খাগড়াছড়িতে শহীদ মিটন চাকমা’র স্মরণে শোকসভা

0

শোকসভায় বক্তব্য রাখছেন ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা। ছবি: প্রতিনিধি

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফ সংগঠক ও সাবেক ছাত্রনেতা শহীদ মিটন চাকমা’র স্মরণে শোকসভা করেছে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি সদর ইউনিট।

আজ বুধবার (২০ নভেম্বর ২০২৪) সকাল সাড়ে ১০টায় ‘শহীদ মিটনসহ শত শহীদের আত্মবলিদানে বলিয়ান পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের লড়াই জয়যুক্ত হবেই’ এই শ্লোগানে খাগড়াছড়ি সদর এলাকায় এই শোকসভার আয়োজন করা হয়।

শোকসভায় ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমার সভাপতিত্বে ও লালন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুবফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বরুন চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ চাকমা এবং জনপ্রতিনিধি নিলাঙ্কর ত্রিপুরা ও কান্তি লাল চাকমা।

শোকসভা শুরুর আগে শহীদ মিটন চাকমার জীবন বৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সদস্য জেসি চাকমা। এরপর মিটন চাকমার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

শহীদ মিটন চাকমার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা-সম্মান জানানো হচ্ছে। 

ইউপিডিএফ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন যথাক্রমে অংগ্য মারমা, বরুন চাকমা, নীতি চাকমা ও অনিমেষ চাকমা। এরপরে শিশু-কিশোর ও সাধারণ জনতা একে একে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শোকসভায় বক্তব্য শুরুর আগে শহীদ মিটন চাকমার সম্মানে দাঁড়িয়ে ১ মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

শহীদ মিটন চাকমার সম্মানে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হচ্ছে। 

শোকসভায় ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা বলেন, কমরেড মিটন চাকমার স্মরণে এভাবে শোকসভা করতে হবে আমি ভাবতে পারিনি। তিনি গত ১০ নভেম্বর  পানছড়িতে সন্তুচক্রের অতর্কিত হামলায় নিহত হন।

অংগ্য মারমা উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে কে কে সংঘাত চান না এমন প্রশ্ন করলে উপস্থিত সকলে হাত উঁচিয়ে ‘আমরা সংঘাত চাই না’ বলে মত দেন।

তিনি সন্তু গ্রুপের উদ্দেশ্যে বলেন, বর্তমানে সন্তু লারমা শত্রুর সাথে বন্ধু এবং বন্ধুর সাথে শত্রুর ভূমিকায় রয়েছেন। অর্থাৎ আসল শত্রু সেনাবাহিনীর সাথে বন্ধুত্ব আর স্বজাতি ভাইদেরকে শত্রু মনে করছেন।

অংগ্য মারমা সন্তু লারমার নির্মূল নীতির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, সন্তু লারমা ও তার দল জেএসএস এখনো সেই পুরোনো ইউপিডিএফ নির্মূল নীতি থেকে সরে দাঁড়ায়নি। তাদের মনে রাখা দরকার বর্তমান সময়ে এসে কেউ কোন দলকে নির্মুল করতে পারবে না। ইউপিডিএফ একটি জনগণের পার্টি। জনগণের সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়ে ইউপিডিএফ তার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কাজেই জেএসএস’র উচিত ইউপিডিএফ নির্মূল নীতি থেকে সরে এসে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করা।

ইউপিডিএফের ওপর দমন-পীড়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সরকার- সেনাবাহিনীসহ সমস্ত অপশক্তিকে মোকাবিলা করে ইউপিডিএফ লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বান্দরবানসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে যেখানে অন্যায়-অবিচার, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা ঘটছে তার বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ সোচ্চার ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

তিনি আগামী দিনে অধিকার প্রতিষ্ঠার বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে জনগণকে ইউপিডিএফের পাশে থাকার এবং সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী নীতি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান এই ভ্রতৃঘাতি সংঘাত পুরুষদের চেয়ে নারীদের ওপর বেশি প্রভাব পড়ে। কারণ নারীদেরকে স্বামীহারা, সন্তানহারা হতে হয়।

তিনি আরো বলেন, সরকার-সেনাবাহিনী কখনো চায় না আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। তাই বিভিন্নভাবে চক্রান্ত করে বিভিন্ন সংগঠনকে লেলিয়ে দিয়ে সংঘাতকে জিইয়ে রেখেছে। বর্তমানে ‘অস্ত্র উদ্ধার’ নাটক করে সেনা অভিযান চালিয়ে প্রমোশন বাণিজ্য চলছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি শাসকগোষ্ঠির সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভুমিকা রাখতে নারীদেরকে আন্দোলনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

ছাত্রনেতা অনিমেষ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের ন্যায্য আন্দোলনকে ধ্বংস করতে আন্দোলনকারীদের একে একে খুন করা হচ্ছে। যার কারণে আমরা হারিয়েছি মিঠুন চাকমা, পলাশ, তপন,এলটন, বিপুল সুনীল, লিটনসহ অনেক সম্ভাবনাময় সহযোদ্ধাদের। যারা পাহাড়ে সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। সর্বশেষ সন্তু গ্রুপের সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দিয়ে মিটন চাকমাকে খুন করা হয়েছে।  

তিনি ছাত্র সমাজকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে আগামীতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার আহ্বান জানান।

যুবনেতা বরুন চাকমা বলেন, বর্তমান সংঘাতে সরকার-শাসকশ্রেণিই লাভবান হচ্ছে। শাসকশ্রেণি দালাল-সুবিধাবাদীদের লেলিয়ে দিয়ে সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। সরকার-সেনাবাহিনীর এই ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে কারা এই সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে সেটা খুবই পরিস্কার।

তিনি আরো বলেন, এই সংঘাতকে বন্ধ করার জন্য নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় প্লাফরম সংঘাত ও বৈষম্য বিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন এবং ভারত, আমেরিকা, কোরিয়া, ফ্রান্স বিভিন্ন দেশে বসবাসরত পাহাড়িদের পক্ষ থেকে ‘এগত্তর’ বা ঐক্যের আহ্বান জানানো হলেও কেন জেএসএস সন্তু গ্রুপ ও তাদের দোসররা এতে সাড়া দেয়নি এবং কেন তারা ছাত্রদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করেছে সেটা সকলের বুঝা দরকার।

বরুন চাকমা বলেন, আমরা জেল-জুলুম, খুন-গুমসহ সকল বাধা উপেক্ষা করে  সরকার-সেনাবাহিনীর সমস্ত চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এখনো রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছি। যার কারণে শাসকচক্র, সেনাবাহিনী ইচ্ছামত তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে পারছে না।

জনপ্রতিনিধি নিলাঙ্কর ত্রিপুরা বলেন, জুম্ম জনগণের যেকোন দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দরকার। আমরা যেন দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে পারি সে আহ্বান জানাচ্ছি।

আরেক জনপ্রতিনিধি কান্তি লাল চাকমা বলেন, আমার বলার থাকলেও বলতে পারছি না। কারা কি করছে সেটা সবার কাছে পরিস্কার।

শোকসভা শেষে শহীদ মিটন চাকমার রাজনৈতিক জীবনের নানা কর্মকাণ্ডের স্থিরচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

ছবি দেখছেন শোকসভায় অংশগ্রহণকারীরা।

ছবি দেখছেন শিশুরা

ছবি দেখছেন শিশুরা

উল্লেখ্য গত ১০ নভেম্বর ২০২৪ খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সন্তু লারমার লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অতর্কিত হামলায় মিটন চাকমা নিহত হন।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More