গুইমারার তিন শহীদের স্মরণে গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মানিকছড়িতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সেনা-সেটলার হামলায় নিহত ৩ শহীদ থৈইচিং মারমা, আথুইপ্রু মারমা ও আখ্র মারমার স্মরণে ‘শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ সংসদ’ এর আহ্বানে গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড় ও মানকছড়িতে একযোগে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর ২০২৫) বিকাল ৫:৫০টায় সাইরেন বাজিয়ে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
গুইমারা:
স্কুল কলেজ শিক্ষার্থী ও যুব সমাজের উদ্যোগে গুইমারা উপজেলার সাইংগুলি পাড়ায় তিন শহীদের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়। এতে শত শত শিশু, ছাত্র ও যুবকসহ সকল বয়সের নারী-পুরুষ স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।


মাটিরাঙ্গা: 
মাটিরাঙ্গা উপজেলার ধনিরাম পাড়া সীমান্ত সড়কে এবং বড়নাল ইউনিয়নের বড়পাড়া তৈলাফাং এলাকায় পৃথক পৃথকভাবে গুইমারার তিন শহীদির স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করা হয়।



রামগড়: 
পাহাড়ে সেনা-সেটলার কর্তৃক অব্যাহত হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ, দমন-পীড়ন ও ধর্মীয় নিপীড়নের প্রতিবাদে ও সেনা ক্যাম্প নির্মাণ-সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ রোধে এবং গুইমারার তিন শহীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের লক্ষ্যে রামগড়ে প্রদীপ প্রজ্বলন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
রামগড় সীমান্ত সড়কের পিলাকঘাট এলাকায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে রামগড়ের স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় যুব সমাজ।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুব সমাজের শান্ত চাকমা ও সঞ্চালনা করেন ধনু ত্রিপুরা। বক্তব্য রাখেন আপ্রুচিং মারমা, চেংথোয়াই মারমা ও অমিত মারমা (মেম্বার)।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় দমন-পীড়ন, হামলা-হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি চলছে জমি দখল করে সেনা ক্যাম্প সম্প্রসারণের কাজ। তারা বলেন, যেখানে ক্যাম্প, সেখানেই ভয়ের পরিবেশ বিরাজ করে। কারণ সেনা ক্যাম্প নির্মাণের নামে সাধারণ জনগণের জমি, ভিটেমাটি কেড়ে নেওয়া হয়, ধর্মী প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করা হয়।
তারা অবিলম্বে অন্যায় দমনম-পীড়ন বন্ধের দাবি জানান।

বক্তারা আরো বলেন, গুইমারার তিন শহীদ শুধু নাম নয়, তারা পাহাড়ের প্রতিবাদের প্রতীক। আমরা তাদের ত্যাগ বৃথা যেতে দেব না।
সভাপতির বক্তব্যে শান্ত চাকমা বলেন, পাহাড়ে নিরীহ মানুষের রক্ত ঝরছে প্রতিনিয়ত। সেনা ও সেটলারদের হাতে নারী নির্যাতন, শিশু হত্যা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা এখন নিয়মিত। আমরা ন্যায়বিচার চাই, আমরা শান্তিতে বাঁচতেদ চাই।

তিনি আরো বলেন, আজকের এই প্রদীপ শুধু প্রতিবাদের প্রতীক নয়, এটি আমাদের অঙ্গীকার। পাহাড়ে শান্তি ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। প্রদীপের আলো নিভে যেতে পারে, কিন্তু আমাদের প্রতিবাদের শিখা নিভবে না—যতদিন না পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
শেষে গুইমারার তিন শহীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
মানিকছড়ি:
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি সন্ধ্যা ৬টায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হয়।
মানিকছড়ি গিরি মৈত্রী ডিগ্ৰি কলেজে সামনে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন এলাকায় থেকে তিন শতাধিক ছাত্র ছাত্রী ও এলাকাবাসী অংশগ্রহণ করেন। প্রদীপ প্রজ্বলন শেষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সুইজাইউ মারমা ও সাজাই মারমা।


বক্তারা নিহত ৩ শহীদকে স্মরণ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ধর্ষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তারা শহীদ হতে হয়েছেন। এটা একটি দেশের জন্য লজ্জাজনক। এই বিচারহীনতার রাষ্ট্রের ধর্ষণকারীকে শাস্তি না দিয়ে, যারা ধর্ষণের প্রতিবাদ করে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছে সেনাবাহিনী।
বক্তারা অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন ও সেটেলার প্রত্যাহার এবং গুইমারা হামলা-হত্যাকাণ্ডে জড়িত সেনা-সেটলারদের বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
