খাগড়াছড়িতে কয়েকটি বিদ্যালয়ে সেনাবাহিনীর চিঠি : তিন সংগঠনের সমাবেশে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

0

খাগড়াছড়ি : গত ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও স্ব স্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতির দাবিসহ বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানারে খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভরে পিসিপি, ডিওয়াইএফ ও এইচডব্লিউএফ’র আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে খাগড়াছড়ি সদরের কয়েকটি বিদ্যালয়ে চিঠি দিয়েছে সেনাবাহিনী। এছাড়া ভবিষ্যতেও এ ধরনের সমাবেশে অংশগ্রহণ করলে শিক্ষার্থীদের বিরদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চিঠিতে।

“পিসিপি, এইচডব্লিউএফ ও ডিওয়াইএফ কর্তৃক পরিচালিত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ প্রসংগে” শিরোনামে সদর দপ্তর খাগড়াছড়ি জোন, খাগড়াছড়ি সেনানিবাসের তারালাপনী: সামরিক-২১৫৮ থেকে ০১ জুলাই ২০১৮ ইস্যুকৃত চিঠিতে (যার নং-২৩.০১.৯৩০.৩৫৬.০১.০৫৬.০১.০৭.১৮) জোন কমাণ্ডারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন মেজর মোঃ মাকসুদুল আলম।

চিঠিতে বলা হয়, ‍“ গত ৩০ জুন ২০১৮ তারিখ ১০১৫-১১৪৫ ঘটিকা পর্যন্ত খাগড়াছড়ি শহরের স্বনির্ভর এলাকায় পিসিপি, এইচডব্লিউএফ ও ডিওয়াইএফ কর্তৃক “পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল কর, সংবিধানে স্ব স্ব জাতিসত্তার স্বীকৃতি দাও, সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণ ভূমি বেদখল, যৌথ অভিযানের নামে ধরপাকড়, হয়রানি, লুটপাট, নারী নির্যাতন, খুন ও গুম বন্ধ কর এবং ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলা তুলে নাও” শীর্ষক ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল পরিচালনা করা হয়। উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশ ও  মিছিলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ না করার ব্যাপারে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। তথাপী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অবমাননা করে আপনাদের স্কুলের কতিপয় শিক্ষার্থীদের উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়, যাদের আলোকচিত্র এতদসঙ্গে সংযুক্ত করা হলো”।

এতে নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, “উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনা অবমাননা করে আপনাদের বিদ্যালয়ে যে সকল শিক্ষার্থীগণ উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে তাদের বিরুদ্ধে প্র্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এছাড়া ভবিষ্যতে কোন শিক্ষার্থী এরূপ বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে অনুরোধ করা হলো। এছাড়া বিষয়টি বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের অবহিত করার জন্যও অনুরোধ করা হলো”।

পেরাছড়া উচ্চ বিদ্যালয়, গাছবান উচ্চ বিদ্যালয়, টিউফা আইডিয়াল স্কুল এবং টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষককে উক্ত চিঠিটি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন শিক্ষক চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যালয়ের ভালোমন্দ তদারকির দায়িত্ব সরকারের শিক্ষা বিভাগের। কিন্তু সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কেন এ ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। এ জন্য তারা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন বলেও জানান।

এদিকে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা ও সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা গতকাল শনিবার সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এতে তারা বলেন, গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী এবং এটি দেশের জনগণ তথা ছাত্র সমাজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার চক্রান্ত।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের এক নেতা সিএইচটি নিউজ ডটকমকে বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণ প্রত্যেক নাগরিকের একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। শুধু খাগড়াছড়িতে নয়, সারাদেশে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমাবেশে অংশগ্রহণ করে থাকে।

তিনি সেনাবাহিনীর এই নির্দেশ প্রদানকে পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সেনা নিয়ন্ত্রণ কায়েমের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেন এবং অবিলম্বে এই নির্দেশ সম্বলিত চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানান।
——————-
সিএইচটিনিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More