খাগড়াছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বিক্ষোভ, তিন সংসদ সদস্যের কুশপুত্তলিকা দাহ
খাগড়াছড়ি: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, রাংগামাটিতে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষনার নামে অবৈধ ভূমি বেদখল প্রক্রিয়া বন্ধ ও রামগড়ে ম্রাইহ্লাপ্রু কার্বারী পাড়া থেকে ৫০ পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে আজ ২৯ জুন শনিবার খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম। সমাবেশে পাহাড়ি জনগণের সাথে বেঈমানী করায় তিন সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা, দীপংকর তালুকদার ও বীরবাহাদুরের কুশপুত্তিলিকা দাহ করা হয়েছে।
সমাবেশে নতুন কুমার চাকমা বলেন, ২০১১ সালে ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাশ করা হয়। উক্ত সংশোধনীর মাধ্যমে বাঙালী ভিন্ন অন্য জাতিসমূহকে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়া হয়। সেই উগ্র জাতীয়তাবাদী সংবিধানকে কেবল পাহাড়িরা নয় সমতলে বসবাসরত সংখ্যলঘু জাতিসমূহও মেনে নেয়নি এবং আগামীতেও মেনে নেবে না।
তিনি পার্বত্য তিন এমপিকে জাতীয় কুলাঙ্গার আখ্যায়িত করে বলেন, যেদিন জাতীয় সংসদে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস করা হচ্ছিল সেদিন তারা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে টেবিল চাপরিয়ে নির্লজ্জভাবে বাঙালী জাতীয়তাকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। পাহড়িদের ভোটে নির্বাচিত তিন এমপি চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতিয়তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে পাহাড়ি জনগণের সাথে বেঈমানী করেছেন। তাদের এই বেঈমানীর কারণে সরকার সংখ্যালঘু জাতিসমূহের উপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিতে সাহস পেয়েছে।
রাঙামাটি সহ পার্বত্য চট্টগ্রামে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণার নামে পাহাড়িদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র চলছে অভিযোগ করে নতুন কুমার চাকমা বলেন, ৬০ দশকে কাপ্তাই বাঁধ দেয়া হলে হাজার হাজার পাহাড়ি পরিবার উদ্ভাস্তু হয়ে লেকের পার্শ্ববর্তী পাহাড় ও টিলাগুলোতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। এখন সেই পাহাড় এবং টিলাগুলো থেকেও বনায়নের নামে বন বিভাগ কর্তৃক পাহাড়িদের উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি সরকারে এই ষড়যন্ত্র পাহাড়ি জনগণ মেনে নেবেনা বলে হুশিয়ারী দিয়ে বলেন, কাপ্তাই বাঁধের সময় একবার পাহাড়িদের নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, নতুন করে যদি আবারো উচ্ছেদ করার চেষ্টা করা হলে পাহাড়ি জনগণকে সাথে নিয়ে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম তার দাতভাঙ্গা জবাব দেবে এবং প্রতিহত করবে।
তিনি আরো বলেন, খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় উপজেলায় পাতাছড়া ইউনিয়নের ম্রাইহ্লা কার্বারী পাড়া থেকে ৫০ পাহাড়ি পরিবারকে উচ্ছেদ করে তাঁদের জায়গায় বাঙালি পূর্ণবাসনের চক্রান্ত্ম করা হচ্ছে। মাটিরাঙ্গার গোমতিতে ৪০ পরিবার পাহাড়ি এখনো গ্রামছাড়া হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। এছাড়াও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে চাক জাতিসত্তার জনগণ নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকার একদিকে সেটলারদের দিয়ে পাহাড়িদের উচ্ছেদ করে জায়গা দখল করছে অপরদিকে কখনো বনায়নের নামে, কখনো সেনা গ্যারিসন নির্মাণ আর কখনো বিজিবি ক্যাম্প সম্প্রসারণের নামে পাহড়ি জনগণকে নিজ বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ করছে। সরকারের এই নীতির ফলে পাহাড়ি জনগণ আজ নানা ধরনের নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
তিনি আগামীকাল ঘোষিত খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলায় সকাল-সন্ধ্যা সড়ক ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ শেষে পাহাড়িদের ভোটে নির্বাচিত পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন সাংসদ দীপংকর তালুকদার, বীর বাহাদুর ও যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বিল পাসের সময় বাঙালী জাতীয়তার পক্ষে ভোট দেয়ায় তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
একই দাবিতে খাগড়াছড়ির পানছড়িতেও বিক্ষোভ র্মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় কলেজ গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরম্ন হয়ে পানছড়ি বাজার প্রদক্ষিণ শেষে মুক্তমঞ্চে এক সমাবেশ করে। এতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা কমিটির সভাপতি বরম্নণ চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি থানা শাখার সভাপতি সুমেধ চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক সুসময় চাকমা। গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বিবর্তন চাকমা সমাবেশ পরিচালনা করেন।
সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানান এবং রাংগামাটিতে বনায়নের নামে বন বিভাগ কর্তৃক পাহাড়ি উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন অজুহাতে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল বন্ধের দাবী জানান।
অপরদিকে, গুইমারায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন এই বিক্ষোভের আয়োজন করে।