কারাগারে ইউপিডিএফ নেতা পুলক জ্যোতি চাকমার মৃত্যুর ১ বছর আজ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক।। আজ ৩ জুন ২০২১ কারাগারে ইউপিডিএফ নেতা পুলক জ্যোতি চাকমার মৃত্যুর ১ বছর পূর্ণ হলো। ২০২০ সালের আজকের এই দিনে খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

মৃত্যুর সময় তিনি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দায়েরকৃত বেশ কয়েকটি মিথ্যা মামলায় দীর্ঘ ২ বছর যাবত কারাগারে বন্দি অবস্থায় ছিলেন।

সেদিন দুপুরে তিনি বুকে ব্যথাজনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কারা কর্তৃপক্ষ তাঁকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতালে পৌঁছার পর কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

ইউপিডিএফ তাঁর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানালেও প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষ  তদন্ত করেছে কিনা তা আজও জানা যায়নি।

তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে, গ্রেফতারের পর অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের ফলে তাঁর শরীরের ওপর যে খারাপ প্রভাব পড়েছে সেটাই তাঁর মৃত্যুর অন্যতম কারণ হতে পারে।

পুলক জ্যোতি চাকমা খাগড়াছড়ি শহরের মহাজন পাড়ার বাসিন্দা চম্পলাল চাকমার ছেলে। তিনি ছাত্র অবস্থা থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরপর তিনি ইউপিডিএফের সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় একনিষ্টভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা সোচ্চার ছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আর এজন্য তাকে বার বার শাসকের রোষানলে পড়তে হয়েছে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁকে অন্তত তিন বার গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছে। সর্বশেষ তাকে কারাগারেই মৃত্যুবরণ করতে হয়।

প্রথমবার তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন সম্ভবত ২০০৫ সালে খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভর এলাকা থেকে। তখন তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। সে সময়ও তাঁকে বেশ কিছু সময় জেলে অন্তরীণ থাকতে হয়েছে।

এরপর ইউপিডিএফের হয়ে জুম্ম জনগণের অধিকারের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে ২০১৭ সালের ৮ মে তাঁকে কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া এলাকা থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠায়। বেশ কয়েক মাস জেল খাটার পর তিনি জামিনে মুক্তি লাভ করেন। এরপরও তিনি দমে না গিয়ে আবার নতুন ‍উদ্যমে দলীয় কাজে যোগ দেন এবং খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়িতে দায়িত্ব পালন করতে যান। ২০১৮ সালের ৩০ মে সেখানে আবারো সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাঁকে গ্রেফতার করে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতনের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দেয়।

শেষবার গ্রেফতারের পর তাঁর বিরুদ্ধে নতুন আরো বেশ কিছু মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা রুজু করা হয়। এসব মিথ্যা মামলায় তিনি দীর্ঘ ২ বছর যাবত কারাগারে বন্দি অবস্থায় ছিলেন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত প্রায় সব মামলা আদালত থেকে জামিন হলেও ষড়যন্ত্রমূলক কারণে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। হাইকোর্ট থেকে জামিন পাওয়া একটি মামলার জামিন আটকে দিয়ে তাঁকে বন্দি করে রাখার অভিযোগ রয়েছে।

ফলে সন্দেহাতীতভাবে এটা বলা যায় যে, যদি উচ্চ আদালতের দেওয়া জামিন মোতাবেক পুলক জ্যোতি চাকমাকে মুক্তি দেওয়া হতো তাহলে হয়তো তাঁর এমন মৃত্যু হতো না। কিন্তু রাষ্ট্র তাঁকে মুক্তি না দিয়ে ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আটকে রেখে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখেই ঠেলে দিয়েছে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More