চট্টগ্রামে তিন সংগঠনের বিক্ষোভ সমাবেশ, ইউপিডিএফ সদস্য হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি

0

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
শুক্রবার, ৭ এপ্রিল ২০২৩

খাগড়াছড়ি মানিকছড়িতে সেটলার বাঙালি কর্তৃক ইউপিডিএফ কর্মী হ্লাচিংমং মারমাকে প্রকাশ্যে শারীরিক নির্যাতনের পর হত্যা এবং দীঘিনালায় মুখোশ-সংস্কার কর্তৃক ত্রিদীব চাকমাকে গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে চট্টগ্রাম নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ শুক্রবার (৭ এপ্রিল ২০২৩) বিকাল ৪.০০ টায় চট্টগ্রাম চেরাগি পাহাড় মোড়ে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি), হিল উইমেন্স ফেডারেশন (এইচডব্লিউএফ) ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উদ্যোগে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশের পূর্বে চট্টগ্রামের ডিসি হিল থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি প্রেসক্লাব এলাকা ঘুরে চেরাগি পাহাড় মোড়ে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

‌সমাাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম চট্টগ্রাম অঞ্চলের নেতা শুভ চাক। বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রোনাল চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পিসিপি চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সোহেল চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রী দয়াসোনা চাকমা ও পিসিপি চবি শাখার সভাপতি সুদেব চাকমা প্রমুখ।

শাসকগোষ্ঠীর জাতিগত নিপীড়ন, সেটলার ও জুম্ম দিয়ে জুম্ম হত্যার দ্বৈতনীতির ষড়যন্ত্রে পা না দিয়ে আদর্শিক লড়াই সংগ্রামে সকলকে সংযুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের অধিক সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর দ্বারা শাসিত হচ্ছে। পাহাড়ের জাতিগত শোষণ-বঞ্চনার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তার মুক্তির সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যে শাসকগোষ্ঠী একের পর এক ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

তারা বলেন, প্রতিবছর দেখা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের মহোৎসব বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু-বিহু-সংক্রানের দিন ঘনিয়ে এলেই শাসকগোষ্ঠী নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য সবসময় ওঁৎপেতে বসে থাকে। পাহাড়িরা সকলে মিলে যখন আনন্দঘন পরিবেশে তাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব পালনের প্রস্তৃতি নেয় সেসময়ে সেনা-সেটলারদের দ্বারা কোন না কোন ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকে। এটা শাসক-সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যতীত কিছু নয়। পাহাড়িদের জাতিগত নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে আশির দশকে সমতল থেকে পুনর্বাসন করা সেটলারদের অপব্যবহার, কিছু দালাল-প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিকে ভাগিয়ে মুখোশবাহিনী গঠন করে পাহাড়ি জনগণের পিছে লেলিয়ে দেয়া, বন্দুকযুদ্ধের নামে ইউপিডিএফ কর্মীকে হত্যা করে শাসকগোষ্ঠীর নিত্যনতুন ঘটনার জন্ম দেওয়া এখন পাহাড়ের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে জুম্ম দিয়ে জুম্ম হত্যা করে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের নামে চালিয়ে দিচ্ছে সেনাবাহিনী। পার্বত্য চট্টগ্রামে সুষ্ঠু রাজনৈতিক সমাধান ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসন’ র অধিকার বাস্তবায়ন না করে পার্বত্য অঞ্চলের অধিকারকামী সংগঠনগুলোকে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে, বিভিন্ন ধরনের প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এর থেকে আমাদের নিস্তার প্রয়োজন।

‌বক্তারা আরো বলেন, যে আদর্শ ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনসাধারণের ব্যাপক অংশগ্রহণে ১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল সেই আদর্শ ও উদ্দেশ্যকে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী উগ্র-জাতীয়তাবাদ ও ফ্যাসিবাদে রুপান্তরিত করেছে। একনায়তান্ত্রিক শাসকব্যবস্থায় ক্ষমতা টিকে রাখার জন্যে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার গণমানুষের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কেড়ে নিয়েছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মতো গণবিরোধী আইন প্রয়োগ করে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া আপামর জনগণকে নির্বিচারে আটক, খুন, গুম, অপহরণ করা হচ্ছে। সরকারের এমন গণবিরোধী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে দেশের প্রতিটি প্রান্তে আপামর জনগণকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।

হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা হচ্ছে রাজনৈতিক সমস্যা। এ সমস্যা সমাধান করতে হলে শাসকগোষ্ঠীকে রাজনৈতিক বুঝাপড়ার মধ্যে দিয়ে সমাধান করতে হবে। সেটলার-মুখোশ-সংস্কারদের দিয়ে খুন, গুম, অপহরণ করে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিকামী মানুষের ‘পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের’ স্বপ্নকে হত্যা করা যাবে না। সেনাবাহিনী যতই ষড়যন্ত্র করুক পাহাড়ের ন্যায্য আন্দোলন থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের স্বাধীনচেতা জনগণকে বিচ্যূত করা যাবে না।

‌পাহাড়ের ভ্রাতৃপ্রতিম রাজনৈতিক সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, শাসকের চাপিয়ে দেয়া সংঘাত নীতি পরিহার করে সেনাবাহিনীর সঙ্গ পরিত্যাগ করুন, শাসকগোষ্ঠীর সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আসুন আমরা জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলি।

‌সমাবেশ থেকে সেনাসৃষ্ট মুখোশ-সংস্কার কর্তৃক দীঘিনালায় ইউপিডিএফ কর্মী ত্রিদিব চাকমাকে হত্যা ও মানিকছড়িতে সেটলারদের দিয়ে ইউপিডিএফ সদস্যকে হত্যা এবং বান্দরবানে বম জাতিসত্তার ৭ গ্রামবাসীকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। অবিলম্বে সুষ্ঠু তদন্ত করে এসব ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান বক্তারা।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More