‘কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার’ দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের

0
‘কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার’ দাবিতে সংবাদ সম্মেলেন করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।


ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

‘কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার’ দাবি করে করে সংবাদ সম্মেলন করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এ সময় ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল ও নারী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করার দাবি জানান।

আজ রবিবার (৭ জুলাই ২০২৪০ দুপুর ১২টার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জোটের সমন্বয়ক ও ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। 

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যাবৎ এদেশের তরুণ ছাত্রসমাজ আন্দোলন করে আসছে। সর্বশেষ ৫ জুন ২০২৪ তারিখে হাইকোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে আবারও প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা চালু হওয়ায় সারাদেশের ছাত্রসমাজ আন্দোলনে নেমেছে। ইতিমধ্যে ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করে লাগাতার আন্দোলন চলছে। রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের লড়াকু অবস্থানের প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট একাত্মতা পোষণ করছে। একই সাথে কোটা প্রথার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে সারাদেশে সচেতন ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে”।


রাগীব নাঈম লিখিত বক্তেব্যে আরো বলেন, “বৈষম্যমূলক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য, আপাত অর্থে সমতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কোটা প্রথার প্রচলন। অথচ ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থে এদেশে কোটা প্রথা নিজেই বৈষম্যের কারণ হয়ে দাঁড়ালো। যার বাস্তব উদাহরণ হলো মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর আজও ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা হয়েছে। অথচ কোটা ব্যবস্থা কোনক্রমেই স্থায়ী ব্যবস্থা নয়”।

তিনি আরো বলেন, “২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১১ এপ্রিল’ ১৮ তারিখে শেখ হাসিনা ১ম ও ২য় শ্রেণীর সরকারী চাকরীতে সকল ধরণের কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এই চটকদার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রতিবন্ধী, সংখ্যালঘু জাতিসত্তা ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে তার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ২০১৮ সালে ছাত্রদের দাবি ছিলো কোটা সংস্কারের। অথচ শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে বিভ্রান্ত করতে সরকারের পক্ষ থেকে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। মাত্র ছয় বছরের মধ্যে হাইকোর্ট সেই পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে। ফলে কোটা বাতিল কোনভাবেই সমাধান নয় প্রয়োজন কোটার যৌক্তিক সংস্কার”।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ”ফ্যাসিবাদী শাসকরা জনগণকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করে। ২০১৮ সালে আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা যখন সমস্ত কোটা বাতিলের বিভ্রান্তিকর ঘোষণা দেন তখন আমরা বামপন্থী প্রগতিশীল সংগঠনগুলো এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলাম। কোটা সংস্কার  আন্দোলনে তৎকালীন সুবিধাবাদী, আপোষকামী নেতৃত্ব তাদের সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে শেখ হাসিনার দূরভিসান্ধিমূলক ঘোষণা মেনে নেয়। তখন বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি নারী ও আদিবাসী কোটা বাতিল হওয়াকে নিজেদের আদর্শিক বিজয় মনে করেছিলো। কিন্তু প্রকৃত অর্থে কোটা পদ্ধতিতে বৈষম্যের অবসান হয়নি। এখনও শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে পোষ্য কোটা, মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ বিভিন্ন বৈষম্যমূলক কোটা জিইয়ে রাখা হচ্ছে। আবার এই বৈষম্য দেখিয়ে সকল কোটা বাতিলের নামে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কোটা বাতিল করা হচ্ছে। রাষ্ট্রের এই বিভ্রান্তিকর অবস্থানের বিপরীতে শুধু স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন নয় চাই সচেতন ছাত্র আন্দোলন”।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বৈষম্যমূলক মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল এবং নারী, প্রতিবন্ধী, অনুন্নত জনপদ, অনগ্রসর জাতিসত্তা ও বঞ্চিত শ্রেণীর জন্য যৌক্তিক মাত্রায় কোটা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট্রের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সহ-সভাপতি দীপা মল্লিক, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তওফিকা প্রিয়া।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More