খাগড়াছড়িতে ত্রিপুরা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে রাবিতে বিক্ষোভ

রাবি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ত্রিপুরা কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে ‘রাবি ও রুয়েটের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা’।
শুক্রবার (১৮ জুলাই ২০২৫) বেলা তিনটায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্যারিস রোডে এই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় তারা ‘আছিয়া থেকে চিংমা খুন ধর্ষণ আর না’; ‘জুম্ম নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করো’; ‘উন্নয়ন ও পর্যটনের নামে ভূমি দখল বন্ধ চাই’; ‘আদিবাসী নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো’; ‘নারীর ওপর নিপীড়ন বন্ধ করো’; সহ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে প্রতিবাদ জানায়।

বিক্ষোভ সমাবেশে বিচারের দাবি জানিয়ে শামীন ত্রিপুরা বলেন, ‘আমরা এ সংঘবদ্ধ ধর্ষণের তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা এর আগেও বারবার দেখেছি পাহাড়িদের ধর্ষণ ও হামলা হলেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয় না। এমনকি ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলেও আমরা আবার হামলার শিকার হই। আমরাও তো স্বাধীনতা যুদ্ধে গিয়েছিলাম, তারপরও আমাদের সঙ্গে এত বৈষম্য কেন? আমরা চিংমার ধর্ষণ ও খুনসহ সব ঘটনার প্রতিবাদ জানাই।’
ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী রিসার্চ চাকমা বলেন, ‘আমরা প্রতিবাদ করতে গেলেই আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমরা যদি রুখে দাঁড়াই, পার্বত্য চট্টগ্রাম অচল হয়ে যাবে। গত তিন মাস আগেও আমরা এক ধর্ষণের বিচারের দাবিতে প্যারিস রোডে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিচার পাইনি। আমরা এ দেশে মিয়ানমার বা চীন থেকে উড়ে আসিনি। আমরা সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি প্রশাসন ধর্ষকদের প্রশ্রয় দেয়।’
জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাস চন্দ্র হেমব্রম বলেন, একটি স্বাধীন বাংলাদেশে, রাজশাহীর মতো শিক্ষানগরীতেও আজ আমাদের বোনেরা নিরাপদ নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটেলার পুনর্বাসন করা হয়, পর্যটনের নামে হাজারো পরিবার বাস্তুচ্যুত হয় এর জন্য রাষ্ট্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ধর্ষকরা এখন হাসতে হাসতে কারাগারে যায় এবং হাসতে হাসতেই বের হয়ে আসে। এর দায় একমাত্র প্রশাসনের। তাদের লজ্জার কোন চিহ্ন আমরা দেখতে পাই না। ‘ধর্ষণ করলেই মৃত্যু’ এই আইন চালু করতে পারলে তবেই ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, কল্পনা চাকমা অপহরণের ঘটনার ২৮ বছর পরেও এর বিচার আমরা পাইনি। আমরা জানি, রাষ্ট্রযন্ত্র প্রকাশ্য দিবালোকে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে তিনজন পুলিশ দ্বারা তিনজন সাওতালকে হত্যা করেছে। এর বিচারও এখনো পাইনি। প্রতিটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত হোক এবং ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি রেখে বক্তব্য শেষ করেন।
মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী চেসি ত্রিপুরা তাঁর বক্তব্যে বলেন, কিছু সেটেলার মিলে ধর্ষণ করে সেই নারীর পথকে রুদ্ধ করে দেয়া হয়। পাহাড়ের ধর্ষকেরা হাসে। কারণ তারা জানে তাদের বিচার হবে না, কিছুদিন পরে তাঁরা ঠিকই মুক্তি পাবে। এর পেছনে রয়েছে রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা। আমরা আরো দেখতে পাই, প্রশাসন এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে আমার বোনের সম্ভ্রমকে কিনে নিয়েছে। তাহলে কি ধর্ষণের মূল্য এক লক্ষ টাকা? ফাঁসি বা জল্লাদের অভাব হলে আমাকে নিন, আমি সেই ধর্ষকদের জল্লাদ হতে চাই। রেপিস্টদের উপযুক্ত শাস্তি ও বিচার চেয়ে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
রুয়েটের শিক্ষার্থী বিনয় কুমার চাকমা বলেন, কিছুদিন আগে আমার এক ত্রিপুরা বোনকে গণধর্ষণ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে যখন শান্তিপূর্ণ মিছিল করা হয় তখন বাধা দিয়েছে সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী আন্দোলনকারীদের মারধর করেছে। এর পিছনে কি কারণ লুকিয়ে আছে এবং কার মদদে সেনারা ধর্ষকের পক্ষ নিচ্ছে এই নিয়ে তিনি সরকার-প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রাখেন এবং ধর্ষকদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি করেন।

লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী জেমি সাইলুক বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপিঠেও আমার মতো পাহাড়ি নারীরা নিরাপদ নয়। মিছিলে আসার সময় যখন রিকশা ডাকছিলাম তখন সেখানকার কাছাকাছি থাকা লোকগুলো আমাকে দেখে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গিতে উত্তক্ত করছিল। এমন না যে, আমার পোশাকে অশালীন কিছু ছিল। তাছাড়াও ক্যাম্পাসে, ক্যাম্পাসের বাইরেও রীতিমত উত্তক্ত করা হয়। তাঁরা ভাবে যে আমরা সংখ্যালঘু বলে আমাদের যা কিছু করতে পারবে। জুলাই পরবর্তী বাংলাদেশে পাহাড় ও সমতলে ধর্ষণের ঘটনা না কমে বরাবরই বেড়েছে। তাঁর কোন ফলস্বরূপ সমাধান আমরা পাইনি। তাছাড়া আমরা দেখতে পেয়েছি, ধর্ষকরা ধর্ষণের পর পুলিশের হেফাজতে থাকা সত্ত্বেও হাসছে এর কারণ বাংলাদেশের আইনের চরম দুর্বলতা। যতদিন পর্যন্ত এর কোন স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না ততদিন আমরা এ আন্দোলন জারি রাখব।
সভাপতির বক্তব্য বিজয় চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান ধর্ষণের ঘটনা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখবার কোন সুযোগ নেই। সার্কুলেশন সিস্টেমে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের উপর ঔপনিবেশিক কায়দায় নির্যাতন, নিপীড়ন, ধর্ষণের যে চক্র সেটি অব্যাহত রয়েছে।
তিনি, আগামী চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে পলাতক আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ভুক্তভোগী পরিবারকে সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ সকল নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ অবিলম্বে নিরীহ বমদের মুক্তির দাবি জানান।
প্রতিবাদ সমাবেশের শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়৷ মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিনেট ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।