খাগড়াছড়ির আলুটিলায় ভূমি অধিগ্রহণের নামে পাহাড়ি উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে

চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের বিক্ষোভ

0

পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহার ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি দাবি

ctg protest1, 26.08.2016

চট্টগ্রাম : খাগড়াছড়ির আলুটিলায় ইকো ট্যুরিজম এর নামে ৭০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ করে পাহাড়িদের উচ্ছেদ ও ভূমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম।

শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বিকাল ৩টার সময় নগরীর শহীদ মিনার থেকে মিছিল শুরু হয়ে নন্দন কানন হয়ে প্রেসক্লাব মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সমাবেশে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের নগর শাখার সভাপতি বিজয় চাকমার সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক সুকৃতি চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পাহড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্যপচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রূপন চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক থুইক্যসিং মারমা। এছাড়া সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন’র নগর সভাপতি শওকত আলী, ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক দয়ানাথ রোয়াজা, প্রগতিশীল মারমা ছাত্র সমাজের সংগঠক উজ্জ্বল মারমা, চট্টগ্রাম মহানগর ত্রিপুরা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক খগেশ্বর ত্রিপুরা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র দীনথ চাকমা। সমাবেশে চার শতাধিক লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

সমাবেশ থুইক্যচিং মারমা বলেন, আওয়ামী সরকার উন্নয়নের এক নতুন তরিকা আবিষ্কার করেছে। এই তরিকার মাধ্যমে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের নামে পাহাড়িদের ভূমি জোরপূর্বক অধিগ্রহণ করছে ও তাদেরকে নিজ বসতভিটা থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে। একদিকে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের ২০০১ আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করেছে, অপরদিকে সেনাবাহিনীর মদদে পার্বত্য চট্টগ্রামে সেটলার বাঙালিরা সভা-সমাবেশ, হরতালের মতো কর্মসূচী পালন করছে।

তিনি বলেন, সরকার পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিস্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনী অধ্যাদেশ জারি করলেও উক্ত সংশোধনীও এখনো অগণতান্ত্রিকই রয়ে গেছে। যেখানে (গ) উপ-ধারা (৫) এ “চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যদের গৃহীত সিদ্ধান্তই কমিশনের সিদ্ধান্ত বলিয়া গণ্য হইবে” উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা আগের মতোই বহাল রাখা হয়েছে। তিনি পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সকল অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিলের দাবিসহ পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

ctg protest2, 26.08.2016

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এর নগর সভাপতি সৈকত আলী বলেন, সরকার সারা দেশে আজ ফ্যাসিস্ট শাসন চালাচ্ছে। ১৯৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের যে চেতনা তার বিপরীতে সম্প্রদায়িক ও এক কেন্দ্রীক শাসন শোষন চালাচ্ছে। পাহাড়ে ভূমি বেদখলসহ নিপীড়ন-নির্যাতন জারি রেখে ’৭১ সালে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর মতো সরকার উপনিবেশিক শাসন শোষন অব্যাহত রেখেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর ত্রিপুরা কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক খগেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, আলুটিলা ভূমি ত্রিপুরা জাতিসত্তার জন্য প্রাণ, জীবন দিয়ে হলেও তা রক্ষা করতে হবে।

ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক দয়ানাথ রোয়াজা বলেন, সাজেকে পর্যটন করে ত্রিপুরা জাতিসত্তাদের উচ্ছেদ ও চিড়িয়াখানার জন্তুর মতো তাদের সেখানে রাখা হয়েছে। আলুটিলা ৭০০ একর দখল করে সেখানেও ত্রিপুরা জাতিসত্তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার জন্য সকার ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরকারে কাছে তিনি দাবি জানান।

সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, শাসকশ্রেণী পাহাড়িদের ধ্বংসের জন্য প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে চলেছে। পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি না দিয়ে উন্নয়নের নাম করে পর্যটন কেন্দ্র, মেডিকেল কলেজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করে তাদের বসত-ভিটা কেড়ে নিচ্ছে। পাহাড়ের ন্যায় সমতলের সাধারণ জনগণও অনিরাপদ ও চরম উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে আলুটিলায় ৭০০ একর জায়গা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বন্ধ করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা-সেটলার প্রত্যাহার ও পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতির দাবি জানান।
—————-

সিএইচটি নিউজ ডটকম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More