খাগড়াছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদসহ তিন সংগঠনের ডাকা অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়ি: খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ার যত্নমোহন কার্বারী পাড়ায় পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর বিজিবি, পুলিশ ও সেটলারদের যৌথ হামলার প্রতিবাদে ইউপিডিএফের তিন সহযোগী সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ডাকে খাগড়াছড়ি জেলায় অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ স্বতঃস্ফুর্তভাবে পালিত হয়েছে। আজ ১৫ জুন রবিবার সকাল ৬টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।
রবিবার সকাল ৬টার দিকে শহরের দক্ষিণ খবংপুজ্জে পেট্রোল পাম্প, স্বনির্ভর ও খাগড়াছড়ি গেট এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করে পিকেটাররা। এ সময় খাগড়াছড়ি গেট ও পেট্রোল পাম্প এলাকায় পুলিশ পিকেটারদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে এবং কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ধাওয়া করে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পেট্রোল পাম্প এলাকায় আবারো পুলিশ পিকেটারদের ধাওয়া করে এবং তাদের লক্ষ্য করে ১০-১২ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া মানিকছড়ির জামতলা থেকে পুলিশ চাইথোয়াই মারমা(২০) নামে এক পিকেটারকে আটক করে। অন্যদিকে, গুইমারার বাইল্যাছড়ি থেকে সেনা সদস্যরা জনি ত্রিপুরা(১৫) নামে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রকেও একটি বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি শহরের অভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার সড়কে কোন যান চলাচল করেনি। জেলার দীঘিনালা, পানছড়ি, মহালছড়ি, মাটিরাঙ্গা, গুইমারা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায়ও শান্তিপূর্ণ ও স্বতঃস্ফুর্তভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি বিপুল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক জিকু ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মিশুক চাকমা এক যুক্ত বিবৃতিতে অর্ধদিবস সড়ক অবরোধ কর্মসূচি সফল করার জন্য জেলার সকল যানবাহন মালিক সমিতি, শ্রমিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আগামীতে এ ধরনের কর্মসূচিতে আবারো সহযোগিতা প্রদানের জন্য তারা সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তারা বলেন, বিজিবি সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে ও জোরজবরদস্তি করে বাবুছড়া এলাকার যত্ন মোহন কার্বারী পাড়ায় পাহাড়িদের জায়গা বেদখল করে ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপনের কাজ করছে। গত ১০ জুন মঙ্গলবার পাহাড়িরা ভূমি বেদখলের প্রতিবাদ ও নিজেদের জায়গায় কলা গাছ রোপন করতে গেলে বিজিবি, পুলিশ ও সেটলাররা যৌথভাবে নিরীহ পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর হামলা চালায়। তাদের বেপরোয়া হামলায় ১৮ জন পাহাড়ি গ্রামবাসী আহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী।
বিবৃতিতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ না করে উল্টো খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত ৪ নারীসহ ৬ জন পাহাড়িকে আটক করেছে এবং আটককৃতদের মধ্যে ২ জনকে রিমান্ডে নিয়েছে।
বিবৃতিতে তারা অবিলম্বে পাহাড়ি গ্রামবাসীদের উপর হামলাকারী বিজিবি, পুলিশ ও সেটলারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ, বাবুছড়ার যত্ন মোহান কার্বারী পাড়ায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর স্থাপন প্রক্রিয়া বন্ধ করে বিজিবি সদস্যদের সরিয়ে নেয়া, পাহাড়ি গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ষড়যন্ত্রমূলক মামলা প্রত্যাহার ও আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও সেনা-বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে জমি বেদখলের মাধ্যমে পাহাড়ি উচ্ছেদ বন্ধ করার জোর দাবি জানান। অন্যথায় আবারো কঠোর কর্মসূচি ঘোষনা করার হুঁশিয়ারী দেন তারা।
উল্লেখ্য, গত ১০ জুন বাবুছড়ার যত্ন মোহন কার্বারী পাড়ায় বিজিবি, পুলিশ ও সেটলারদের যৌথ হামলায় ১৮ জন পাহাড়ি নারী-পুরুষ আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে গত ১১ জুন খাগড়াছড়িতে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে তিন সংগঠন এ সড়ক অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়।
———————
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।