ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমাকে কারাফটক থেকে তুলে নেয়ার ঘটনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নিন্দা ও প্রতিবাদ
ঢাকা প্রতিনিধি, সিএইচটি নিউজ
সোমবার, ৭ আগস্ট ২০২৩

বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমা হাইকোর্ট জামিন পেয়ে রাঙামাটি কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় সেনাবাহিনী রাঙামাটি ব্রিগেডের সেনাসদস্যরা তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। তিন দিন ধরে সেনা হেফাজতে রেখে সেনাবাহিনীদের কাছ থেক অস্ত্র গুঁজে দিয়ে তাঁকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট।
আজ সোমবার (৭ আগষ্ট ২০২৩) সংবাদ মাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমা দীর্ঘ চার বছরেরও অধিক সময় কারান্তরীণ রয়েছেন। হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে গত ৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে রাঙামটি জেলা কারাগার থেকে বের হওয়ার সময় তাকে সেনাবাহিনী সদস্যরা কারা ফটক থেকে তুলে নিয় তিন দিন যাবৎ সেনা হেফাজতে রাখার পর সাঁজানো অস্ত্র মামলা দায়ের করে গতকাল ৬ আগস্ট সকালে কাউখালী থানায় পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এর আগেও ২০২১ সালে ২২ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে বের হতে চাইলে সেনাবাহিনী সদস্যরা একই কায়দায় তাঁকে তুলে নিয়ে কুনেন্টু নাম পরিবর্তন করে পুনেন্টু নাম দিয়ে নতুন করে অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সেনাবাহিনী রাঙামাটি ব্রিগেড কর্তৃক এক ছাত্রনেতাকে দুইবার কারা ফটক থেকে তুলে নিয়ে পুনরায় গ্রেফতারের ঘটনা রাষ্ট্রের আইনী শাসন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের শামিল এবং তারা এমনকি দেশের আদালতের (হাইকোর্ট) দেওয়া আদেশকে লঙ্ঘন করেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যুগ যুগ ধরে সেনাশাসন জারি রেখে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এ রাষ্ট্র পাহাড়িদের যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সেখানকার আন্দোলনরত আদিবাসীদের ওপর রাজনৈতিক দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করা রাজনৈতিক কর্মীদেরকে গ্রেফতার, হামলা-মামলা, গুম, খুন, অপহরণ করছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ি জনগণের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী এসব নিপীড়ন নির্যাতন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাসমূহ বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রকে আদিবাসীদের যৌক্তিক দাবিকে মেনে নিতে হবে।
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতৃবৃন্দ রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তারা অবিলম্বে ছাত্রনেতা কুনেন্টু চাকমার ওপর দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত মুক্তি প্রদান, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ ও কারাগারে বন্দী সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির প্রদানের আহ্বান জানান।
উক্ত বিবৃতিতে সাক্ষর করেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সোহেল, বিপ্লবী ছাত্র-যুব আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তাওফিকা প্রিয়া, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মিতু সরকার, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সভাপতি সাইদুল হক নিশান ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা।
উল্লেখ্য, বিগত ২০১৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির কুদুকছড়িতে সাংগঠনিক কাজে থাকা অবস্থায় সেনাবাহিনী পিসিপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি কুনেন্টু চাকমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করে। এ সময় অস্ত্র ও চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে রাঙামাটি কারাাগারে পাঠানো হয়। এরপর ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ও গত ৩ আগস্ট ২০২৩ দু’দফায় আদালতের জামিন আদেশের পর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জেলগেট থেকে তাকে গ্রেফতার করে নতুন মিথ্যা মামলা দিয়ে পুনরায় জেলে প্রেরণ করেছে।
সিএইচটি নিউজে প্রকাশিত প্রচারিত কোন সংবাদ, তথ্য, ছবি ,ভিডিও, কনটেন্ট ব্যবহার করতে হলে কপিরাইট আইন অনুসরণ করে ব্যবহার করুন।
সিএইচটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করুন