খাগড়াছড়িতে যুব র‌্যালি ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত : সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসন দাবি

0

খাগড়াছড়ি প্র্রতিনিধি, সিএইচটিনিউজ.কম
বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল, বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দেয়ার প্রতিবাদ ও পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের” দাবিতে খাগড়াছড়িতে যুব র‌্যালী ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উদ্যোগে আজ ৯ আগস্ট, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত র্যালীটি খাগড়াছড়ি জেলা সদরের খবংপুয্যাস্থ ইয়ংস্টার ক্লাব থেকে শুরু হয়ে ফায়ার ব্রিগেড, বাস স্টেশন, চেঙ্গী স্কোয়ার, কলেজ গেট, উপজেলা পরিষদ ঘুরে স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতির ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।র‌্যালীতে বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৪ শতাধিক যুবক-যুবতী লাল পতাকা হাতে অংশ গ্রহণ করেন।র‌্যালীর সামনের সারিতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও ইউপিডিএফ-এর পতাকা প্রদর্শন করা হয়।র‌্যালীতে অংশগ্রহণকারীরা বাঙালি জাতীয়তা মানি না, পঞ্চদশ সংশোধনী আইন বাতিল কর, পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নাও, নিজের জাতি পরিচয় নিয়ে থাকব, বাঙালি হব না, যুব সমাজে জেগে ওঠ, অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও ‘… ইত্যাদি শ্লোগান সম্বলিত ফেস্টুন বহন করে

র‌্যালী শেষে স্বনির্ভরস্থ ঠিকাদার সমিতি ভবনের সামনে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা৷ অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সহ সাধারণ সম্পাদক সুপ্রীম চাকমা, কেন্দ্রীয় সদস্য মিন্টু ত্রিপুরা জিকো, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি আপ্রুসি মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি মাদ্রী চাকমা ও সাজেক নারী সমাজের সদস্য ও সাজেক ইউনিয়নের মেম্বার জ্যোত্‍স্না রাণী চাকমা৷ সমাবেশ পরিচালনা করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেমিন চাকমা

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একটি বহু জাতিক ও বহু ভাষিক রাষ্ট্র কিন্তু সরকার বাংলাদেশকে একজাতি রাষ্ট্রে পরিণত করতে সংবিধানের বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের ওপর বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে৷ যার মধ্যে দিয়ে সরকার এদেশের সংখ্যালঘু জাতিসমূহের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চাইছে৷

বক্তারা আরো বলেন, সরকার শুধু বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি, ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে পঞ্চদশ সংশোধনীতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রেখে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের স্থায়ীভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করেছে শুধু তাই নয়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে সংখ্যালঘু জাতিসমূহের মহান আত্মত্যাগ ও অবদানকে সম্পূর্ণ অস্বীকার এবং সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে নাগরিকগণের সংগঠন গড়ার স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণকে অতীতেও বাঙালি বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে৷ বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর ক্ষমতার দম্ভে মদমত্ত শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশকে একক জাতিরাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাহাড়ি জনগণকে বাঙালি হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ শেখ মুজিব ও উগ্রবাঙালি জাতীয়তাবাদী শাসকগোষ্ঠির চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তা মেনে নেয়নি৷ বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের চাপিয়ে দেয়া বাঙালি জাতীয়তাও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সংখ্যালঘু জাতির জনগণ কিছুতেই মেনে নেবে না

বক্তারা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত অব্যাহত রেখেছে৷ খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন আগেরচেয়ে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামের তেল-গ্যাস সহ খনিজ সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া চলছে পাহাড়িদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদের প্রক্রিয়াও অব্যাহত রয়েছে বক্তারা সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য যুব সমাজের প্রতি আহ্বান জানান

বক্তারা অবিলম্বে বিতর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের সকল সংখ্যালঘু জাতিসমূহকে নিজ নিজ জাতীয় পরিচয়ে সাংবিধানিক স্বীকৃতি, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করা, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহারপূর্বক সেনাশাসনের অবসান, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনক পুনর্বাসন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রকৃত শান্তি প্রতিষ্ঠার ল্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন মেনে নেয়ার জোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More