খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ নেতা রুইখই মারমার ১৪তম শহীদ বার্ষিকী স্মরণে আলোচনা সভা
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর ২০২৩

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ’র কেন্দ্রীয় সদস্য রুইখই মারমার ১৪তম শহীদবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা সভা করেছে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ইউনিট।
আজ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর ২০২৩) সকাল ১০টায় “আসুন, লড়াই সংগ্রামের চেতনায় অগ্নিমশাল জালিয়ে বীর শহীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে রণক্লান্ত-পলায়নবাদী-আত্মসমর্পনবাদী-প্রতিক্রিয়াশীল-সরকারের লেজুড় ও দালালদের ঝাড়ু মেরে ধিক্কার জানাই” এই আহ্বানে উক্ত আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভা শুরুতে শহীদ রুইখই মারমা প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর রুইখই মারমাসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে নিপীড়িত জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলনের সকল বীর শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

আলোচনা সভায় ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা সংগঠক পার্বন চাকমার সভাপতিত্বে ও মিটন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি লিটন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের জেলা শাখা আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক তৃষ্ণাঙ্কর চাকমা।
বক্তারা বলেন, শহীদ রুইখই মারমা ২০০৯ সালে ২ অক্টোবর লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নের বটতলী নামক স্থানে সেনা-সৃষ্ট দুর্বৃত্তদের সশস্ত্র হামলায় শহীদ হন। তৎসময়ে লক্ষীছড়ি সেনাজোনে দায়িত্বরত লে. কর্নেল শরীফুল ইসলাম সমাজের কতিপয় অধঃপতিত দুষ্কৃতকারীদের দিয়ে সিএইচটিএনএফ নাম দিয়ে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি করেন। পরে স্থানীয়ভাবে বোরখা পার্টি নামে পরিচিতি পাওয়া এই সন্ত্রাসীদেরকে অপহরণ, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ সকল অপকর্মের নিরাপত্তা ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগীতা করতেন এই শরীফুল ইসলাম। আর রুইখই মারমা সন্ত্রাসীদের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার কারণে লে. কর্ণেল শরীফুল সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে রুইখই মারমাকে হত্যা করে।
বক্তারা রুইখই মারমাকে স্মরণ করে বলেন, তিনি অধিকারহারা নিপীড়িত মানুষের জন্য নিরলসভাবে আমৃত্যু কাজ করে গেছেন। জনগণের উপর সেনা নির্যাতন, ভূমি বেদখল প্রতিরোধে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সে সময় লক্ষীছড়ি, মানিকছড়ি ও রামগড়ে সেনা উস্কানিতে ভূমি বেদখল ব্যাপকভাবে শুরু হলে তার বিরুদ্ধে রুইখই মারমা জনগণকে সংগঠিত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার সুদক্ষ নেতৃত্ব ও অপরিসীম দায়িত্বশীলতা সেনাবাহিনী ও তাদের চর এজেন্টদের ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়নি।

তারা বলেন, রুইখই মারমা আজীবন একজন সংগ্রামী ছিলেন। ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণকারী এই নেতা ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে তিনি জনসংহতি সমিতিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে জনসংহতি সমিতির মধ্যে মতবিরোধের ফলে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ অবসানের পর তিনি দীর্ঘ সময় ধরে রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। তবে তিনি সমাজে নানা গঠনমূলক কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে ১৯৯৮ সালে ইউপিডিএফ গঠিত হলে তিনি এই দলের অন্তর্ভুক্ত হন এবং আমৃত্যু অত্যন্ত একনিষ্টতার সাথে ভাগ্য বিড়ম্বিত, লাঞ্ছিত-বঞ্চিত ও অধিকারহারা জনগণের অধিকার ও আত্মমর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তাকে শারীরিকভাবে হত্যা করা গেলেও তিনি যে সংগ্রাম করে গেছেন, যে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়েছেন তার জন্য তিনি অমর হয়ে থাকবেন।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, শাসকগোষ্ঠি পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে ও পাহাড়ি ধ্বংসের নীলনক্সা বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত খুন-গুম, ধর্ষণ, অপহরণ, ভূমি বেদখলসহ অন্যায় দমনপীড়ন জারি রেখেছে। ঠ্যাঙারে নব্যমুখোশদের মতো সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে অপহরণ, খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি, মুক্তিপণ আদায়সহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি দীঘিনালায় হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী এন্টি চাকমাসহ তিনজনকে অপহরণ , কাপ্তাইয়ে ৬ সেনা-সদস্য কর্তৃক এক মারমা ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। পানছড়িতে বিজিবি কর্তৃক ১২ লক্ষ টাকা লুট ও তাদের গুলিতে একজন যুবক আহতের ঘটনা ঘটে ।
বক্তারা আরো বলেন, আমাদের আর পিছনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ আমাদের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে। ব্রিটিশরা পুরো ভারতবর্ষে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে পারেলেও সে সময় পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের প্রতিরোধের কারণে পুরোপুরিভাবে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছিল। আমরা পাহাড়ে দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে টিকে রয়েছি, আগামীতেও লড়াই করে জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করতে হবে।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্বেও সরকার-শাসকগোষ্ঠী জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দেওয়ার বিভিন্ন চক্রান্ত ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। কিন্তু জনগণের প্রতিরোধের মূখে তাদের সেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র সফল হতে পারেনি। বর্তমানেও অন্যায় দমন-পীড়ন চালিয়ে, ঠ্যাঙারে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আন্দোলন ধ্বংসের ষড়যন্ত্রও মুক্তিকামী জনতা প্রতিরোধ করবে।
বক্তারা শহীদ রুইখই মারমা’র লালিত সংগ্রামী চেতনা থেকে শক্তি সঞ্চয় করে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামকে বেগবান করতে ছাত্র-যুব-নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনসাধারণকে এগিয়ে আসার আহ্বান আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন