খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ

0


খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

খাগড়াছড়ি সদরের সিঙ্গিনালায় ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বেলা ২:৩০টার সময় হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ এবং নারীর সম্ভ্রম ও সামাজিক সুরক্ষা কমিটির ব্যানারে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।

বিক্ষোভ মিছিলটি স্বনির্ভর থেকে শুরু করে জেলা পরিষদ, নারাঙহিয়া রেডস্কোয়ার হয়ে উপজেলা পরিষদ এলাকা প্রদক্ষিণ করে আবার স্বনির্ভরে এসে খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কের ওপর সমাবেশ করা হয়। এতে উক্ত সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।


সমাবেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ানের সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নীতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন নারীর সম্ভ্রম ও সামাজিক সুরক্ষা কমিটির সদস্য সচিব উর্মি চাকমা এবং সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রাঞ্জল চাকমা।

সমাবেশে সভাপতিত্ব বক্তব্যে কণিকা দেওয়ান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারী ধর্ষণের শিকার হলে ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন মহল থেকে নানা অপতৎপরতা চালানো হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি কর্তৃক পাহাড়ি নারী ধর্ষণ হলেও পাহাড়ি কর্তৃক এ যাবত কোন বাঙালি নারী ধর্ষণের কোন নজির নেই।


তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পেছনে প্রশাসনের ষড়যন্ত্র রয়েছে উল্লেখ কর বলেন, পাহাড়ে শান্তি সম্প্রীতির বিনষ্টের মূলহোতা পাহাড়ে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো। তারা পাহাড়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনষ্ট করার লক্ষ্যে ঠ্যাঙাড়ে বাহিনী গঠন করে পাহাড়ি দিয়ে পাহাড়িকে হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। গত ৫ আগস্ট চেঙ্গী স্কোয়ারে তারা ঠ্যাঙাড়ে সন্ত্রাসীদের দিয়ে গণতান্ত্রিক মিছিলে হামলা চালিয়ে এক মাকে হত্যার চেষ্টা করেছে।

তিনি আরো বলেন, ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণীর ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় নামে তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালায় ও লাঠিচার্জ করে। এতে স্পষ্ট হয় পাহাড়ে কারা ধর্ষকদের রক্ষায় তৎপর রয়েছে।

তিনি ধর্ষণসহ অন্যায় দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই-সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৃহত্তর আন্দোলনের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠির সকল ষড়যন্ত্র ভেস্তে দিতে হবে।

সমাবেশ থেকে তিনি অবিলম্বে সিঙ্গিনালায় ষ্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িত সকল ধর্ষকদের গ্রেফতারপূর্বক বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান।

তিনি ধর্ষণের প্রতিবাদে ও ধর্ষকদের দ্রুত শাস্তির দাবিতে জুম্ম ছাত্র জনতার ঘোষিত বৃহস্পতিবারের আধাবেলা সড়ক অবরোধের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান।


সমাবেশে উর্মি চাকমা ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থী ধর্ষণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, আমি কোনো পার্টির নির্দেশে এখানে আসিনি। আমাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সামাজিক ও অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাজপথে নেমেছি। ৮ম শ্রেণির ছাত্রীকে যখন ধর্ষণ করে তখন কি প্রশাসন নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়?

তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, প্রশাসন যদি ধর্ষকের শাস্তি দিতে না পারে তাহলে তাদেরকে জনতার (নারীদের) হাতে তুলে দেওয়া হোক। জনতা তাদের বিচার করবে। কোনভাবেই ধর্ষকদের রক্ষা করার চেষ্টা করবেন না।

ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ধর্ষকদের যদি সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেয়া না হয় তাহলে তারা পরবর্তীতে আরো ধর্ষণ করবে।

প্রাঞ্জল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে গতকালকের ধষণের ঘটনা নতুন নয়। বিচারহীনতার কারণে প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। কখনও ভাইবোন ছড়ায়, কখনও সিন্দুকছড়িতে কখনও রাস্তাঘাটে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশের আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়ার কারণে ধর্ষকরা পার পেয়ে যায়।

তিনি অবিলম্বে ধর্ষকদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য নারীদের প্রতি আহ্বান জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More