‘ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কুত্তাও ঢুকতে পারে না, বাইরের লোকের পক্ষে কিভাবে ঘটনা করা সম্ভব’-ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষ
৮গণসংগঠনের প্রতিনিধি দলের সাথে অধ্যক্ষের মতবিনিময়

কুমিল্লা প্রতিনিধি ।। গতকাল ২৭ মার্চ বেলা ২টার দিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আট গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির প্রতিনিধি দল ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ মো: আব্দুর রশিদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন। প্রতিনিধি দলটি সোহাগী জাহান তনু (১৯) হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ, নিহতের সহপাঠী ও শিক্ষার্থীদের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের তরুণ ছাত্র-যুবসমাজের পক্ষ থেকে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেন। ১৯৯৬ সালে ১২ জুন কল্পনা চাকমাকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ির নিউ লাল্যাঘোনা নিজ বাড়ি থেকে এক সেনা কর্মকর্তা লে: ফেরদৌস এর নেতৃত্বে অপহরণ ও গুম করা এবং ১৯৯৫ সালের ২৪ আগষ্ট দিনাজপুরে পুলিশ কর্তৃক ইয়াসমিন ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার সাথে সোহাগি জহান তনু (১৯) ধর্ষণ ও হত্যার সাযুজ্য রয়েছে বলে প্রতিনিধি দল মন্তব্য করেন।
এ সময় প্রতিনিধি দলে ছিলেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সভাপতি মাইকেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভানেত্রী নিরূপা চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল চাকমা, রিপন চাকমা, চৈতালী চাকমা ও অন্তিম চাকমা।
অধ্যক্ষ জনাব আব্দুর রশিদ তনু হত্যাকা-ের প্রতিবাদে চলমান আন্দোলনের প্রতি গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম (ডিওয়াইএফ), পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ও হিলি উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ)-সহ পাহাড়ের সংগঠনগুলোর একত্মাতার সংবাদে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং প্রতিনিধি দলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রতিনিধি দলকে আরও জানান, শুধু ক্যাম্পাসে নয়, তনু হত্যার প্রতিবাদে সারাদেশে আন্দোলন হচ্ছে। এমনকি দেশের বাইরেও মানুষ বিক্ষোভ করছে। সকল ভেদাভেদ ভুলে সারা দেশের মানুষ প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। তিনি প্রতিনিধি দলকে আরও জানান, কলেজে প্রায় ২৮ হাজার ছাত্র ছাত্রী রয়েছে। প্রতিদিন আন্দোলন হচ্ছে। আজ (২৭ মার্চ) সকালেও হয়েছে। এখন ক্যাম্পাসে সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে। সেনাবাহিনী থেকে বলা হয়েছে আন্দোলন যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়।

প্রতিনিধি দলটি কলেজ অধ্যক্ষকে চাঞ্চল্যকর সোহাগী জাহান তনু (১৯) হত্যার বিষয়ে তার অভিমত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ তনু’র লাশ যেখানে পাওয়া যায় সেটা সংরক্ষিত এলাকা। এলাকাটা অনেকটা গ্রামের মতো আর পুরাটাই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা।’
সেনা ও ডিজিএফআই-এর লোকজন অধ্যক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তনুর সাথে কারোর কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা জানতে চেয়েছিল বলে প্রতিনিধি দলকে জানান। এ সময় তিনি অনেকটা বিপদ্রুপাত্মক হাসি দিয়ে বলেন, “দেখেন! কেউ কারোর সাথে প্রেম করলে কি আর আমাকে জানিয়ে করবে? আর আমরা জানি, ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অনুমতি ছাড়া কোন কুত্তাও ঢুকতে পারে না। তো কিভাবে বাইরের কোন লোকের পক্ষে এ ঘটনা ঘটিয়ে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করা সম্ভব!” তিনি কতখানি ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত তা তার উক্তি থেকে বোঝা যায়।
আক্ষেপের সাথে অধ্যক্ষ আরও বলেন, ঘটনাটি কর্তৃপক্ষ আইডেন্টিফাই করেছে বলে আমার জানা নাই। কেবল আশ্বাস ছাড়া কোন লক্ষ্যণীয় অগ্রগতির খবর দিতে পারছে না। তদন্তের কাজে কেউ কলেজ ক্যাম্পাসে আসে নি বলেও তিনি প্রতিনিধি দলকে জানান।
কথা প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ বলেন, ‘প্রতিদিন গাড়ি চাপা বা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় অহরহ মানুষ মারা যাচ্ছে। এসব দুর্ঘটনায় তেমন একটা করার কিছু থাকে না। কিন্তু তন’র ঘটনাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটা কোন সাধারণ দুর্ঘটনা বা মৃত্যু ছিল না। এটা সম্পূর্ণ অস্বাভাবিক, পরিকল্পিত। ব্যক্তিগতভাবে আমি তা মেনে নিতে পারি নি ও পারছি না। এর অবশ্যই সুষ্ঠু বিচার হতে হবে। দোষীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে হবে।’
অধ্যক্ষ মো: আব্দুর রশিদ আরও বলেন, ওর (তনু) বাবা ক্যান্টনমেন্টে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। পরিবার নিয়ে থাকেন ক্যান্টনমেন্টেরই এলাকায়, একটা টিন শেড ঘরে। দেখলেই বুঝা যায় তাঁর (তনুর) পরিবার আর্থিকভাবে তেমন একটা স্বচ্ছ্বল নয়। সে টিউশনি করতো। টিউশনি থেকে ফেরার পথে সে দুর্ঘটনার শিকার হয়।
তনু এখানে থিয়েটারের নাট্য কর্মী ছিল। সে নাচ-গান করতো। সে অত্যন্ত প্রাণবন্ত ও মেধাবী ছিল। সবাই তাঁকে ভালোবাসত। তাঁকে আমি আমার মেয়ের মতো স্নেহ করতাম ও ভালোবাসতাম। প্রায় সময় সে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার কাছ থেকে নাট্যদলের প্রয়োজনে গাড়িসহ বিভিন্ন কিছু চেয়ে নিত। ঘটনার আগে থিয়েটার থেকে তনুরা শ্রীমঙ্গলে পিকনিকে যায়। সেবারও আমার কাছ থেকে সে গাড়ি চেয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পরের দিনই এ ঘটনাটি ঘটে।

ভিক্টোরিয়া কলেজ অধ্যক্ষের সাথে সাক্ষাত ও মতবিনিময় শেষে প্রতিনিধি দলটি কলেজ থিয়েটার পরিদর্শন করে এবং পরে কান্দিরপাড়ের সমাবেশে যোগ দিয়ে প্রতিবাদী ছাত্র-জনতার সাথে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করে।
আট গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির প্রতিনিধি দলকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেন ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অশিক। এছাড়াও বিশেষভাবে সহায়তা দেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও কুমিল্লা সার্ভেয়ার ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তারা প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষা করে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।