কুদুকছড়িতে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ, ২৪’র ১৯-২০ সেপ্টেম্বরের হামলায় জড়িতদের শাস্তির দাবি

রাঙামাটি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
২০২৪ সালের ১৯-২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত নারকীয় হত্যাকাণ্ড, তান্ডবলীলা, লুটপাটের প্রতিবাদ, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবিতে রাঙামাটির কুদুকছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন, রাঙামাটি জেলা শাখা।
আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বেলা ২টার সময় “ইউনুস রাখ তোমার সংস্কারের কেচ্ছা, পাহাড়ে সেনা সন্ত্রাস বন্ধ কর” ব্যানার শ্লোগানে কুদুকছড়ি নির্বাণপুর বিহারের ফটক থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কুদুকছড়ি উপর বাজার প্রদক্ষিণ করে নিচ বাজারে সড়কের ওপর সমাবেশে মিলিত হয়।

সমাবেশে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জেলা শাখার সভাপতি তনুময় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক চয়ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন, ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) সংগঠক বাবলু চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা দপ্তর সম্পাদক রিতা চাকমা ও পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমা।

ছাত্রনেতা তনুময় চাকমা শহীদদের গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের মুলধারা জনগোষ্ঠীদের থেকে বিছিন্ন রাখা হয়েছে। দেশের সকল জায়গায় স্বাভাবিক শাসনকাঠামো জারি থাকলেও পাহাড়ে যুগ যুগ ধরে সেনা শাসন জারি রাখা হয়েছে। পাহাড়ে সেনা-সেটলার কর্তৃক সংঘটিত কোন ধর্ষণ, হত্যাকাণ্ড ও অন্যায়ের বিচার হয় না, বরং অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হয়। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনী কর্তৃক গুলি করে জুনান ও রুবেল ত্রিপুরাকে হত্যা করা হয়েছে। পরদিন রাঙামাটিতে প্রকাশ্যে সেটলার কর্তৃক মধ্যযুগীয় কায়দায় অনিক চাকমাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো এ ঘটনার কোন বিচার আমরা পাইনি। ন্যায় বিচার কী পাহাড়িদের জন্য নয়?
তিনি আরও বলেন, আমাদের করের টাকায় বেতন নিয়ে আমাদের উপর কঠোর দমন-পীড়ন ও অস্ত্র তাক করে রাখা হয়েছে। তল্লাশির নামে হয়রানি-লুটপাট করা হচ্ছে।
ইউপিডিএফের অন্যতম সংগঠক বাবলু চাকমা বলেন, রাষ্ট্রীয় মদদপুষ্ট বাহিনীর ইন্ধনে পাহাড়ে ভূমি বেদখল, হত্যা, লুটপাটসহ একের পর এক মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। শাসকগোষ্ঠী মনে করে পাহাড়ের মানুষদের হত্যা, ধর্ষণ করে পাহাড়িদের মুক্তিকামী কন্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখতে পারবে। কিন্তু সেটা তাদের ভুল ধারণা। পাহাড়ের মানুষ প্রতিবাদ করতে শিখেছে এবং চুড়ান্ত বিজয় পর্যন্ত লড়াই করার সৎ সাহস রাখে।

তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালে আজকের এই দিনে খাগড়াছড়িতে মোটরসাইকেল চালককে কথিত হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীঘিনালায় ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়, ধনরঞ্জনকে হত্যা করা হয়। আর খাগড়াছড়ি সদরে সেনাবাহিনী গুলি করে জুনান, রুবেল ত্রিপুরা, ধনরঞ্জন চাকমাকে হত্যা করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালনকালে রাঙামাটিতে অনিক চাকমাকে সেটলাররা নির্মমভাবে হত্যা করে। এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধীরা চিহ্নিত হওয়ার পরও এক বছরেও তাদের গ্রেফতার ও শাস্তি দেওয়া হয়নি।
তিনি অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক বিচাার ও শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানান।
ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমা বলেন, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাশাসন জারি রয়েছে। সেই সেনাবাহিনীর দ্বারা পাহাড়ের মানুষ এখনো অনিরাপদ।
তিনি অবিলম্বে পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতসহ পাহাড়ের মানুষের মৌলিক দাবি পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নেয়ার দাবি জানান।
যুবনেতা প্রিয়তম চাকমা বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা পতনের পর প্রথম পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ হামলার শিকার হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার বদলে সেনাবাহিনীর অপকর্ম আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।

তিনি সন্তু লারমাকে আন্দোলনের প্রতিবন্ধক উল্লেখ করে বলেন, সন্তু লারমা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলন দমন করতে তাদের ওপর ইউপিডিএফের ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে। আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে তারা শিক্ষার্থীদের হুমকি-ধমকি প্রদান করেছে। বর্তমান প্রজন্ম আর এমন ফ্যাসিস্ট শাসন মেনে নেবে না। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বর্তমান প্রজন্ম দুর্নীতিগ্রস্ত, ফ্যাসিস্ট শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে তাদের পতন ঘটাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান প্রজন্মও ফ্যাসিস্ট সন্তু লারমার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হলে পতন হতে বেশি সময় লাগবে না।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী রিতা চাকমা বলেন, সেনাবাহিনী কথিত অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজাতে গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে তল্লাশি, লুটপাট চালাচ্ছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মোনপাড়া এলাকায় সেনাবাহিনী ঘর তল্লাশির নামে ৭ম শ্রেণীর এক ছাত্রকে স্কুলে যেতে বাধা দেয়।
তিনি অবিলম্বে সেনা অভিযানের নামে জনগণকে নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করা এবং ১৯-২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে হামলা-হত্যার সাথে জড়িত সেনা-সেটলারদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।