চাকমা, কাউখালি উপজেলার দপ্তর সম্পাদক ইংকি চাকমা, জনপ্রতিনিধি অংসাজাই মার্মা ও পিসিপি প্রতিনিধি তুজিম চাকমা।

নিশী চাকমা গতকাল তিন গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাশির সময় সেনাবাহিনী কর্তৃক তিন নারীকে মারধর ও হেনস্তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমরা সেনাবাহিনীর  বিরুদ্ধে নয়, তাদের অন্যায়-অত্যাচার ও সেনা শাসনের বিরুদ্ধে। পাহাড়ে সেনাশাসন যতদিন থাকবে ততদিন নারীরা নিরাপদ নয়।

তিনি ২০১৮ সালে বিলাইছড়িতে সেনা সদস্য দ্বারা দুই মারমা বোনকে ধর্ষণ-নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে চাকমা রাণী ইয়েন ইয়েন সেনাবাহিনীর হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। কাপ্তাইয়ের রাইখালিতে নিজ বাড়িতে ছয় জন সেনা জোয়ার কর্তৃক এক এসএসসি পরীক্ষার্থী ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছিল। পাহাড়ের নারীরা যাতে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে না পারে সেজন্য নানা হুমকি-ধমকি ও ধর্ষণ-নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি যতই বাধা-বিপত্তি, হুমকি-ধমকি দেয়া হোক না কেন পাহাড়ের যে কোনো অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে রাজপথে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ চলবে বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

সমাবেশ থেকে তিনি পাহাড়ি নারীদের নিরাপত্তার জন্য সেনাশাসন প্রত্যাহার, তিন নারীকে মারধর ও হেনস্তার সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সেনাবাহিনীর দোসার মুখোশ বাহিনী ভেঙে দিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

ইংকি চাকমা গতকাল কাউখালীতে সেনাবা তিন গ্রামবাসীর ঘরবাড়িতে সেনাবাহিনীর তল্লাশি, ভাঙচুর, লুটপাট এবং তিন নারীকে মারধর ও হেনস্তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনায় জড়িত সেনা ও মুখোশ বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান।

অংচাজাই মার্মা কাউখালির পানছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর তল্লাশি, জিনিপত্র লুটপাট এবং তিন নারীকে মারধর-হেনস্তার তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, মুখোশ বাহিনী কর্তৃক  বিভিন্ন জায়গায় হেনস্তার শিকার হতে হয়। তারা প্রশাসনের ছত্রছায়ায় থেকে হাটে-বাজারে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে। টাকা দিতে না পারলে তুলে নিয়ে মারধর করে নির্যাতন চালায়। এই মুখোশদের কারণে সাধারণ জনগণ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

তুজিম চাকমা বলেন, গতকাল কাউখালির ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনী মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অথচ তারা সমাজের দুশমন মুখোশ বাহিনীর সদস্যদের সাথে নিয়ে এসে রাতের আঁধারে চোরের মতো হানা দিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় তিন গ্রামবাসীর বাড়িতে তল্লাশি, ভাংচুর ও জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে গেছে। নারীদের পরিহিত পোশাক পিনোন-হাদিও বাদ পড়েনি।

তিনি আরো বলেন, গতকালের কাউখালীর ঘটনা নতুন নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে।

তিনি বলেন, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের পরে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়ন-নির্যাতন আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলা, অন্যায় গ্রেফতার, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে।

সেনাবাহিনী তাদের সৃষ্ট মুখোশ বাহিনীর সদস্যদেরকে সহযোগি বানিয়ে জাতিগত নিপীড়ন চালাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, কাউখালিতে চিহ্নিত গণশত্রু মুখোশ বাহিনীর দুর্বৃত্ত ভাগ্যচন্দ্র, মুধোক্কো, মিল্টনদেরকে লেলিয়ে দিয়ে হাট বাজারে সাধারণ জনগণের কাছ থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করা ও চাঁদা না দিলে তুলে নিয়ে মারধর-হয়রানি করা হচ্ছে।  

তিনি বলেন, যে বাহিনী পাহাড়ে নিরাপত্তার নামে এসে রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয়ে পাহাড়ি নারীদের অনিরাপদে রাখে, ধর্ষণ-নির্যাতন, সম্ভ্রম হানি করে সেই বাহিনী আমরা চাই না, সেই বাহিনী আমরা মানি না। 


সমাবেশের সভাপতি উমেশিং মার্মা বলেন, পাহাড়ে নানা নাটক সাজিয়ে অরাজক পরিস্থিতি জিইয়ে রেখে সেনাবাহিনী তাদের স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছে। সেনাবাহিনী নব্য মুখোশদের লেলিয়ে দিয়ে যতই জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়ে যাক না কেন তার বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ করতে করতে প্রস্তুত রয়েছে। গত বজর বাঘাইছড়ির বাঘাইহাট জোনের পাশে আশ্রয় নেওয়া নব্য রাজাকারদের বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিরোধ করেছিল, গতকাল কাউখালীর জনগণ অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

তিনি অবিলম্বে তিন নারীকে মারধর ও হেনস্তার সাথে জড়িত সেনা সদসস্যদের আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি, সমাজের দুশমন নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানান। একই সাথে তিনি নারী সমাজকে সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।

উল্লেখ্য, গতকাল (৭ মার্চ) রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের ডেবাছড়ি গ্রামে নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তদের সাথে নিয়ে সেনাবাহিনীর একদল সদস্য তিন ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি, ভাঙচুর ও জিনিসপত্র লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রতিবাদ করলে সেনা সদস্যরা তিন নারীকে মারধর ও হেনস্তা করে বলে অভিযোগ উঠেছে।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More