‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবসের’ সমাবেশে সেনা-পুলিশের হামলার নিন্দা

খাগড়াছড়িতে মঙ্গলবার আধাবেলা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে ৮ গণসংগঠন

0

সিএইচটি নিউজ ডটকম
Sorok aborodখাগড়াছড়ি: পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবসের’ শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সেনা-পুলিশের হামলার প্রতিবাদে ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমাসহ আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আগামী মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে ৮ গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটি।

আজ রবিবার (২৯ নভেম্বর) খাগড়াছড়ি সদরের তিনটি স্থানে জাতিসংঘ ঘোষিত ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবসে’ আট গণসংগঠন (পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, সাজেক ভূমি রক্ষা কমিটি, সাজেক নারী সমাজ, ঘিলাছড়ি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি ও প্রতিরোধ সাংস্কৃতিক স্কোয়ার্ড) সংহতি সমাবেশ করতে গেলে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হামলা, বেধড়ক লাঠিপেটায় নারীসহ ১৪ জন আহত এবং হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিরূপা চাকমা, একই সংগঠনের কর্মী দ্বিতীয়া চাকমা ও ২জন ছাত্রকে আটক করা হয়।

আট গণসংগঠনের কনভেনিং কমিটির আহ্বায়ক সোনালী চাকমা ও সদস্য সচিব অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতে উক্ত হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা আটককৃতদের কাল সোমবারের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আগামী মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

বিবৃতিতে তারা অভিযোগ করে বলেন, রবিবার সকাল ১০.৩০টায় খাগড়াছড়ি সদরের মধুপুরে অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে অতর্কিতে সেনা-পুলিশ হামলা চালায়। এতে ৩ নারীসহ কমপক্ষে ৮ জন গুরুতর আহত হয়। সেনা-পুলিশের বেধড়ক লাঠিপেটা ও বেয়নেটের আঘাতে দীপু ত্রিপুরা ও বিপ্লব চাকমা মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয়েছেন। সেনা-পুলিশের হামলায় সমাবেশে অংশগ্রহণকারীগণ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, সমাবেশও ভণ্ডুল হয়ে যায়।
এ ঘটনার ঘণ্টাখানেক পর ১১.৩০টায় স্বনির্ভর থেকে চেঙ্গীস্কোয়ারে আহুত সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিলে উপজেলা অফিসের সামনে আবারো হামলা চালানো হয়। এ সময় রাস্তা থেকে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমাকে সেনা-পুলিশ সদস্যরা আটক করে। এছাড়া স্বনির্ভর এলাকা থেকে জেএসসি (সদ্য সমাপ্ত হওয়া) পরীক্ষার্থী দীবিক্ষ দেওয়ান ও উপজেলা পরিষদ এলাকা থেকে খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্র জয়শীষ চাকমাকে আটক করা হয়েছে। সেনা-পুলিশ সদস্যরা লাঠিপেটা করে সমাবেশে যোগদানকারীদের তাড়িয়ে দেয়। এতে ৪ নারীসহ ৬ জন আহত হয়।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী প্রেরণা চাকমার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশ সদস্যরা আছাড় মেরে বুটের লাথিতে ভেঙে দেয়। ঘটনার ছবি-ভিডিও ধারণের সন্দেহ থেকে পুলিশ তার ফোন জব্দ করতে চায়। চ্যালেঞ্জ করলেও পুলিশ কোন কথা শোনেনি, ফোনে পুলিশি হামলার কোন ছবি বা ভিডিও ক্লিপস না পেলেও তার মোবাইল ফোন ভেঙে দেয়।

আট সংগঠনের নেতৃদ্বয় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘২৯ নভেম্বর হচ্ছে জাতিসংঘ ঘোষিত ফিলিস্তিনি সংহতি দিবস। সারা বিশ্বে ন্যায় বাংলাদেশের জনগণও এ দিবসের সাথে একাত্মতাবোধ করে। খোদ বাংলাদেশ সরকারও ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানায়। এ অবস্থায় খাগড়াছড়িতে জাতিসংঘ ঘোষিত দিবসে সংহতি জানাতে গিয়ে ৮গণসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর যেভাবে নিরাপত্তা বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বিচারে বেয়নেট চার্জ, লাঠিপেটা করে নারী-পুরুষ স্কুল-কলেজ ছাত্র-ছাত্রীকে জখম করেছে, তাতে পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ আরও বেশী ঘণীভূত হবে। সেনাবাহিনী কি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সরকারের ঘোষিত সমর্থন পরোয়া করে না এ প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, কতিপয় সেনা কর্মকর্তা জাতিসংঘের নীতিমালা পদদলিত করার ধৃষ্টতা কিভাবে দেখাতে পারে, এর পেছনে অন্য কোন আলামত আছে কিনা সে নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

জাতিসংঘের পরিচালিত বিভিন্ন শান্তি মিশনে অংশ নিলেও আদতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কতখানি শান্তিরক্ষার সহায়ক, পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সময় তাদের বিতর্কিত ভূমিকা জনমনে এ ব্যাপারে সংশয় আরও বদ্ধমূল হচ্ছে বলে নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন।

ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কোন শক্তি দমন করতে পারবে না মন্তব্য করে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনি জনগণের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বহুদূর এগিয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ ফিলিস্তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের প্রতি নৈতিকভাবে সব সময় পাশে থাকবে এবং সমর্থন দিয়ে যাবে।’

আটককৃতদের সোমবারের মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে আগামী মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) খাগড়াছড়ি জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ পালনের ঘোষণা দিয়েছে ৮গণসংগঠন।

এদিকে, গোটা খবংপুজ্জ্যাপাড়ায় হুমকিমূলক টহল জোরদার করে। চেঙ্গীনদীর পারে গিয়ে সমাবেশে যোগদানেচ্ছু লোকজনের মনে ভীতি সঞ্চার করে। বিকাল পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম নারাঙহিয়ার সংযোগস্থল সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সেনা টহল জোরদার রয়েছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ফিলিস্তিন সংহতি সমাবেশ থেকে ৮গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ‘৭১-এ গণহত্যার জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বানও জানাত। যা তারা আগাম প্রকাশও করেছিল।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আটক ২জন ছাত্রকে সন্ধ্যায় ছেড়ে দেওয়া হলেও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা ও সদস্য দ্বিতীয়া চাকমাকে ছেড়ে দেওয়া হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দায়েরর প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।
———————

সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More