চবিতে পিসিপি’র আলোচনা সভায় বক্তারা

৯৪ সালের বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার আহ্বান

0

চবি প্রতিনিধি ।। ১৯৯৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম ১৪৪ ধারা লঙ্ঘনের সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃবৃন্দ।

গতকাল ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ’৯৪ সালে অন্যায় ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন ও ’৯৮ সালে শান্তিবাহিনীর অস্ত্রসমর্পণ দিবস উপলক্ষে পিসিপি’র চবি শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক ঘরোয়া আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানা

সভায় পিসিপি’র চবি শাখার সভাপতি মিটন চাকমার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনয়ন চাকমা, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অমিত চাকমা প্রমুখ।

বক্তারা ’৯৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিএনপি সরকারের অন্যায় ১৪৪ ধারা জারির ঘটনা তুলে ধরে বলেন, আজকের দিনটি পার্বত্য চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসের এক গৌরবময় দিন। ৯৪ সালে এদিন পার্বত্য খাগড়াছড়ি জেলা শহরে প্রশাসন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের আন্দোলন বানচাল করতে অন্যায়ভাবে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতা প্রশাসনের সেই অন্যায় ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সমাবেশ ও অবরোধ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে এক গৌরবময় ইতিহাস রচনা করে। সেদিন পুলিশের টিয়ার গ্যাস, রাবার বুলেটের সম্মুখে দাঁড়িয়ে ছাত্র-জনতা তীব্র প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তুলেছিল। এই প্রতিরোধ সংগ্রামের ইতিহাস নতুন প্রজন্মকে জানতে হবে এর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে।

বক্তারা আরো বলেন, ৯৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি একদিকে যেমন গৌরবময় ইতিহাস রচিত হয়েছিল, অপরদিকে ১৯৯৮ সালে খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে সরকারের কাছে জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনী সদস্যদের অস্ত্রসমর্পণ দিনটিকে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ে পরিণত করেছে। তবে শান্তিবাহিনীর সদস্যরা অস্ত্রসমর্পণ করলেও নতুন প্রজন্মের লড়াইকারী ও মুক্তিকামী জনতা তা বরদাস্ত করেনি। সেদিন পাহাড়ি গণ পরিষদ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের অকুতোভয় সংগ্রামীরা প্রশাসনের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ব্যানার ও কালো পতাকা প্রদর্শন করে নতুন দিনের লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছিল, যা আজো চলমান রয়েছে।

বক্তারা বলেন, জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল। তাদের অনেক বীরত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। কিন্তু জনগণের দাবি জলাঞ্জলি দিয়ে একটি আপোষ ও অসম চুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছে অস্ত্রসমর্পণ তাদের সেই বীরত্বকে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। যে অস্ত্রগুলো দিয়ে তারা পাহাড়িদের অস্তিত্ব রক্ষা ও অধিকার ছিনিয়ে এনে জনগণের কাছ থেকে বীরত্বের সম্মান পেতো, সেইসব অস্ত্র সরকারের কাছে তুলে দিয়ে তারা নিজেদের সেই সম্মানকে ভুলুণ্ঠিত করেছে।

তারা বলেন, আমরা দেখেছি সেদিন খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে অস্ত্রসমর্পণকারী শান্তিবাহিনী সদস্যদের খোলামাঠে খররৌদ্রে বসিয়ে রেখে কিভাবে অসম্মান করা হয়েছে। সেদিন যেভাবে তাদেরকে অসম্মান করা হয়েছে তা একটি লড়াইকারী বাহিনীর পক্ষে ছিল বড়ই বেমানান। এতে শান্তিবাহিনী সদস্যদের আত্মমর্যাদাকে ক্ষুন্ন করা হয়েছে। আর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বড় গলায় বক্তব্য দিলেও জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনীর প্রধান সন্তু লারমাকে কোন বক্তব্য প্রদানের সুযোগ না দিয়ে পাহাড়ি জনগণকেও অপমান করা হয়েছিল।

বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের নিপীড়িত জনগণের ভাগ্য জলাঞ্জলি দিয়ে অস্ত্রসমর্পণ করে গৌরবের কিছু নেই। আমাদেরকে ৯৪ সালের মতো বীরত্ব ও সাহসিতকার ইতিহাস থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদেরকে কঠোর সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।


সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।


সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. AcceptRead More