খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে রামগড়ে পাহাড়ি নারীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

রামগড়ে পাহাড়ি নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে ও অভিযুক্তদের গ্রেফতার-শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, রামগড় উপজেলা শাখা। ছবি: প্রেসক্লাব, খাগড়াছড়ি
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ২৬ আগস্ট ২০২৪
খাগড়াছড়ির রামগড় থানার পাতাছড়া ইউনিয়নের রাজার ঘাট গ্রামে সেটলার কর্তৃক এক পাহাড়ি নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়ি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, রামগড় উপজেলা শাখা।
আজ সোমবার (২৬ আগস্ট ২০২৪) সকাল ১০টায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে রামগড় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ভিকটিম ও তার মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রামগড় উপজেলা শাখার সভাপতি গুলোমণি চাকমা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, গত ২২ আগস্ট ২০২৪ রাত আনুমানিক ১১.০০ ঘটিকায় রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের রাজার ঘাট গ্রামে এক পাহাড়ি বিধবা গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করার ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষকদের মধ্যে তিন জনের নাম এবং ঠিকানা জানা গেছে। তারা হলো- ১. মো. ইউসুফ, পিতা – অজ্ঞাত ২. মো. রানা, পিতা- অজ্ঞাত ৩. মো. ফয়সাল, পিতা- অজ্ঞাত। তাদের সকলের ঠিকানা হলো- নাকাপা, রামগড়। বাদবাকী ০৩/০৪ জনের নাম এখনো অজ্ঞাত। উক্ত ঘটনার পর ভিকটিম পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং এলাকায় জনমনে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে লিখিত বক্তব্যে গুলোমণি চাকমা বলেন, ঘটনার রাত আনুমানিক ১০টায় সেটেলারদের ০৬/০৭ জনের একটি দল ভিকটিমের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তারা ভিকটিম নারী (বয়স ৫০) ও তার ১৫ বছরের মেয়েকে জোরপূর্বক ইউসূফের কলাবাগানের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে দুর্বৃত্তদের কবল থেকে তার মেয়ে কোনমতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও তার মার পক্ষে সেটা সম্ভব হয়নি। দুর্বৃত্তরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
ভিকটিমের মেয়ে গ্রামের লোকজনকে ঘটনা সম্পর্কে জানালে গ্রামবাসীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটমকে উদ্ধার করে। তবে তার আগেই গ্রামবাসীদের আসার সংকেত পেয়ে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়। ভিকটিম চিজিবি চাকমা ধর্ষকদের মধ্যে তিন জনকে চিনে ফেলে, যাদের নাম উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। গতকাল উক্ত ঘটনায় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে রামগড় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে পুলিশ আসামীদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি।
এতে তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি নারীদের ওপর ধর্ষণ ও যৌন হামলার ঘটনা নতুন নয়। মূলতঃ বিগত শতকের ৮০-র দশক থেকে পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি নারীরা ধর্ষণসহ যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে আসছ। এ সময় অসংখ্য পাহাড়ি নারী ও শিশু ধর্ষণ, গণ ধর্ষণ ও ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হয়েছে। এমনকি অনেককে ধর্ষণের পর খুন করা হয়েছে। কিন্তু দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া আজ পর্যন্ত অপরাধীদের শাস্তি হয়নি। এমনকি ২৮ বছর পরও কল্পনা চাকমার অপহরণকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। চিহ্নিত অপহরণকারী ও ধর্ষকদের সাজা হয় না বলেই এ ধরনের যৌন হামলার ঘটনা বার বার ঘটে চলেছে। অচিরেই এই বিচারহীনতা ও জবাবদিহিহীনতার অবসান হওয়া উচিত। আমরা আশাকরি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে এ বিষয়ে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে।
সংবাদ সম্মেলনে ভিকটিম নারী সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন এবং পরদিন তিনি রামগড় থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান।
ভিকটিমের মেয়ে বলেন, ধর্ষকরা আসার পর আমাকে ঘরের বাইরে কলাবাগানে দিকে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করলে কোনমতে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যাই এবং প্রতিবেশি মুরুব্বী কান্তিয়া ত্রিপুরাকে ঘটনাটি জানাই। খবর পেয়ে কান্তিয়া ত্রিপুরাসহ লোকজন ছুটে গেলে ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।
কান্তিয়া ত্রিপুরা বলেন, ভিকটিমের মেয়ে ঘটনাটি জানানোর পর আমরা ভিকটিমকে উদ্ধারের জন্য দ্রুত সেখানে গেলে তখন ধর্ষকরা পালিয়ে যায়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ৫ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলো হলো:
১) অবিলম্বে ধর্ষক ও তাদের সহযোগিদের গ্রেফতার ও দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
২) গ্রামের মুরুব্বী ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ভিকটিম ও তার মেয়ের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৩) ভবিষ্যতে যাতে কোন নারী ধর্ষণসহ যৌন সহিংসতার শিকার না হয় তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
৪) ইতিপূর্বে সংঘটিত সকল ধর্ষণ ঘটনার বিচার এবং দোষীদের শাস্তি দিতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
৫) পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণসহ সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত ও বিচারের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংগঠনকে যুক্ত করতে হবে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।