চাই বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য
সিএইচটি নিউজ ডটকম
মন্তব্য প্রতিবেদন॥ সন্তু লারমার নেতৃত্ত্বাধীন জনসংহতি সমিতি গতকাল ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৮ বছর পূর্তি উপলক্ষে রাঙামাটি শহরে আয়োজিত এক সমাবেশে আগামী বছর ১লা জানুয়ারী থেকে আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যে সরকার চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ না করলে হরতাল, অবরোধ, অফিস-আদালত বর্জনসহ ১০ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে
 সমিতির এই ঘোষণা যে ইতিবাচক তাতে সন্দেহ নেই। তবে প্রশ্ন হলো, সত্যিকার অর্থে গণআন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে তারা কতটুকু আন্তরিক। আর সরকারের চাপের মুখে তারা কতটুকু অবিচল থাকতে পারবেন বা দৃঢ়তা দেখাতে পারবেন। কারণ অতীতে আন্দোলন ঘোষণা করেও শুরু না করার অথবা চাপের মুখে আন্দোলন গুটিয়ে নেয়ার নজীর রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে প্রতি বছর আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়া হলেও সমিতি কোন সময় আন্দোলনে যায়নি। তবে ব্যতিক্রম কেবল ২০০৫ সালে। সে সময় চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শুরু করা হলেও খাগড়াছড়িতে সমিতির কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন বন্ধ করে দেয়া হয়। মোট কথা, সমিতি এতদিন কেবল মুখে আন্দোলনের কথা বলে এসেছে, অথবা লোকদেখানো, মুখ রক্ষার ‘আন্দোলন’ করেছে। তবে এ বছর মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ নামে দু’একটি কর্মসূচী হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
সমিতির এই ঘোষণা যে ইতিবাচক তাতে সন্দেহ নেই। তবে প্রশ্ন হলো, সত্যিকার অর্থে গণআন্দোলন সংগঠিত করার ব্যাপারে তারা কতটুকু আন্তরিক। আর সরকারের চাপের মুখে তারা কতটুকু অবিচল থাকতে পারবেন বা দৃঢ়তা দেখাতে পারবেন। কারণ অতীতে আন্দোলন ঘোষণা করেও শুরু না করার অথবা চাপের মুখে আন্দোলন গুটিয়ে নেয়ার নজীর রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে প্রতি বছর আন্দোলন শুরু করার ঘোষণা দেয়া হলেও সমিতি কোন সময় আন্দোলনে যায়নি। তবে ব্যতিক্রম কেবল ২০০৫ সালে। সে সময় চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন শুরু করা হলেও খাগড়াছড়িতে সমিতির কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন বন্ধ করে দেয়া হয়। মোট কথা, সমিতি এতদিন কেবল মুখে আন্দোলনের কথা বলে এসেছে, অথবা লোকদেখানো, মুখ রক্ষার ‘আন্দোলন’ করেছে। তবে এ বছর মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে ‘অসহযোগ আন্দোলনের’ নামে দু’একটি কর্মসূচী হাতে নিতে বাধ্য হয়েছে।
সমিতির নেতারা সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করার কথা বলে থাকেন। কিন্তু এই বাধ্য করার জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী তা করা থেকে আজ পর্যন্ত তারা বিরত রয়েছেন। সরকারকে বাধ্য করার জন্য প্রয়োজন শক্তি প্রয়োগের। আর শক্তির উৎস হলো জনগণ। অথচ জনগণ আজ বিভক্ত হয়ে আছেন তিনটি পার্টির মধ্যে। কাজেই জাতির সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হলে দরকার তিন পার্টি ইউনাইটেড পিপল্স ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি ও সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের মধ্যে ঐক্য ফ্রন্ট বা জোট। এছাড়া বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আর বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে না পারলে সরকারকে চাপ দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নে কিংবা অন্য কোন ন্যায়সঙ্গত গণদাবি পূরণে বাধ্য করা যাবে না। এই হলো প্রকৃত বাস্তবতা, যাকে উপেক্ষা করার অর্থ হলো দিনের আলোকে অস্বীকার করা। অর্থাৎ চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে বাধ্য করতে হলে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উক্ত তিন পার্টির একটি জোট গঠনে সমিতিকে রাজী হতে হবে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার জন্য এ ছাড়া অন্য কোন বিকল্প নেই। কারণ সমিতির একার পক্ষে আন্দোলন করে সরকারকে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করার শক্তি নেই। এটা হলো আমাদের আন্দোলনের দ্বিতীয় মৌলিক সত্য, যা সবার কাছে পরিস্কার।
এ প্রসঙ্গে এখানে এটা বলা দরকার যে, ১৯৯৭ সালে জনসংহতি সমিতির পক্ষে বর্তমান পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হতো না, যদি না বিগত নব্বই দশকে প্রসিত খীসার নেতৃত্বে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, পাহাড়ি গণ পরিষদ ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের পরিচালিত গণআন্দোলন গড়ে না উঠতো। কথাটা অন্যভাবেও বলা যায় — জনসংহতি সমিতির সাথে তখন উক্ত তিন সংগঠনের একটি স্বাভাবিক জোট গঠিত হয়েছিল বলেই মূলতঃ সরকার আন্দোলনের মুখে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর করা এক জিনিস, চুক্তি বাস্তবায়ন আর এক জিনিস। এখন এই চুক্তি বাস্তবায়নের জন্যও সে ধরনের একটি নতুন ও শক্তিশালী জোট গঠন করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বলা যায় তা এখন সময়ের দাবি, পার্বত্য চট্টগ্রামের আপামর জনগণের প্রাণের দাবি। এ দাবি যে দল উপেক্ষা করবে সে দল নিজেকে জনগণের দল বলে দাবি করতে পারে না। আমরা আশা করি সমিতি ত্রিদলীয় জোট গঠনের মাধ্যমে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গঠনের যে গণ আকাঙক্ষা, তার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাবে।
শেষে আর একটি কথা। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি একটি নির্দিষ্ট ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তিতে ইতিবাচক দিক যেমন রয়েছে (এ ধরনের সব চুক্তিতে তা থাকে, যেমন ১৯৮৫ সালে জেএসএস বাদী গ্রুপের সাথে সরকারের সম্পাদিত চুক্তিতেও বহু ভালো ভালো কথা লেখা ছিল।), তেমনি অনেক দুর্বল দিকও রয়েছে। সে সব এখানে আলোচনা প্রাসঙ্গিক নয়, তবে এক কথায় বলা যায়, জনগণের সব দাবি এই চুক্তিতে পূরণ হয়নি। কাজেই যদিও এই চুক্তি বাস্তবায়নে কারোর বাধা নেই (দেশবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের দল জামাত ছাড়া), তথাপি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ এবং বিশেষত নতুন প্রজন্ম এই চুক্তির পরিসরে নিজেদের অঙ্গীকারকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে পারে না।
—————–
সিএইচটিনিউজ.কম’র প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ব্যবহারের প্রয়োজন দেখা দিলে যথাযথ সূত্র উল্লেখপূর্বক ব্যবহার করুন।
