গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ‘অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক সরকার’ গঠনের দাবি গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের পতন, সংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে বিপ্লবী অভিবাদন

ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট ২০২৪
সেনা সমর্থিত শাসন নয়, আন্দোলনকারী শক্তিসমূহের সম্মতির ভিত্তিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থনে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ‘অন্তর্বর্তীকালীন গণতান্ত্রিক সরকার’ গঠনের দাবি জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
সোমবার (৫ আগস্ট ২০২৪) সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক এবং ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি দিলীপ রায়, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি ছায়েদুল হক নিশান, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা এবং বিপ্লবী ছাত্র- যুব আন্দোলনের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) তাওফিকা প্রিয়া।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, “ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে হাসিনা সরকারের পতন নিশ্চিত হয়েছে। এ লড়াইয়ে অসংখ্য ছাত্র-জনতা শহীদী আত্মদান করেছে। আমরা শহীদদের আত্মদানকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। আমরা শহীদদের রক্তের নামে শপথ পড়ছি, শোষণ-বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করবো। অনেকে আহত হয়ে পঙ্গু অবস্থায় জীবন- যাপন করছেন, অনেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। অনেক মা-বাবা সন্তানকে হারিয়েছেন। তাদের এ লড়াইকে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।”
তারা আরো বলেন, জনগণের এ সংগ্রামী বিজয়কে আমরা কোনো ভাবেই নস্যাৎ হতে দিতে পারি না। আমরা কোন ভাবেই সেনা সমর্থিত শাসন মানবো না। সেনা সমর্থিত শাসনে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ভূলণ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার সেনাশাসন বিরোধী লড়াইয়ের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। আমরা চাই, অবিলম্বে এ পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সাথে যুক্ত শক্তিসমূহের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সমন্বয়ে একটি ‘অন্তবর্তীকালীন গণতান্ত্রিক সরকার’ গঠন করতে হবে।
প্রাথমিকভাবে এই সরকারের অবশ্য পালনীয় কাজ হবে-
১. আন্দোলনকারীদের নামে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার করা। আটককৃত সকল ছাত্র-জনতার মুক্তি দেওয়া ।
২. সকল হত্যা – নির্যাতনের তদন্ত এবং বিচার নিশ্চিত করা। ছাত্র – জনতাকে হত্যার নির্দেশদাতা এবং হত্যার সাথে জড়িত সরকারের মন্ত্রী, পুলিশ- র্যাব- বিজিবির কর্মকর্তা এবং ছাত্রলীগ- যুবলীগের সন্ত্রাসীসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা। সকল হত্যার মূল নির্দেশদাতা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা ।
৩. সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়া। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’র সাথে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীরা যাতে কোনরকম একাডেমিক এবং প্রশাসনিক হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা।
৪. ‘জুলাই হত্যাকান্ডে’ মৃত্যুর প্রকৃত হিসেব বের করা। গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের প্রকৃত তালিকা প্রকাশ করা ।
৫. দেশব্যাপী যে সকল ছাত্র – জনতা শহীদ এবং আহত হয়েছেন তাদের পরিবারকে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। শহীদ আবু সাইদসহ সকল শহীদদের স্মৃতি সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা।
৬. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে যে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য-প্রক্টরসহ দায়ী ব্যক্তিদের পদত্যাগ নিশ্চিত করা।
৭. গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দমন-পীড়ন নির্যাতন যেন না চলে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া । নিপীড়নমূলক সকল আইন বাতিল করা। সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া। পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার করা।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, “এ লড়াইয়ে জাতি- ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছে। তাই, আন্দোলন পরবর্তী সময়ে কোনরকম সাম্প্রদায়িক উন্মাদনা, হামলা আমরা মানতে পারি না। ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারগুলোর ওপর কোনরকম হামলা-নির্যাতন যেন না হয় সে বিষয়ে আমাদের উদ্যোগী থাকতে হবে।” পরিশেষে তাঁরা বলেন, অনেক রক্তের বিনিময়ে ছাত্র- জনতা এ বিজয় অর্জন করেছে। আমাদের স্থির বিশ্বাস, ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সমাজের স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে এ লড়াই আমাদের পথ দেখাবে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ চৌধুরী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিবৃতিটি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।