খাগড়াছড়িতে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপন দিবসে আলোচনা সভা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ১০ মার্চ ২০২৫
পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি উত্থাপন’ দিবসে খাগড়াছড়িতে আলোচনা সভা করেছে ইউপিডিএফ, খাগড়াছড়ি ইউনিট।
আজ সোমবার (১০ মার্চ ২০২৫) সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এলাকায় এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
“আপোষ চুক্তি নয়, পূর্ণস্বায়ত্বশাসনই পার্বত্য চট্টগ্রামের একমাত্র সমাধান, আসুন জাতীয় অস্তিত্ব ভূমি ও নারীর সম্ভ্রম রক্ষার্থে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় মুক্তির আন্দোলন বেগবান করি” এই শ্লোগানে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি ইউনিটের সমন্বয়ক অংগ্য মারমা।
ইউপিডিএফ সংগঠক প্রকাশ চাকমা সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি অনিমেষ চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা। এছাড়া সভা মঞ্চে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় অংগ্য মারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তির প্রায় দশ মাস আগে ’৯৭ সালের ১০ মার্চ পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ডাক ছিল জনগণের সঠিক দাবি। সে সময় জেএসএস ও সরকারের মধ্যে চুক্তি হওয়ার যে আভাস পাওয়া যাচ্ছিল তাতে পাহাড়ি গণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ বুঝতে পেরেছিলেন যে, আসন্ন চুক্তিতে সরকার প্রতারণা করতে যাচ্ছে, এতে নিপীড়িত জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না।
তিনি আরো বলেন, জেএসএস আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করলেও শেষ পর্যন্ত তারা মূল দাবি থেকে সরে গিয়ে ’৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের সাথে আপোষের মাধ্যমে যে চুক্তি করেছে তাতে তিন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের আশঙ্কাই সত্যি হয়েছিল। সত্যিকার অর্থেই সরকার জেএসএস তথা পাহাড়ি জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে। এখন জেএসএস নিজেই এই প্রতারণা বুঝতে পারছে, তাদের কথাবার্তায় তা প্রতিফলিত হচ্ছে।
অংগ্য মারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে নতুন করে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি নিয়ে আন্দোলন শুরু করতে হতো না যদি পার্বত্য চুক্তির মধ্যে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতো। পার্বত্য চট্টগ্রামে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিপীড়িত জনগণের মুক্তির জন্য পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের কোন বিকল্প নেই। জনগণের রাজনৈতিক মুক্তির সনদ হচ্ছে এই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন। আর পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে জনগণের অধিকার আদায়। তাই আমরা আপোষহীনভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই উল্লেখ করে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত পরিহারের মাধ্যমে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জাতীয় মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
পিসিপি নেতা অনিমেষ চাকমা বলেন, পাহাড়ের অস্তিত্ব আজ সংকটে, সংগ্রাম ছাড়া বিকল্প নেই নেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নামে একটি চুক্তি হলেও পাহাড়ের মানুষ অধিকার পায়নি এবং নিপীড়ন থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তাই পূর্ণস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে আন্দোলনে এগিয়ে আসতে হবে।
বরুন চাকমা বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আমরা অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত পাহাড়ের মাটি ছেড়ে দেব না। পাহাড়কে বাঁচাতে অনেক নেতা শহীদ হয়েছেন। তারপরও আমাদের আন্দোলন চলমান রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, শাসকগোষ্ঠিই হচ্ছে আমাদের প্রধান শত্রু। কারণ তারাই পাহাড়ে সামরিক শাসনের মাধ্যমে পাহাড়ি জনগণকে অধিকার বঞ্চিত রেখে যুগের পর যুগ নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে, ভূমি কেড়ে নিচ্ছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে পাহাড়িরা প্রতিবাদ করলেই তাদের ওপর দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। তাই শাসকগোষ্ঠির এই নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই-সংগ্রাম জারি রাখতে হবে।
তিনি জাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আদায়ের সংগ্রামে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।