খাগড়াছড়িতে বৌদ্ধ ভিক্ষু হত্যা ও চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ভিক্ষুর ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশাল মানববন্ধন

0

চট্টগ্রাম ।। খাগড়াছড়ি সদরের গুগড়াছড়ি ধর্মসুখ বৌদ্ধ বিহারের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ ভদন্ত বিশুদ্ধা মহাথেরোকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা ও চট্টগ্রাম বায়েজীদস্হ মাঝের ঘোনা এলাকায় জুম্ম চাদিগাঙ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত জ্ঞান জ্যোতি ভিক্ষুকে কুপিয়ে জখম করার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম নগরীতে বিশাল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন চট্টগ্রামস্থ সচেতন ছাত্র-যুব-নারী ও নাগরিক সমাজ।

আজ শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২) বেলা ৩টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে এই কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনের আগে এক বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি চট্টগ্রাম নন্দকানন বৌদ্ধ বিহার থেকে শুরু হয়ে চেরাগী পাহাড় প্রদক্ষিণ করে প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে জুম্ম চাদিগাঙ সার্বজনীন বৌদ্ধ  বিহারের সভাপতি চৈতন্য বিকাশ চাকমা (আন্দোলন)- এর সঞ্চালনায় ম্রাপাইং মারমা (নেভী)-এর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জুম্ম চাদিগাঙ সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ (ভিকটিম) ভদন্ত জ্ঞান জ্যোতি ভিক্ষু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল-এর চট্টগ্রাম অঞ্চল(পূর্ব-৩) এর সভাপতি এডভোকেট ভূলন ভৌমিক, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের কেন্দ্রীয় নেতা ও প্রগতিশীল চিকিৎসক ডাক্তার সুশান্ত বড়ুয়া, চট্টগ্রাম নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার অধ্যক্ষ ও চবি পালি বিভাগের শিক্ষক ডক্টর জিনবোধি ভিক্ষু, চবি’র পালি বিভাগের সভাপতি ডক্টর জ্ঞান রত্ন মহাস্থবির, ধর্ম আলো বৌদ্ধ বিহার কার্যকারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অংক্যচিং মারমা, সার্বজনীন শ্রী শ্রী ত্রিপুরা বিতা রাধা কৃষ্ণ মন্দির কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক পরেশ ত্রিপুরা, মৈত্রী বনবিহারে উপেদষ্টা ধিমান চাকমা, হিল চাদিগাং বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ সাধনা জ্যোতি মহাস্থবির, ইঞ্জিনিয়ার মহিনী রঞ্জন চাকমা প্রমুখ।

অধ্যাপক ড. জ্ঞানরত্ন মহাস্থবির বলেন, শান্তিপূর্ণ ভিক্ষুরা সহজে রাজপথে নামে না। কিন্তু তাঁরা আজ নামতে বাধ্য হয়েছে। এদেশ বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও সভ্যতায় সমৃদ্ধ। কিন্তু ইতিহাসকে অস্বীকার করে বার বার ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং হচ্ছে। খাগড়াছড়িতে বিশুদ্ধা মহাথেরোকে হত্যা এবং চট্টগ্রামে জ্ঞান জ্যোতি ভিক্ষুকে হত্যার উদ্দেশ্য হামলা একই বিষয়ের প্রতিনিধিত্ব করে।

অধ্যাপক ড. জিনবোধি মহাস্থবির বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের উপর বার বার হামলার বিচার না হওয়ার কারণে ঘটনাগুলো পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। অবিলম্বে হত্যাকারী ও হামলকারীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে। অন্যথা বাংলার বৌদ্ধ সমাজ রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।

ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, সারাদেশে পরিস্থিতি এমন খারাপ হয়েছে যে ধর্মীয়গুরু হত্যার প্রতিবাদে ধর্মীয়গুরু ও ধর্মাবলম্বীদের রাজপথে নেমে আন্দোলন করতে হয়। অথচ চাইলে প্রশাসন এসব স্পর্শকাতর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে পারে। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলের কোন প্রতিবাদ কিংবা প্রশাসনের উদাসীনতা এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে উৎসাহী হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ঘটনা সংঘটিত হয়েছে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনী দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। অবিলম্বে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার করতে হবে।

এ্যাডভোকেট ভূলন ভৌমিক বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারা দেশে আজ সংখ্যালঘু জনগণ চরম উদ্বেগের মধ্যে দিনযাপন করছে। সংখ্যালঘু জনগণের উপর যে নির্যাতন ও নিপীড়ন চলছে তা বন্ধ করতে হবে।

এছাড়াও মানববন্ধনে সংহতি জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর, ত্রিরত্ন সেবা পরিষদ, পুদেবং ধর্ম সদক, উজেবং বৌদ্ধ ধর্ম পদত, পানছড়ি আর্য্য ঐক্য পরিষদ, রিদিসুদুম জয়েন্ট এসোসিয়েশন, পাহাড়ি সুশীল সমাজ চট্টগ্রাম মহানগর, এফ জে ফগদাং, মারমা এসোসিয়শন অব বাংলাদেশ, ত্রিরত্ন সংঘ, আদিবাসী শ্রমজীবি কল্যাণ পরিষদ, মারমা ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি, বড়গাং বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি, মৈত্রী বনবিহার পরিচালনা কমিটি, কহক বুড্ডিস ইউনিটি, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভা, হিল চাদিগাং বৌদ্ধ বিহার পরিচালনা কমিটি, সার্বজনীন মহামুণি বৌদ্ধ বিহার, ফরাহ রংখ্রেদ ক্যং পরিচালনা কমিটি, মারমা যুব সমাজ, মারমা যুব সংঘ, মহেশখালী ছাত্র উন্নয়ন সংসদসহ বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠন।

মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল প্রেসক্লাব থেকে চেরাগী পাহাড় হয়ে আবার নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের সামনে গিয়ে শেষ হয়।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More