চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী বম জাতিসত্তার এক যুবকের মৃত্যু!

লালত্লেং কিম বম। ছবি: সংগৃহিত
নিজস্ব প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় লালত্লেং কিম বম (৩০) নামে বম জাতিসত্তার এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে ২০২৫) সকালে হাসপাতালে নেয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা গেছে। সঠিক চিকিৎসার অভাব ও নির্যাতনের কারণে তাঁর এমন মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
লালত্লেং কিম বম’র পিতার নাম লামমিন লিয়ান বম। তাঁর বাড়ি বান্দরবানের রুমা উপজেলার বেথেল পাড়ায়।
গত বছর ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে ব্যাংক ডাকাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে যৌথবাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) বিরোধী অভিযানের নামে ৮ এপ্রিল ২০২৪ বেথেল পাড়া থেকে নারীসহ এক সাথে ৪৯ জনকে গ্রেফতার করে, যাদের মধ্যে লালত্লেং কিম বম ছিলেন একজন।
অভিযোগ উঠেছে, গ্রেফতারের পর থেকে দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় বিনা বিচারে কারাগারে আটক রেখে বম জাতিসত্তার বন্দীদের ওপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে এবং অসুস্থদের সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না। যার কারণে লালত্লেং কিম বম’র মৃত্যু হয়েছে। তাঁর মাথার এক পাশে আঘাতপ্রাপ্ত রয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
মরদেহ বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। মরদেহটি নিতে আগামীকাল অভিভাবকদের আসার জন্য বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, সংময় বম (৫৫) নামে আরেক বন্দী বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাজতি স্ট্যাটাসে ভর্তি আছেন। তাঁর অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
কারাগারে লালত্লেং কিম বম’র এ মৃত্যুর ঘটনাকে কাঠামোগত রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড এবং জাতিগত নিপীড়ন বলছেন অধিকারকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, কেএনএফ বিরোধী অভিযানের নামে কার্যত বম জাতিসত্তার ওপর জাতিগত নির্মূলীকরণ অভিযান চালানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে গত বছর (২০২৪) ২ ও ৩ এপ্রিল রুমা ও থানচিতে নাটকীয় ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী ৭ এপ্রিল থেকে কেএনএফ বিরোধী অভিযান শুরু করে। ৮ এপ্রিল’২৪ বেথেল পাড়া থেকে একসাথে ৪৯ জন নারী-পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়। দীর্ঘ সময় ধরে চলা এ অভিযানে এখন পর্যন্ত শতাধিক বম নারী-পুরুষ-শিশুকে গ্রেফতার করে ব্যাংক ডাকাতির বিভিন্ন মামলায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। তাদেরকে কয়েক দফায় বান্দরবান জেলা কারগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। নাবালক ৪ শিশুও এখনো তাদের মায়েদের সাথে কারাগারে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে।
আইনজীবীর মাধ্যমে তারা একাধিকবার আদালতে জামিন আবেদন করলেও আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেনি। ফলে দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে তারা কারাগারে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরবর্তী দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হলে দেশে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গীসহ অনেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও বম জাতিসত্তার নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।