কুদুকছড়িতে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শিশু-কিশোরদের প্রতীকী প্রতিরোধ মহড়া ও আলোচনা সভা

বেলুচ রেজিমেন্ট সৈন্যদের ওপর প্রতীকী আক্রমণ করছেন শিশু, কিশোর-কিশোরীরা
রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৩০ আগস্ট ২০২৪
’রক্তপিপাসু হাসিনাকে হটিয়েছি, দালাল-বেঈমানদের দৌরাত্ন্য বরদাস্ত করবো না’ শ্লোগানে ”৪৭-এ বেলুচ রেজিমেন্টের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শিশু-কিশোরদের প্রতীকী প্রতিরোধ মহড়া ও আলোচনা সভা, ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধের বীর রুণু খাঁর অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্প অর্পণ ও স্যালুট প্রদান এবং নৃত্যনাট্য অনুষ্ঠিত হয়েছে রাঙামাটির সদর উপজেলার কুদুকছড়িতে।
আজ শুক্রবার (৩০ আগষ্ট ২০২৪) বেলা ২টা সময়ে ‘জাতীয় গৌরব অনুসন্ধানে নতুন প্রজন্ম ২০২৪’ এর ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে প্রায় এক হাজার ছাত্র-যুবক সহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ অংশগ্রহন করে ন।
শিশু-কিশোরদের প্রতিরোধ মহড়ার আগে ‘জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষায় ছাত্র-যুবসমাজের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভার শুরুতে ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিরোধের বীর রুণু খাঁ’র স্মরণে নির্মিত অস্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভে ফুল অর্পন ও স্যালুট প্রদান করেন, জাতীয় গৌরব অনুসন্ধানে নতুন প্রজন্ম ২০২৪ প্রতিনিধি দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হরি কুমার কার্বারী, ইউপিডিএফ সংগঠক সচল চাকমা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের প্রতিনিধিবৃন্দ।


সভায় কর্মসূচি প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মিলন চাকমা’র সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব বুদ্ধদেবী চাকমার সঞ্চালনায় আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হরি কুমার কার্বারী, ইউপিডিএফ সংগঠক বাবলু চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙামাটি জেলা শাখার সভাপতি তনুময় চাকমা।
এরপর পাহাড়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আত্নোৎসর্গকারী বীর শহীদ সহ ফ্যাসিষ্ট হাসিনার আমলে নিহত সকল শহীদের স্মরণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
আলোচনা সভা শুরুতে ১৯৪৭ সালের বেলুচ রেজিমেন্টের আগ্রাসনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে লিটন ম্যাগাজিন ‘স্ফুরণ’ প্রকাশিত লেখা পড়ে শোনান মাওরুম কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ও আয়োজক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব রিয়া চাকমা।
সভায় পিসিপি নেতা তনুময় চাকমা বলেন, আগস্ট কারোর খুশির আর আনন্দের হলেও কারোর কান্নার মাস। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিক্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগষ্ট ভারত স্বাধীন হয়। অথচ সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামের ৯৮ ভাগ অ মুসলিম থাকার পরও এই অঞ্চলকে মুসলিম অধ্যুষিত পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সে সময়ে স্নেহ কুমার চাকমা, ঘনশ্যাম দেওয়ান ভারতের সাথে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছেন। রাঙামাটির ছাত্র-যুবকরা পুরাতন কোর্ট বিল্ডিংয়ে ভারতের পতাকা ও বান্দরবানে রাজার নেতৃত্বে বার্মার পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের বেলুচ রেজিমেন্ট এসে কারোর মতামত না নিয়ে জোর করে তা নামিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের আগ্রাসনের সুচনা হয়।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হরি কুমার কার্বারী বলেন, আমরা যখন অধিকারের কথা, নির্ষাতনের কথা তুলে ধরতে চাই তখন আমাদের স্ব-জাতীর একটি পক্ষ বিরোধীতা করে। কিন্তু তারা নিজেরা কিছুই করে না। চুক্তির বাস্তবায়ন হবে না মন্তব্য করে তিনি বনে, আমাদের চুক্তির আশায় না থেকে অন্য কিছু ভাবতে হবে। ছাত্র-যুবকরা যদি লড়াই-সংগ্রাম জারি রাখে তাহলে নিশ্চয় বিজয় আসবে।
ইউপিডিএফ সংগঠক বাবলু চাকমা বলেন, আমরা এই আগষ্ট মাসে দুইবার আগ্রাসনের শিকার হয়েছি। একবার ১৮৬০ সালের ১লা আগষ্ট, অন্যটি ১৯৪৭ সালের ২০ আগষ্ট। আমাদের মনে রাখতে পূর্বসুরিরা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করে মোঘলদের পরাজিত করেছে, ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ লড়াই করেছে। কিন্তু ১৯৪৭ সালের জনগণ নেতৃত্ব দেয়ার মত যোগ্য রাজনৈতিক দল না থাকার কারণে বিনা বাধায় বেলুচ রেজিমেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রাম দখল করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো নব্য বেলুচ রেজিমেন্ট তথা পাক হানাদাররা রয়েছে। তারা যুগ যুগ ধরে আমাদের শাসন-শোষন ও নিপীড়ন করে যাচ্ছে। সম্প্রতি গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ থেকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার স্বৈরাচারী সরকার উচ্ছেদের মাধ্যমে সমতলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হলেও পাহাড়ে এখনো সেই নব্য পাক হানাদারের শাসন জারি রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক শাসন ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নতুন প্রজন্মকে ইউপিডিএফের প্রদর্শিত পথে লড়াই সংগ্রামে সামিল হতে হবে।
সভার সভাপতি ও আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক মিলন চাকমা বলেন, ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হওয়ার ৬ দিনের মাথায় পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলুচ রেজিমেন্ট দ্বারা পার্বত্য চট্টগ্রাম আগ্রাসনের শিকার হয়। আমাদের নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতি রক্ষার আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
এরপর অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিউগল বাজানোর মাধ্যমে জাতীয় গৌরব অনুসন্ধানে নতুন প্রজন্মের চেঙ্গে স্কোয়ার্ড বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যদের ওপর প্রতীকী আক্রমণ করেন ও মেইনি স্কোয়াড টিমের সদস্যরা সিরিল র্যাডক্লিপ ও লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাসহ দালাল, গণ শত্রুদের শায়েস্তা করেন।
শেষে জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার লক্ষ্যে সমবেত অংশগ্রহনকারীদের শপথ বাক্য পাঠ করান আয়োজক কমিটির সদস্য নিশান চাকমা।
এরপর প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়াডেরি প্রতিবাদী নৃত্যনাট্যের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।