খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালন করেছে পিসিপি

0

PCP laxmichari, 14.02.17খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি।। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ির বিভিন্ন উপজেলায় স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস পালন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)।

‘সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধ সোচ্চার হোন’ এই শ্লোগানে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার উদ্যোগে সকাল ১১টায় খাগড়াছড়ি জেলা সদর এলাকায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা শুরুতে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মান জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সহ-সভাপতি তপন চাকমার সভাপতিতে ও সহ-সাধারণ সম্পাদক এলটন চাকমা সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক রিকো চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক রতন স্মৃতি চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পলাশ চাকমা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ১৯৮২ সালে ১৪ মার্চ স্বৈরাচার এরশাদ দেশে সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা দখল করার পর স্বৈরাচারী কায়দায় এদেশের জনগণের উপর শাসন-শোষণ, ধরপাকড়, নির্যাতন ও হত্যা, গুম, অপহরণের ঘটনাসহ নানান কর্মকাণ্ড করে গেলেও জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো নিরব ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু এদেশের ছাত্র সমাজ নির্ভয়ে স্বৈরাচারী এরশাদের সকল ধরনের ষড়যন্ত্র ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকে প্রতিবাদ প্রতিরোধের মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তারা সরকারের মজিদ খানের গণবিরোধী শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, সেনা-পুলিশের দমননীতি বন্ধ ও গণতন্ত্র ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তীব্র আন্দোলন জোরদার করে ছাত্র সমাজকে সংগঠিত করে স্বৈরাচার এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।

বক্তারা আরো বলেন, ‘৭১-এর পর থেকে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের উপর গণহত্যা, নির্যাতন, ধরপাকড়, ভূমি বেদখল, নারী ধর্ষণ, পাহাড়িদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, গুম, খুন ও অপহরণের মত ঘটনা প্রতিনিয়ত সংঘটিত করছে। তারই প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক পাহাড়ি ছাত্র-যুব-নারী ও জনগণকে আত্মবলিদান দিতে হচ্ছে। এখনো পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রমের উপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দমনমূলক অগণতান্ত্রিক ‘১১ নির্দেশনা’’ জারি রাখা হয়েছে, যার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের নব্য পাক বাহিনীরা অপারেশন উত্তরণের মাধ্যমে জনগণের উপর অন্যায় ধরপাকড়, বাড়ি ঘরে তল্লাশী, দমন-পীড়ন ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

বক্তারা বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের রক্ত ঝড়া দিনগুলো ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। তারা ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’ পালনের নামে অপসংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নানান অপকর্মের সাথে লিপ্ত হচ্ছে। যা সমাজ জাতির জন্য বড়ই ক্ষতিকর।

বক্তারা, বর্তমান সরকারের স্বৈরশাসকদের প্রতিহত করতে ৮৩’র স্বৈরাচার বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পার্বত্য চট্টগ্রামে নব্বই দশকের ছাত্র গণজাগরণকে পুন: উজ্জীবিত করে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলনকে জোরদার করার জন্য নতুন প্রজন্মের ছাত্র-যুব-নারী সমাজসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

দিবসটি উপলক্ষে লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার উদ্যোগেও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  এতে পিসিপি লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি রাজ চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নয়ন চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সমন্বয়ক রক্তিম চাকমা, ইউপিডিএফ লক্ষ্মীছড়ি এলাকার সংগঠক আপ্রুসি মারমা, পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অনিল চাকমা ও খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি রেশমি মারমা এবং গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ক্যামরন দেওয়ান।

এছাড়াও জেলার পানছড়ি, মহালছড়ি, দীঘিনালা, রামগড়, মাটিরাংগা ও মানিকছড়ি উপজেলায়ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে পিসিপি’র খাগড়াছড়ি জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সমর চাকমা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের মজিদ খানের কুখ্যাত শিক্ষানীতি বাতিল, বন্দী মুক্তি ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে ছাত্রদের সমাবেশে বিনা উস্কানিতে পুলিশ হামলা ও গুলি চালায়। ছাত্ররাও ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এদিন পুলিশের গুলিতে জাফর, জয়নাল, কাঞ্চন, দিপালীসহ সারাদেশে প্রাণ দেয় ১০ জন। গ্রেপ্তার হয় ১ হাজার অধিক। সেই থেকে এদেশের ছাত্র সমাজ ১৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

—————–

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More