কুমিল্লায় নারীর ওপর যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে দুই নারী সংগঠনের বিক্ষোভ

0


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

“পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ, নির্যাতন বন্ধ কর” শ্লোগানে কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীর উপর যৌন নিপীড়ন ও নগ্ন ভিডিও ধারন করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া ধর্ষক ফজর আলীসহ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে দুই সংগঠনের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও নারী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১ জুলাই২০২৫) সকাল ১০টায় হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য  চট্রগ্রাম নারী সংঘ যৌথভাবে খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গী স্কয়ারে এই নারী সমাবেশের আয়োজন করে।

সমাবেশের আগে স্বনির্ভর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল চেঙ্গী স্কয়ারে এসে মিলিত হয়।


সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পাবর্ত্য চট্রগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি কণিকা দেওয়ান, হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা আহবায়ক এন্টি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদত তৃষ্ণাকর চাকমা।

কণিকা দেওয়ান বলেন, কুমিল্লায় মুরাদনগরে একজন সংখ্যালঘু হিন্দু নারীর ইজ্জত  কেড়ে নেওয়া ও তার নগ্ন ভিডিও ধারন করা হয়েছে। তার প্রতিবাদে আজকে আমরা এই নারী সমাবেশ করছি।

তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িত ফরজ আলীকে কেবলমাত্র লোকদেখানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। দেখা যাবে কয়েকদিন পরে তাকে কারামুক্তি দেয়া হবে। বাকি জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হবে কিনা তা নিয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন।

তিনি আরো বলেন, পাবর্ত্য চট্রগ্রামে ক্ষেত্রে এযাবত সংঘটিত ধর্ষণের ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি হয় না। যার কারণে পাবর্ত্য চট্রগ্রামে মা-বোনের ইজ্জতের ওপরে প্রশাসন নামক যন্ত্রটি শাসন করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে যে সরকার আসুক না কেন পার্বত্য চট্টগ্রামে একই নিপীড়ন, জুলুম ও নারীদের ধর্ষণ-নির্যাততেনর শিকার হতে হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সাথে বর্তমান ইউনুস সরকারের আমরা কোন পার্থক্য দেখছি না। ফ্যাসিস্টদের চেহারা পরিবর্তন হয় কিন্তু চরিত্র ও শাসন পরিবর্তন হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।

কনিকা দেওয়ান নারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদের নারীদেরকেগ নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকে নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন বা আইন কখনো আমাদের নিরাপত্তা দেবে না। ধর্ষণের বিরুদ্ধে মা বোনদের সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তিনি গত ২৯ জুন কাউখালীতে নিরীহ গ্রামবাসীদের ঘরবাড়িতে সেনাবাহিনী হয়রানিমূলকগ তল্লাশি ও ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে দেয়ার ঘটনা তুলে ধরেন।

কণিকা দেওয়া সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা যারা পাবর্ত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত রয়েছেন নিরীহ মানুষের ওপর হয়রানি-জুলুম বন্ধ করুন। আপনারা পাহাড়িদের ওপর অন্যায়-অবিচার করে যাচ্ছেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, পাহাড়ে নিয়োজিত সেনা সদস্যরা কি দেশের সংবিধান ও আইনের আওতামুক্ত? তাহলে পাহাড়ে এত অন্যায়-অবিচার করার পরও তাদের কেন শাস্তি হয় না? আজকে যদি কুমিল্লার ঘটনায় জড়িত ফরজ আলীকে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে ১৯৯৬ সালে কল্পনা চাকমা’র চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌসকে গ্রেফতার করা হয় না কেন?

তিনি কুমিল্লায় মুরাদনগরে নারীর যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। একই সাথে তিনি দেশের সকল জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিও তুলে ধরেন।


এন্টি চাকমা বলেন, কুমিল্লায় মুরাদনগরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, চিহ্নিত অপরাধী ফরজ আলীকে গ্রেফতার করা হলেও ঘটনায় জড়িত সকল অপরাধীদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। অবিলম্বে সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশের ধর্ষণ, নিপীড়ন, খুন, গুমের কোন শেষ নেই। পার্বত্য চট্রগ্রামে আরো বেশি নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে পাহাড়িদের সাথে যা হয়েছে, বর্তমান ইউনুস সরকারও একই আচরণ করছে।

এন্টি চাকমা অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশকে যদি সত্যিকার অর্থে একটি গণাতন্ত্রিক রাষ্ট বানাতে চান তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন প্রত্যাহার করে অন্যায় দমন-পীড়ন বন্ধ করুন। যেসব সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা অন্যায়-অবিচারে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় এনে বিচার করুন ।

তিনি বলেন, আমরা যদি নিজ বাড়িতে নিরাপদে থাকতে পারি না, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মস্থলে কীভাবে নিরাপদে থাকবো। বান্দরবানে নিজ জুমে গিয়ে চিংমা খেয়াংকে গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। কিন্তু এখনো এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার ও বিচার করা হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণে ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এন্টি চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাশাসন জারি রেখে সাধারণ জনগণের ওপর নিপীড়ন, হয়রানি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।

তিনি কুমিল্লায় মুরাদনগরের ঘটনায় জড়িতদেরসহ কল্পনা চাকমাকে অপহরণে জড়িত লে. ফেরদৌস গংদের গ্রেফতার, বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।


তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা বলেন, নারী ও শিশু নিপীড়ন নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো বিচারহীনতা। এই কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে নারীর ওপর সহিংসতা ঘটছে। কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনা তারই জ্বলন্ত উদাহরণ। বিচারহীনতার কারণে কৃত্তিকা ত্রিপুরা, চিংমা খেয়াং থেকে শুরু করে এ যাবত পাহাড়ে সংঘটিত ধর্ষণ-হত্যার ঘটনার কোন সুষ্ঠু বিচার হয়নি।  

তিনি আরো বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে যেভাবে নিপীড়ন-নির্যাতন, জুলুম চালানো হয়েছে, বর্তমান ইউনস সরকারও তার ব্যতিক্রম নয়। আজকে ভয় লাগে কীভাবে আমাদের বোনেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে, কীভাবে জুমে, ক্ষেতে-খামারে কাজে যাবে। তিনি নারী নির্যাতনসহ সকল ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More