গুইমারায় পাহাড়িদের ওপর হামলা-হত্যায় জড়িত সেনা-সেটলারদের গ্রেফতারের দাবিতে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ

0


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

খাগড়াছড়ির গুইমারায় পাহাড়িদের ঘরবাড়ি-দোকানপটে অগ্নিসংযোগ, হামলা, নির্বিচারে ৩ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং জড়িত সেনা-সেটলারদের গ্রেফতারের দাবিতে চট্টগ্রামে সংহতি সমাবেশ করেছে “চট্টগ্রাম সচেতন ছাত্র যুব নাগরিক সমাজ”।

আজ শুক্রবার (৩ অক্টোবর ২০২৫), বিকাল ৪টায় নগরের ডিসি হিল থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে প্রেসক্লাব এলাকা প্রদক্ষিণ করে চেরাগী পাহাড় মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে অধিকার কর্মী দিপায়ন চাকমার সঞ্চালনায় ও ত্রিপুরা শ্রমিক সংসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি উপা মোহন ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সংহতি বক্তব্য দেন, নিহত আথোইপ্রু মার্মার স্ত্রী নুনু মার্মা, বাসদ মার্কসবাদী চট্টগ্রামের সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট শফিউদ্দিন কবির আবিদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি সোহেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রিতা চাকমা, পার্বত্য জনতা মুক্তি মোর্চার সংগঠক টিতাস চাকমা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি এনি চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফন্টের চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি রিপা মজুমদার, ত্রিপুরা শ্রমিক সংসদের সাবেক সভাপতি জয় রঞ্জন ত্রিপুরা, মার্মা যুব সমাজের প্রতিনিধি থুইসাজাই মার্মা প্রমুখ।

সমাবেশে সোহেল চাকমা বলেন, গুইমারায় ধর্ষণ বিরোধী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে  সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক হামলায় পরিণত করেছে। ধর্ষণের বিচার দাবিতে আন্দোলনকারী নিরীহ জনতার ওপর বিনা উস্কানিতে সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে তিন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে। সেটলাররা সেনাদের সহযোগীতায় পাহাড়িদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা অগ্নিসংযোগ করেছে। প্রশাসন মিথ্যা মামলা দিয়ে রাতে বিরাতে পাহাড়িদের ঘরে ঘরে তল্লাশির নামে হযরানি করছে।

জুলাই গণঅভ্যত্থানের পরও বর্তমান ইন্টেরিম সরকার নারীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। গুইমারায় হত্যা, অগ্নিসংযোগের সাথে জড়িতদের আটক করে শাস্তি দিতে হবে।

রিতা চাকমা বলেন, সেনা-সেটলার কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রাম দীর্ঘদিন ধরে রক্তাক্ত। ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় বিচারের দাবিতে ছাত্র জনতার আন্দোলনের ওপর গুলি চালিয়ে আরও রক্তাক্ত হলো। গুইমারায় আমাদের ৩ ভাইকে লাশ বানিয়েছে। ১৬ জনকে গুলিবিদ্ধ করা হয়েছে। যে বাহিনী আমার ভাইকে খুন করে সে বাহিনী আমরা চাই না। সেনাশাসন থাকলে প্রতিদিন মানুষের জীবন, নারীর নিরাপত্তা লঙ্ঘিত হবে। তিনি পাহাড় থেকে সেনা শাসন প্রত্যাহার এবং গুইমারা হামলায় জড়িত সেনাদের গ্রেফতারপূর্বক শাস্তির দাবি জানান।

এনি চৌধুরী বলেন, চব্বিশের ৫ই আগস্টের পর দেশের সর্বপ্রথম মৃত্যুর ঘটনা পাহাড়ে  ঘটেছিল। পাহাড়ে অন্যায়, ধর্ষণের বিরুদ্ধে যখন কোনো আন্দোলন গড়ে উঠে তখনই সেনাবাহিনী তৎপর হয়। অথচ ধর্ষকদের গ্রেফতারের জন্য কোনো তৎপরতা নেই।

রিপা মজুমদার বলেন, পাহাড়ের সংকট জাতীয় সংকট। অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গেলে, বিচার চাইতে গেলে নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হতে হয়। গুইমারায় নিরীহ পাহাড়িদের বুকে গুলি করে হত্যার ঘটনা তারই দৃষ্টান্ত উদাহরণ।

পাহাড়ে চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে শফিউদ্দিন বলেন, পাহাড়ে ধর্ষণের ঘটনা কোনো নতুন নয়। কিন্তু ধর্ষণের বিচার হয় না। ধর্ষণের বিচার চাইতে গিয়ে ভুক্তভোগীকে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। আইনের নানা জটিলতার অজুহাত দেখিয়ে ধর্ষণকারী মুক্তি পেয়ে যায়।

তনুর ধর্ষণের আলামতও পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন,  ধর্ষণকারীরা  প্রভাবশালী হওয়ায় ধর্ষণের আলামত নষ্ট করা হয়েছিল এবং প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দেয়া হয়। ডাক্তারদের ওপর প্রভাব থাকায় তাদের পক্ষে সত্য রিপোর্ট প্রকাশ করা কঠিন। পাহাড় সম্পূর্ণ সমতল থেকে ভিন্ন। পাহাড়ে সমস্ত ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে সেনাবাহিনী। তাদের প্রভাবে সিঙ্গিনালা ধর্ষণের ঘটনার মিথ্যা রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। তিনি এই রিপোর্ট প্রত্যাখান করেন পুনঃতদন্তের জন্য দাবি জানান। যদি ধর্ষণের বিচার না হয় তাহলে পরবর্তী যেকোন অনাকাঙ্কিত ঘটনার জন্য রাষ্ট্র দায়ী থাকবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।

নিহত আথোইপ্রু মার্মার স্ত্রী নুনু মারমা কান্না জড়িত কন্ঠে তার স্বামীর মৃত্যুর জন্য সেনাবাহিনীকে দায়ী করেন এবং তার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করেন।

তিতাস চাকমা বলেন, খাগড়াছড়িতে জুম্ম ছাত্র জনতার সংগঠক উক্যেনু মারমাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে সেনাবাহিনী আগুনে ঘি ঢেলেছে। ১৪৪ ধারার জারির মধ্যেও  কেমন করে পাহাড়িরা গুলবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর শিকার হতে হয় সে প্রশ্ন রাখেন তিনি।

পাহাড়ে সেনা শাসন চলছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বেসামরিকভাবে প্রশাসন তা সমাধান করতে পারত। কিন্তু পাহাড়ে সেনাশাসন থাকায় যে কোনো ঘটনায় সর্বত্র  সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং এ ঘটনায়ও সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।

সভাপতি বক্তব্যে উপা মোহন ত্রিপুরা বলেন, পাহাড়ে কোনো ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হয় না। বিচার চাইতে গেলে সন্ত্রাসী-বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দেওয়া হয়। ধর্ষণকারী ও অপরাধীধের বিচারের আওতায় না এনে নিরীহ পাহাড়িদে পাখির মত গুলি করে মেরে ফেলা হয়।

সমাবেশ থেকে বক্তারা গুইমারায় হামলা, হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে দোষীদের যথোপযুক্ত বিচার ও শাস্তি  ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারবর্গকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পাহাড় থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহারের দাবি জানান।



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More