খাগড়াছড়িতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের দ্রুত সাজার দাবিতে লক্ষীছড়িতে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল

0


লক্ষীছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

খাগড়াছড়ির ভাইবোনছড়ায় ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং ধর্ষকদের ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে’ দ্রুত সাজা কার্যকর করার দাবিতে লক্ষীছড়িতে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।

আজ শনিবার (২৬ জুলাই ২০২৫) সকাল ১১টায় লক্ষীছড়ি উপজেলার বর্মাছড়ি ইউনিয়নস্থ হুদুকছড়িতে এই মিছিলের আয়োজন করা হয়।

“পাহাড়ে নারী নিরাপত্তার প্রধান হুমকি সেনা-সেটলার প্রত্যাহার কর” এই ব্যানার শ্লোগানে মিছিল পরবর্তী প্রতিবাদ সমাবেশে পিসিপি’র লক্ষীছড়ি উপজেলা সাধালণ সম্পাদক রূপায়ন চাকমার সভাপতিত্বে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের লক্ষীছড়ি উপজেলা শাখার অর্থ সম্পাদক মনিকা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন লক্ষীছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক এলি চাকমা।

সমাবেশে ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমা বলেন, পাহাড়ে আবারো সেনা-শাসন বৃদ্ধি করা হয়েছে। পাহাড়ি জনগণ মনে করেছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ড. ইউনুস ক্ষমতা গ্রহণের পর পাহাড়ে কিছুটা হলেও শান্তির সুবাতাস ফিরে আসবে। কিন্তু তা আমরা দেখতে পাইনি। দেশে যে শাসক আসুক না কেন পার্বত্য চট্রগ্রামে ক্ষেত্রে তারা একই নীতি অনুসরণ করে দমণ পীড়ন চালায়। যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ে সেনাবাহিনীর অত্যাচার নিপীড়ন নির্যাতনে পাহাড়ি জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এই সেনাাবাহিনী পার্বত্য চট্রগ্রামে জুম্ম জনগণের উপর এক ডজনের অধিক নৃশংসভাবে গণহত্যা চালিয়েছে। এই বিচার পাহাড়ি জনগণ এখনও পায়নি। পাহাড়ে এ যাবত পাহাড়ি নারী ধর্ষণের ঘটনার কোন বিচার ও ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হওয়ায় ভাইবোনছড়ায় স্কুলছাত্রীকে গণধর্ষণের মতো ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।


রপায়ন চাকমা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত ভাইবোনছড়ায় কিশোরী ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৪ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকী ২ জন এখনো পলাতক রয়েছে। পুলিশ কেন তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারছে না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এর আগে বান্দরবানে চিংমা খেয়াং নামে এক গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণের পরে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সে ঘটনায় জড়িত কাউকেও এখনো গ্রেফতার করা হয়নি।

তিনি আরো বলেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি ডামি নির্বাচনে ২৭টি ভোট কেন্দ্রে শূন্য ভোটের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের আগাম জানান দিয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার বঞ্চিত পাহাড়ি জনগণ। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণই সবচেয়ে বেশি নিপীড়ন-নির্যাতন ও শোষণ-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক মাস যেতে না যেতেই দীঘিনালা, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে পাহাড়িরা সাম্প্রদায়িক হামলা ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। জুনান, রুবেল, ধনরঞ্জন ও অনিককে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনার বিচার নিয়েও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

এলি চাকমা বলেন, পাহাড়ে এ যাবত যতগুলো ধর্ষণ, অন্যায়-দমনপীড়নের ঘটনা ঘটেছে হয়েছে তার কোনটিরই বিচার হয়নি। ফলে দিন দিন ধর্ষণ ও নিপীড়নের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়েও পাহাড়ের মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

তিনি অবিলম্বে ভাইবোছড়ায় স্কুলছাত্রী ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত সকল ধর্ষককে গ্রেফতারপূর্বক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দ্রুত সাজা কার্যকর করা, পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার ও সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন ও স্বায়ত্তশাসন প্রদানের মাধ্যমে পাহাড়ে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More