গুইমারা রামেসু বাজারে সেনা-সেটলার হামলার বিষয়ে রামগড়ে লিফলেট বিলি

0


রামগড় প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ

শুক্রবার, ৭ নভেম্বর ২০২৫

খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলায় গুইমারা রামেসু বাজারে পাহাড়িদের ওপর সেনা-সেটলার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইউপিডিএফের গুইমারা ইউনিটের প্রকাশিত একটি লিফলেট বিলি করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে লিফলেটটি বিলি করতে দেখা গেছে।

আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১০টায় রামগড় উপজেলার অন্তুপাড়া, বনবিহার, পিলাক ঘাট, জিরো পয়েন্ট, লাচারী পাড়া, হাচুক পাড়া, বড়বেলছড়ি, তৈচাকমা পাড়া, যৌথখামার স্কুল, সোনাইআগা, মরাকইল্যা, চাকমা পাড়া, ছদুর খীল, নতুন বাজার, কালাপানি ও গুজা পাড়াসহ বিভিন্ন পাড়া এলাকায় জনসাধারণের মাঝে লিফলেটটি বিলি করা হয় এবং বিভিন্ন দোকানে ও দৃষ্টিগ্রাহ্য স্থানে পোস্টার আকারে সাঁটানো হয়।

এলাকার জনগণকে মনযোগ সহকারে লিফলেটটি পড়তে দেখা গেছে।



লিফলেটে রামেসু বাজারে হামলার বিবরণসহ ঘটনায় জড়িত সেনা-সেটলারদের গ্রেফতার ও বিচার না হওয়া, ঘটনা নিয়ে সেনাবাহিনীর মিথ্যাচার বিষয়ে তুলে ধরার পাশাপাশি সংগ্রামে অবিচল থাকতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

রামেসু বাজারে সেনা-সেটলার হামলার ঘটনাটি পরিকল্পিত উল্লেখ করে লিফলেটে বলা হয়েছে, ২৮ সেপ্টেম্বর গুইমারায় অবরোধ ছিল শান্তিপূর্ণ। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, তারা অবরোধকারীদের কোন বাধা দেবে না। কিন্তু এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর একটি দল এসে যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে অবরোধকারীদের মুখোমুখি হয় এবং তাদের সাথে অত্যন্ত অশোভন আচরণ করে। পরে তারা উগ্রবাদী সেটলারদের সেখানে নিয়ে আসে এবং যৌথভাবে হামলা শুরু করে। সেটলাররা গুইমারা বাজারের কাছে আমতলিতেও হামলার চেষ্টা চালায়, তবে সাধারণ বাঙালিদের বাধার কারণে তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

এতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, মারমা অধ্যুষিত বর্ধিষ্ণু রামেসু বাজারকে ধ্বংস এবং মারমা ব্যবসায়ীদেরকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতে পরিকল্পিতভাবে ঐদিন হামলা চালানো হয়েছে।



লিফলেটে জনগণের প্রতি যেসব আহ্বান জানানো হয়েছে সেগুলো হলো:

১) হামলাকারী-খুনী সেনা-সেটলারদের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের এড়িয়ে চলুন। তাদের কথায় কান দেবেন না। এরা আপনাদেরকে টাকা পয়সার লোভ দেখাতে পারে ও অন্যান্য সুবিধা পাইয়ে দেয়ার কথা বলতে পারে, সে সব ঘৃনাভরে প্রত্যাখ্যান করুন। আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হোন। যার আত্মমর্যাদা নেই, সেই শত্রুর কাছ থেকে সুবিধা নেয়। যে জাতির আত্মমর্যাদা নেই, সে জাতি সংগ্রাম করে না। আর সংগ্রাম করে না বলে সে জাতি কখনও পরাধীনতা থেকে মুক্তি পায় না। অথচ দুনিয়ায় প্রত্যেক নিপীড়িত ও পরাধীন জাতি সংগ্রাম করেই মুক্তি অর্জন করেছে, দালালি করে নয়।

২) নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হোন এবং তার জন্য সংগ্রাম করুন। গুইমারা হামলায় জড়িতদের বিচার এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখুন।

৩) ইউপিডিএফের সঠিক নেতৃত্ব মেনে চলুন। কারণ যে কোন আন্দোলন সফল হওয়ার জন্য সঠিক নেতৃত্ব অপরিহার্য। ইউপিডিএফ গত ২৭ বছর ধরে ভূমি বেদখলসহ শাসকগোষ্ঠীর দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

৪) সেনাবাহিনী ও তাদের মদতপুষ্ট ঠ্যাঙাড়ে বাহিনীর কাছে ইউপিডিএফ সম্পর্কে তথ্য দেবেন না। শাসকগোষ্ঠী পাহাড়ি জনগণকে নেতৃত্বহীন করতে ইউপিডিএফকে ধ্বংস করতে উঠে পড়ে লেগেছে। ইউপিডিএফকে শেষ করতে সক্ষম হলে ভূমি বেদখলে বাধা দেয়ার, পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার ও সাম্প্রদায়িক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য আর কেউ থাকবে না। ইউপিডিএফ না থাকলে সেনা সেটলাররা তাদের ইচ্ছামত পাহাড়ি বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে পারবে। সেজন্য তারা ইউপিডিএফকে আগে ধ্বংস করতে চায়।

৫) সেনাবাহিনী ও তাদের পোষ্য ঠ্যাঙাড়ে স্পাইদের খুঁজে বের করুন। এদের ব্যাপারে সকলকে সতর্ক করে দিন এবং প্রয়োজনে তাদেরকে শায়েস্তা করুন।

৬) এলাকায় এলাকায় সংগঠিত হোন। সেনা সেটলার ও তাদের পোষ্য ঠ্যাঙাড়েদের হুমকি ধমকিতে দমে যাবেন না। তবলাপাড়া ও কালাপানি এলাকার জনগণের কাছ থেকে শিক্ষা নিন। তাদের মতো সংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, আন্দোলনের নেতাদের রক্ষা করুন।

৭) মনে রাখবেন অন্যায় কখনও চিরস্থায়ী নয়। সেনা সেটলাররা যে অন্যায় অবিচার করছে, যে জুলুম করছে, তার প্রতিফল একদিন তাদেরকে পেতেই হবে। প্রত্যেক কর্মের ফল আছে, তাই অন্যায়ের বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেরও একদিন সুফল মিলবে। এই বিশ্বাস রাখুন।

লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘জনগণের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের বিজয় হবেই হবে। বীর শহীদ আখ্র মারমা, আথুইপ্রু মারমা ও থৈইচিং মারমার রক্তের মূল্য জনগণকে অধিকার প্রদানের মাধ্যমে শাসকগোষ্ঠীকে একদিন পরিশোধ করতেই হবে।’



This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More