খাগড়াছড়িতে চবির ৫ শিক্ষার্থী “অপহরণ” নাকি অন্য কিছু?

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী ‘অপহরণের’ শিকার হয়েছেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। বলা হচ্ছে, উক্ত ৫ শিক্ষাার্থীকে ‘বিঝু’ শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফেরার পথে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল ২০২৫) সকালে অপহরণ করা হয়েছে।
এ ঘটনার জন্য সন্তু লারমার জেএসএস সমর্থিত লোকজন ইউপিডিএফকে দায়ি করলেও ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা দৃঢ়তার সাথে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
যাদেরকে অপহরণের অভিযোগ করা হচ্ছে তারা হলেন- রিশান চাকমা (তিনি জেএসএস সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির সদস্য এবং আন্তর্জাতিক সর্ম্পক বিভাগের শিক্ষার্থী; চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো, চারুকলা বিভিগের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা। তারা প্রত্যেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এবং জেএসএস (সন্তু) সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী বিঝুকে উপলক্ষ করে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যায় গিয়েছিলেন। সেখানে তারা জেএসএস (সন্তু)-এর সেখানকার নেতা-কর্মীদের সাথে মিলিত হয়েছিলেন। এরপর গতকাল তারা ক্যাম্পাসে ফেরার কথা বলে মারিশ্যা থেকে চলে আসেন খাগড়াছড়ি সদরে (যদিও মারিশ্যা থেকে সরাসরি চট্টগ্রামে বাস সার্ভিস রয়েছে)। কিন্তু তারা চট্টগ্রামে বা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে না গিয়ে পানছড়ির দিকে চলে যান। তবে তারা পানছড়িতে কোথায় গেছেন তা জানা সম্ভব হয়নি। অনেকে ধারণা করছেন পানছড়ির সীমান্তে অবস্থানরত জেএসএস (সন্তু)-এর সশস্ত্র দলটির সাথে সাক্ষাত করতে তারা সেদিকে গিয়েছিলেন। যদিও জেএসএস’র ছাত্র সংগঠনটির সভাপতি নিপুন ত্রিপরার ভাষ্য মতে, বাসের টিকিট না পাওয়ায় তারা খাগড়াছড়ি সদরের ভাইবোন ছড়ার কুকিছড়ায় মৈত্রীময় চাকমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে রাতযাপনের পর আজ সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলে তাদেরকে গিরিফুল এলাকা থেকে অপহরণ করা হয়। আর এ ঘটনার জন্য তিনি সরাসরি ইউপিডিএফকে দায়ী করেন।
তবে, ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা বলেছেন, এ ধরনের কোন ঘটনার সাথে ইউপিডিএফ জড়িত নয়। এই ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সবসময় ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের পক্ষে। কোনো মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের উপর দায় চাপাচ্ছে।”
অন্যদিকে, গিরিফুল এলাকাবাসী এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তারা এ ধরনের অপহরণের বিষয়ে কোন কিছুই জানেন না। তাদের এলাকায় এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। এটা গিরিফুল এলাকাকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন।
এ বিষয়ে একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, জেএসএস (সন্তু) রাষ্ট্রীয় একটি বিশেষ মহলের সাথে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে খাগড়াছড়িতে কার্যক্রম শুরু করার পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্যেই তারা উক্ত ৫ শিক্ষার্থীকে পরীক্ষামূলকভাবে পরিস্থিতি যাচাইযে খাগড়াছড়ি সদরে প্রেরণ করেছে এবং তাদেরকে অপহরণের অভিযোগ করে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে মানুষের সিমপ্যাথিকে কাজে লাগিয়ে সুবিধালাভের চেষ্টা করছে। সবকিছু বিশেষ মহলটির পরিকল্পনামাফিক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি।
এদিকে, সর্বশেষ রাত সাড়ে ৯টায় পাওয়া খবর অনুযায়ী শিবমন্দির এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে সেনাবাহিনী তৎপরতা শুরু করেছে। এমতাবস্থায় এলাকার জনমনে নানা আশঙ্কা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।