গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ৩য় সম্মেলন সম্পন্ন : ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা

0
নিজস্ব প্রতিবেদক
সিএইচটিনিউজ.কম 
 
গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার ৩য় সম্মেলন আজ ১১ অক্টোবর শুক্রবার নগরীর চেরাগি পাহাড়স্থ ইসলামাবাদী মেমোরিয়াল হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। “তারুণ্যের হৃদয়ে দ্রোহের আগুন জ্বালো- প্রতিক্রিয়ার দুর্গে আঘাত হানো” এই শ্লোগানকে ধারণ করে চট্টগ্রামে অবস্থানরত সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগর শাখার বিদায়ী কমিটির সভাপতি জিকো মারমা। তার সভাপতিত্বে সম্মেলনের প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস্‌ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম ইউনিটের সংগঠক মিঠুন চাকমা, ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক কমিটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন খান, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিলাস চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক এসিং মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের এমএম পারভেজ লেনিন, জাতীয় ছাত্রদল চট্টগ্রামের সদস্য কাজল বড়ুয়া। এছাড়া সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সংহতি ব্যক্ত করেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগর অঞ্চলের সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি। সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজয় চাকমা। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে শোক প্রস্তা পাঠ করেন সিমন চাকমা। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভা পরিচালনা করেন সুমন চাকমা।

বক্তাগণ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুব সমাজের ভূমিকা অগ্রগণ্য। যুব সমাজকে সংগঠিত করতে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম আরো সক্রিয় ভূমিকা নেবে বলে আলোচকগণ আশা ব্যক্ত করেন।তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি বেদখল, পাহাড়িদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলা ও সেনা নির্যাতনের কোন বিরাম নেই। কখনো সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণের নামে, কখনো বিজিবির ক্যাম্প নির্মাণের নামে, কখনো রাবার বাগানের নামে, কখনো উন্নয়নের নামে, আবার কখনো জোরজবরদস্তি করে পাহাড়িদের জমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে। কেবল যে যৌথা মালিকানার জমি কেড়ে নেয়া হচ্ছে তাই নয়, সরকার-কর্তৃক রেজিষ্ট্রিকৃত ও বন্দোবস্ত্মীকৃত শত শত একর জমিও সেটলারদের বেদখল করা হয়েছে ও হচ্ছে। তারা অবিলম্বে ভূমি বেদখল বন্ধ ও বেদখলকৃত জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানান।

নেতৃবৃন্দ ইউপিডিএফ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের দাবি ও আশা-আকাঙ্খার ভিত্তিতে অবিলম্বে জাতীয় সংসদে ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী বিল পাসের দাবি জানিয়ে বলেন, ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠা ছাড়া ও বেদখলকৃত জমি ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত পাহাড়ে শান্তি আসবে না।

তারা সরকারের দ্বিমুখী নীতির কড়া সমালোচনা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী এমপিরা মুখে বলেন এক কথা, করেন আরেকটা। তাদের কথা ও কাজের কোন মিল নেই। মিথ্যা আশ্বাস ও প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে তারা সরকারের পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদকাল শেষ করলেন।

বক্তারা বলেন, সেটলারদের উগ্রসাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো ভূমি কমিশন আইন পাস হলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু করা হবে বলে প্রকাশ্যে বার বার হুমকী দিয়ে যাচ্ছে। অথচ এরপরও সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। এই দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না বলেই পাহাড়িদের উপর বার বার সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে আবার কোন সাম্প্রদায়িক হামলা হলে সরকার ও এই উগ্রসাম্প্রদায়িক সংগঠনগুলো দায়ি থাকবে বলে তারা মন্তব্য করেন।

গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংগ্রামী চেতনা ও প্রতিরোধের ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতে শাসকগোষ্ঠী নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে পাহাড়ি জনগণকে তথাকথিত জাতীয় দলে ভেড়ানোর পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, মূলত: পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের প্রতিরোধ মতাকে ধ্বংস করতে শাসকগোষ্ঠী এ ধরনের ঘৃণ্য খেলায় মেতে উঠেছে। তিনি যুব সমাজকে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নেতৃত্বে সংগঠিত হয়ে লড়াই সংগ্রাম বেগবান করতে জোর আহ্বান জানান।

ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক কমিটি চট্টগ্রাম অঞ্চলের আহ্বায়ক মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানকে এতবার এতভাবে কেটেকুটে টুকরো করা হয়েছে যে তাকে কাজে লাগানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সংবিধানে দেশে বসবাসরত সকল জাতিসত্তার যথাযোগ্য স্বীকৃতি না দেয়ার তিনি তীব্র সমালোচনা করেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে শুধুমাত্র পূর্ণিমার চাঁদের প্রাকৃতিক সৗন্দর্যই শোভা পাবে না, সেখানে বিদ্রোহ বিপ্লব লড়াইও সংঘটিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে উপস্থিত কাউন্সিলরদের সর্বসম্মতিক্রমে জিকো মারমাকে সভাপতি পুনঃনির্বাচিত করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন যথাক্রমে বিজয় চাকমা ও শ্যামল চাকমা।

—–

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More