খাগড়াছড়িতে র্যাব-পুলিশের ব্যাপক বাধার মুখে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ডাকে ২১ ঘন্টার সড়ক অবরোধ পালিত, আটক ২
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
সিএইচটিনিউজ.কম
খাগড়াছড়িতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের ডাকা ২১ ঘন্টার সড়ক অবরোধ র্যাব-পুলিশের ব্যাপক বাধার মুখে সর্বাত্মকভাবে পালিত হয়েছে। ১০ জুন রবিবার সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং ১১ জুন সোমবার সকাল-সন্ধ্যা এ সড়ক অবরোধ পালিত হয়। অবরোধের কারণে খাগড়াছড়ি জেলা শহর ও উপজেলাগুলোতে দুরপাল্লা ও আভ্যন্তরীণ সড়কে কোন যান চলাচল করেনি।
পার্বত্য ভূমি কমিশনের একতরফা ও অবৈধ শুনানী বাতিল, প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি ও কমিশন আইনের বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক ধারা সংশোধনের দাবিতে খাগড়াছড়িতে ভূমি কমিশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রশাসনের বাধার প্রতিবাদে যুব ফোরাম এ সড়ক অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। অবরোধ চলাকালীন পুলিশ এক বাক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ ২ জনকে আটক করেছে।
প্রথম দিনের ৯ ঘন্টার অবরোধ চলাকালীন পুলিশ স্বনির্ভর বাজারের লন্ড্রি দোকানদার অংসে মারমা(২৭) পিতা উচাউ মারমা নামে এক ব্যক্তিকে বেদম লাঠিপেটা করে আহত করে। এছাড়া পুলিশ লোটন চাকমার ডেকোরেশান দোকান ভাঙচুর করে এবং বাচ্চু চাকমা নামে এক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ দফায় দফায় পিকেটারদের ধাওয়া করে এবং তাদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। পরে স্বনির্ভর ও নারাঙখিয়া এলাকায়র্যাবের সদস্যরা হানা দিয়ে পিকেটারদের ধাওয়া করে। এ সময় র্যাব-পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতিতে এলাকায় আতঙ্ক দেখা দেয়।
অবরোধের দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র্যাব ও পুলিশ খাগড়াছড়ি সদরের দক্ষিণ খবংপুজ্জে এলাকায় দফায় দফায় সাধারণ লোকজন ও পিকেটারদের ধাওয়া করে এবং পিকেটারদের লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এরপর র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা দক্ষিণ খবংপুজ্জে এলাকার কয়েকজন নারীর সাথে অশোভন আচরণ করে এবং এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করলে এলাকার নারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তোলে। নারীদের প্রতিরোধের মুখে পরে র্যাব ও পুলিশ সদস্যরা দক্ষিণ খবংপুজ্জে এলাকা থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। এছাড়া র্যাব ও পুলিশের অপর একটি দল স্বনির্ভর বাজার ও উত্তর খবংপুজ্জে এলাকায় ঢুকে পিকেটারদের ধাওয়া করে এবং দিনভর এলাকায় অবস্থান নেয়। তারা স্বনির্ভর বাজারের লন্ড্রি দোকানদার অংসে মারমাকে (২৭) পুনরায় মারধর করে এবং পরে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। র্যাব ও পুলিশের মারমুখী অবস্থানের কারণে এলাকার জনমনে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি নতুন কুমার চাকমা এক বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণ সড়ক অবরোধ চলাকালে পিকেটার ও সাধারণ জনগণের উপরর্ যাব ও পুলিশী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি র্যাব-পুলিশের হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, অন্যায়- অত্যাচার ও অনিয়মের বিরুদ্ধে অবরোধ, মিছিল-মিটিং ও সভা-সমাবেশ করা একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সরকার র্যাব-পুলিশকে ব্যবহার করে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে। এর মধ্যে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের চরম ফ্যাসিস্ট চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি র্যাব-পুলিশের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় খবংপুজ্জে নারীদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ভূমি রক্ষার লড়াইয়ে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। সকল নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিবৃতিতে তিনি ২১ ঘন্টার সড়ক অবরোধ সফল করায় সর্বস্তরের জনগণ, সকল যানবাহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। সরকারের সকল অন্যায়-অত্যাচারের বিরদ্ধে আরো বেশি সোচ্চার হওয়ার জন্য তিনি সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশনের চেয়াম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে ব্যবহার করে পাহাড়ি জনগণকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার পাঁয়তারা করছে। র্যাবকে রাস্তায় নামিয়ে সরকার খাদেমুল ইসলামকে রক্ষা করে জনগণের আন্দোলনকে দমনের চেষ্টা করছে। সরকারের এ ষড়যন্ত্র পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কিছুতেই সফল হতে দেবে না। তিনি বলেন, ভূমি কমিশনের এক তরফা ও অবৈধ শুনানী কার্যক্রম বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। যদি শুনানী কার্যক্রম বাতিল করা না হয় তাহলে পরবর্তীতে আরো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
তিনি অবিলম্বে ভূমি কমিশনের এক তরফা ও অবৈধ শুনানী বাতিল, কমিশন আইনের বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক ধারা সংশোধন, ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীকে অপসারণ ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতির জোর দাবি জানান।
উল্লেখ্য, পার্বত্য ভূমি কমিশনের চেয়ারম্যান খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী গত ফেব্রুয়ারী থেকে তিন দফা শুনানীর কার্যক্রম মুলতবীর পর ১০ ও ১১ জুন নতুন তারিখ ধার্য করায় ৩১ মে খাগড়াছড়িতে এক সমাবেশ থেকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ১০ জুন ভূমি কমিশন অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে। পূর্বঘোষিত এই ঘেরাও কর্মসূচিতে প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে বাধা প্রদান করে। খাগড়াছড়ি সদর, পানছড়ি, দিঘীনালা, মাটিরাঙ্গা সহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রশাসন ঘেরাও কর্মসূচিতে আসার পথে জনগণকে বাধা দেয় এবং ভাড়া করা গাড়িগুলো থানায় আটকিয়ে রাখে এবং মোবাইল কোর্ট বসিয়ে হয়রানি করে। খাগড়াছড়ির ভাইবোন ছড়া এলাকায় সেনা সদস্যরা নিজেরাই রাস্তায় গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে।